স্যামসাং জেড ১: প্রথম টাইজেন ফোন

ঘড়ি আর ঘড়ির অ্যালার্ম এখন নানারকম গ্যাজেটের যুগে অনেকটাই বিলুপ্তপ্রায়। ফলে আরো অনেকের মতোই সকালে ঘুম ভাঙল ঘড়ি নয়, মোবাইল ফোনের অ্যালার্মে, ঠিক ৫টা ৫০ মিনিটে।

হাসান বিপুল প্রযুক্তি সম্পাদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2015, 11:22 AM
Updated : 21 Feb 2015, 11:22 AM

ঘুম ভাঙানোর জন্য পরিচিত কর্কশ আওয়াজ ঠিক আছে (মধুর আওয়াজে কি আর ভোরের আদুরে ঘুম ভাঙে!), কিন্তু নজর গেল ফোনের স্ক্রিনে নতুন ওয়ালপেপারে। ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে সেল ফোনটি নিজে থেকেই বর্ণমালা থিমের ওয়ালপেপার সেট করে রেখেছে।

৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় স্যামসাং বাংলাদেশের মোবাইল বিভাগের প্রধান হাসান মেহেদী যখন বলছিলেন স্যামসাং জেড ১ ফোনে বাংলাদেশী বিভিন্ন দিবসভিত্তিক ওয়ালপেপারের কথা, তেমন গুরুত্ব দেইনি। এটা আসলে কোনো প্র্যাকটিকাল ফিচার নয়। এই রিভিউ লেখার সময়ও মনে হচ্ছে শুধু এই ফিচারটির জন্য হয়তো কেউ এই ফোন কিনবেন না। তবে সকালে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভাল লাগার অনুভূতি তৈরি হয়েছিল অস্বীকার করা যাবে না।

আসুন আমরা মূল আলোচনায় যাই এবং কয়েকটি প্রাথমিক বিষয় ঠিকঠাক জেনে নেই। এই রিভিউটি মূলত ফোনটি কতোটা ব্যবহারবান্ধব, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে। ৮ ফেব্রুয়ারি স্যামসাং বাংলাদেশ এই ফোনটি রিভিউয়ের জন্য সরবরাহ করার পর প্রায় দুই সপ্তাহ ব্যবহার করে আমরা ফোনটি নিয়ে আলোচনায় বসেছি। এর মধ্যে ফোনে বাংলাদেশে প্রচলিত নানা মোবাইল অপারেটরের সিম কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের বাইরেও ফোনটি ব্যবহার করা হয়েছে— শহরে, শহরের বাইরে, বাসে, ট্রেনে এবং পাতাল রেল বা মেট্রোতে। এমন নয় যে, এই ফোনটির কার্যক্ষমতা যাচাই করার জন্যই এত কাণ্ড করা হয়েছে; বরং কাজের সূত্রে ভ্রমণযোগ থাকায় সেই সুযোগটি নেওয়া হয়েছে।

প্রথম পর্ব: হার্ডওয়্যার

জেড ১-এর ৪ জিবি রম আর ৭৬৮ মেগাবাইট র‌্যাম নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করতে পারেন, বিশেষ করে যারা হাই এন্ড ফোনের স্পেসিফিকেশন মুখস্ত করে রাখেন। এখানে হিসেবে রাখার বিষয় দু’টি।
এক.
স্যামসাং দাবি করেছে এটি এন্ট্রি লেভেলের স্মার্ট ফোন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এতে ডজন ডজন হাই গ্রাফিক্স গেইম আর অ্যাপ ইনস্টল করার হিসেবটি সঠিক হবে না। আর
দুই.
প্রায় সবাই রম আর র‌্যামের হিসেবটি করেন সাধারণত অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে তুলনা করে। মনে রাখা দরকার, হার্ডওয়্যার রিসোর্সের ব্যবহার অ্যান্ড্রয়েডে আর টাইজেনে একই হওয়ার কথা নয়। স্যামসাং দাবি করেছে মোটামুটিভাবে দরকারি অ্যাপগুলো এতে অনায়াসেই চালানো যাবে। দুই সপ্তাহের ব্যবহারে এ বিষয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।

জেড ১-এ ব্যবহার করা হয়েছে ডুয়াল কোর ১.২ গিগাহার্টজ কর্টেক্স এ৭ প্রসেসর। এর বিষয়েও ওই একই কথা বলা যায়, দুটি সিম কানেকশনে স্বাভাবিক ব্যবহারে কখনো ঝামেলা হয়নি।

৪ ইঞ্চি স্ক্রিন শুনে অনেকেই কপালে কয়েকটি ভাঁজ ফেলতে পারেন, বিশেষ করে ফ্যাবলেট জেনারেশনের লোকজন। কিন্তু যারা এক হাতে ফোন ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য বলা চলে এর আকার ‘পারফেক্ট। অপেক্ষাকৃত ছোট চেসিসে ৪ ইঞ্চি স্ক্রিন আঁটানো হয়েছে জেড ১-এ। ফলে এক হাতে ব্যবহার অপেক্ষাকৃত সহজ। যারা ফোনের পর্দায় প্রটেক্টর ব্যবহার করেন, তাদের সম্ভবত আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বাজারে এই মডেলের জন্য প্রটেক্টর এই রিভিউ লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

