প্রতি বছর ভারতের মুম্বাইতে আয়োজন করা হয় এই প্রতিযোগিতার। এতে একটি অটোনোমাস রোবট ও একটি ম্যানুয়াল রোবট নিয়ে অংশ নিতে হয় প্রতিযোগীদের। অটোনোমাস রোবটটি আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা থাকে, আর ম্যানুয়াল রোবটটি নির্মাতারা নিয়ন্ত্রণ করেন। লক্ষ্য থাকে প্রতিটি রোবটের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা। সবচেয়ে কম সময়ে কার্যকরভাবে কাজটি সম্পন্ন করার উপর নির্ভর করে প্রতিযোগিতার হার-জিত।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আঞ্চলিক বাছাইপর্ব শেষে এবারের ‘ইন্টারন্যাশনাল রোবোটিকস চ্যালেঞ্জ’ শুরু হয় ২ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাইয়ে। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা আর মিশরের প্রতিযোগীদের নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শ্রীলঙ্কার একটি দল। আর ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্থান দখল করে নিয়েছে যথাক্রমে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বুয়েট)-এর ‘বুয়েট এক্সপোনেনশিয়াল’, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রোবোসাস্ট’ আর ঢাকা ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের দল ‘ডুয়েট টাইম আউট’।
বুয়েট এক্সপোনেন্সিয়াল
ইন্টারন্যাশনাল রোবোটিকস চ্যালেঞ্জে অর্জন করেছে ২য় হয়েছে বুয়েট শিক্ষার্থী খালেদ বিন মইনউদ্দীন আর আল আরাবির দল ‘বুয়েট এক্সপোনেনশিয়াল’। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আড্ডার শুরুতেই জিজ্ঞাসা করা হয়ে তাদের দলের নামকরণ নিয়ে। প্রযুক্তির ভাষাতেই জবাব দিলেন খালেদ বিন মইনউদ্দীন। তিনি বলেন, “সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারফরমেন্সের মান এক্সপোনেনশিয়াল লগারিদম স্কেলে বাড়তে থাকায় দেওয়া হয়েছে এই নাম”।
আইআরসি-তে বুয়েট এক্সপোনেন্সিয়াল অটোনোমাস রোবটের কন্ট্রোল সিস্টেমে ছিল দুটি মাইক্রো-কন্ট্রোলার। ‘এটিমেগা-৩২৮’ আর ‘এটিমেগা ৩২ইউ৪’ নামের মাইক্রো-কন্ট্রোলার দুটি কাজ করে একযোগে। আরও ব্যবহার করা হয়েছে অ্যালুমিনিয়ামের আর্ম আর কিছু সার্ভো মোটর। মোটর চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ডিফারেন্সিয়াল হোয়েন ড্রাইভ পদ্ধতি, ব্যবহার করা হয় রিফ্লেকটিভ ফটো ইন্টারাপ্ট, আইআর প্রক্সিমিটি আর ট্র্যাকার সেন্সর।
ম্যানুয়াল রোবটে ব্যবহার করা হয় ‘আরডুইনো মেগা-এডিকে’ কন্ট্রোলার। এটি ওয়ারলেস গেইমপ্যাডের মাধ্যমে ইউএসবি দিয়ে ২৪ বিট ডেটা প্রসেস করা হয়। যান্ত্রিক বাহু আর একটি ক্লাস্টার বল শুটার ছিল এতে। দুটি রোবটই ছিল অ্যালমিনিয়ামে তৈরি।
চলতি বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে পাওয়ার ইলেকট্রনিক্স বিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিউচার এনার্জি চ্যালেঞ্জ’। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
রোবোসাস্ট
নওশাদ সজীব, নুসরাত মুবিন আরা, মো. রাগিব শাহরিয়ার, ফারহানুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন প্রয়াস; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ৫ শিক্ষার্থীর দল ‘রোবোসাস্ট’। দলনেতা নওশাদ সজীব আর নুসরাত মুবিন আরা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংযে অধ্যয়নরত, আর বাকি সবাই পড়ছেন ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।
এই দলটির বানানো রোবট অন্য প্রতিযোগিদের থেকে খুব একটা আলাদা নয়। তবে ম্যানুয়াল রোবটের রিমোট কন্ট্রোলার বানানো হয় পুরাতন জয়স্টিক খুলে এর সঙ্গে ব্লুটুথ সংযোগ জুড়ে দিয়ে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দলের সদস্য রাগীব শাহরিয়ার শুভ জানান, নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা একটি ওয়েবসাইট বানাতে চান তারা। যে ওয়েবসাইটে রোবোটিকস নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক এমন শিক্ষার্থীদের জন্য টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড করা হবে।
ডুয়েট টাইম আউট
ঢাকা ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রূপায়ন হালদার, পলাশ চন্দ্র মণ্ডল, উত্তম কুমার, মুসলিম উদ্দীন আর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিতোষ কুমার। রূপায়নের নেতৃত্বে এই পাঁচজনে মিলে গঠন করেন ‘ডুয়েট টাইম আউট’। আইআরসিতে চতুর্থ হয়েছে দলটি।
শুরুতে রোবটের যান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানোর পর এর জন্য হার্ডওয়্যার ডিজাইন করা হয়। তারপর ইনস্টল করা হয় আইআরসি'র নিয়ম মেনে তৈরি সফটওয়্যার। নিজেদের রোবটে ‘এটিমেগা-৬৩২ মাইক্রো-কন্ট্রোলার’ ব্যবহার করেন ডুয়েট টাইম আউটের সদস্যরা।
“স্বপ্ন দেখি প্রযুক্তি স্বনির্ভর বাংলাদেশের, যে দেশ নিজের সকল প্রযুক্তির চাহিদা মিটিয়ে, অন্য দেশেও প্রযুক্তিগত পণ্য রপ্তানি করবে”।-- টেককে এমনটাই বললেন দলনেতা রূপায়ন হালদার।