পর্দার স্ক্রিন রেজুলিউশন ২৩৩ পিপিআই। সাধারণভাবে বলা হয় প্রতি ইঞ্চিতে ৩০০ পিক্সেল থাকলে তা খালি চোখে নিখুঁত ইমেজের অনুভূতি দেয়। সেই হিসেবে এর রেজুলিউশন একটু কমই। তবে ব্যবহার করার সময় আপনি যদি পর্দার পিক্সেলগুলোকে আলাদা করে দেখতে চান, আপনাকে যথেষ্টই কসরত করতে হবে। মানে কী-না এর ডিসপ্লে ইমেজ যথেষ্টই স্মুথ।

যারা ফোনে তোলা ছবির রেজুলিউশন নিয়ে একটু আধটু মাথা ঘামান তারা হয়ত ৩.১৫ মেগাপিক্সেল নিয়ে খুব একটা খুশি হবেন না। তবে এটাও ঠিক, এন্ট্রি লেভেলের স্মর্টফোনে তোলা ছবি আপনি যে বিলবোর্ড বানাতে ব্যবহার করবেন না সেটা প্রায় নিশ্চিত বলা চলে। তোলা ছবিতে হাইলাইট ম্যানেজমেন্ট যথেষ্টই ভালো মনে হয়েছে। হরহামেশা টুকটাক ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য এটি যথেষ্টই ভালো ডিভাইস। ব্যবহার করে দেখা গেছে, ছবি তোলার সময় পর্দার ভার্চুয়াল বাটনই কেবল নয়, ভলিউম বাটন ব্যবহারেও শাটার টেপার কাজটি করা চলে।

জেড ১-এর ব্যটারির কথা স্যামসাং যথেষ্টই ‘বড় মুখে’ বলেছে। ফুল চার্জ শেষে দুটি কানেকশন সারাক্ষণ চালু রেখে ফোনটি টানা প্রায় দুই দিন সেবা দিয়েছে। তবে হ্যাঁ, সবার ব্যবহারের ধরন যেহেতু একরকম নয়, তাই একে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগটি কম।

ব্যটারি খরচ কমানোর আরো একটি পথ বাতলে দিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি— আউটডোর মোড। কড়া রোদে ফোনের স্ক্রিন অনেক সময়ই সাধারণ উজ্জ্বলতায় দৃশ্যমান হয় না। হাইএন্ড ফোনগুলোতে এক্ষেত্রে বাড়তি একটি সেন্সর ব্যবহার করা হয় যার সাহায্যে পর্দার উজ্জ্বলতা আপনা আপনি কমে-বাড়ে। জেড ১-এ এর বদলে ব্যবহার করা হয়েছে ম্যানুয়াল পদ্ধতি। পর্দার উপর দিকে থেকে নিচে সোয়াইপ করেলে যে মেনু আসে, সেখানে ডে-লাইট অপশনে টিক দিলেই পর্দার উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়। সমস্যা হল, আগে যদি পর্দার উজ্জ্বলতা যথেষ্টই কমানো থাকে, তবে ওই মেনু থেকে টিক দেওয়ার বক্সটি চেনাই মুশকিল। অনেক সময় দেখা গেছে ভুলে পেছনের টর্চ জ্বলতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে বাটননির্ভর কোনো ব্যবস্থা থাকলে ভাল হত। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, হোম বাটন আর ভলিউম আপ-ডাউন অপশন ব্যবহার করা যেতে পারে।

আল্ট্রা পাওয়ার সেইভ বলে যে অপশনটি আছে, বলা হচ্ছে শতকরা ১০ ভাগ চার্জ থাকা অবস্থায় আল্ট্রা পাওয়ার সেইভ অপশন অন করলে টানা ১৮ ঘন্টা স্ট্যান্ডবাই থাকবে ফোনটি। সেই অপশনটি সম্ভবত ‘অতী জরুরী’ সময়েই অন করতে হতে পারে ব্যবহারকারীকে। সাধারণ ব্যবহারে অপশনটি অন করার প্রয়োজন হয়নি।

ফোনটির সঙ্গে ডেটা স্থানান্তরের জন্য কোনো ইউএসবি কেবল দেওয়া হয়নি। চার্জারের সঙ্গে ইউএসবি পোর্টযুক্ত কেবলটি জুড়ে দেওয়া। ফলে ফোনের মালিককে আলাদা ইউএসবি কেবল কিনে নিতে হবে।

হার্ডওয়্যারের হিসেব মোটামুটি এই পর্যন্তই। পরের পর্বে অপারেটিং সিস্টেম আর অ্যাপস নিয়ে আলোচনা থাকবে।