ওয়াই-ফাই শুনতে পান তিনি

বিস্ময়কর হলেও সত্যি, ওয়াই-ফাই সিগন্যাল শুনতে পান ৩২ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক ফ্র্যাঙ্ক সোয়েইন। না, হঠাৎ কোনো অতিপ্রাকৃতিক পরিবর্তন বা দীর্ঘ সাধনার ফল নয়, নিতান্তই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী শক্তির বদৌলতে এই ‘অতিমানবীয়’ ক্ষমতা পেয়েছেন তিনি।

আজমল বশির শিহাববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2014, 11:56 AM
Updated : 15 Nov 2014, 11:56 AM

এই ক্ষমতার রহস্য কী? উত্তর কঠিন কিছু নয়, একটা হ্যাক করা ‘হিয়ারিং এইড’ বা শ্রবণসহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করছেন সোয়েইন। ওই ডিভাইসই আশপাশের ওয়ারলেস ফ্রিকোয়েন্সিকে অডিও স্ট্রিমে রূপান্তর করে। ব্যাস এভাবেই ওয়্যারলেস সিগনাল শোনেন তিনি।

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ম্যাশএবল এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ফ্র্যাঙ্ক সোয়েইনের গল্প। ২০ বছর বয়স থেকে একটু একটু করে শ্রবণ শক্তি হারাচ্ছেন তিনি। শ্রবণসহায়ক যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে সোয়েইন আবিষ্কার করলেন, যেন পুরো পৃথিবীটাই পাল্টে গেছে। কম্পিউটারে তৈরি শব্দ শুনছেন তিনি, নিজের শ্রবণশক্তি বহাল থাকা অবস্থায় যা শুনেছেন তার সঙ্গে কোনো মিলই নেই হিয়ারিং এইডের মাধ্যমে পাওয়া শব্দের।

বললেই হল নাকি যে ল্যাবরেটরিতে ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি শব্দ শুনতে হবে! নিজের যা ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা তেমন শুনবেন! ব্যাস, এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেন সোয়েইন।

সাহায্যের জন্য প্রথমেই গিয়েছিলেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নেসটার(Nesta) কাছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী খাতে সহযোগিতা করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর জোট বাঁধেন শব্দ শিল্পী  ড্যানিয়েল জোনসের সঙ্গে। নেসটার আর্থিক সাহায্যে সোয়েইন-জোনস দাঁড় করিয়েছে ‘ফ্যান্টম টেরেইন’ প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের অগ্রগতিতেই এখন ওয়াই-ফাই সিগনাল শুনছেন তিনি। 

হিয়ারিং এইড নিয়ে সোয়েইনের ‘অতৃপ্তি’ মেটানোই যে ফ্যান্টম টেরেইনের লক্ষ্য, এমন নয়। শ্রবণসহায়ক প্রযুক্তি কেবল কৃত্রিম অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা না করে, এই প্রযুক্তির পুনঃউদ্ভাবনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের শ্রবণ ক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ায় পরিকল্পনা রয়েছে সোয়েইন-জোনস জোটের।

আইফোনের হ্যাক করা ওয়াই-ফাই সেন্সরের সাহায্যে কাজ করে ফ্যান্টম টেরেইনের তৈরি প্লাটফর্ম। “ওয়াই-ফাই সিগনাল কতটা শক্তিশালী, রাউটারের নাম, দুরত্ব, এনক্রিপশন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এ সবই দুই স্তরের অডিও স্ট্রিমে রূপান্তরিত করে ডিভাইসটি।”-- ব্যাখ্যা করেন ড্যানিয়েল জোনস।

এই বাড়তি শব্দগুলোর মিশে যায় সোয়েইনের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের আউটপুটের সঙ্গে।  আর শব্দের এই মিশ্রনই শোনেন তিনি।

নতুন এই প্রযুক্তি গুগল গ্লাসের চেয়েও দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে বলে মনে করেন সোয়েইন। “গুগল গ্লাসের মাধ্যমে কেবল একটি দিকে মনোনিবেশ করা যায়। কিন্তু এই প্রযুক্তিতে শোনার ব্যাপারটা অনেকটা ব্রডব্যান্ডের মতো। এক সঙ্গে ঘরের ৫০ রকমের আলাপচারিতা শুনতে পারবেন আপনি, কেবল একটার উপর মনোযোগ দিলেও বাকি সবকিছুই থাকবে আপনার ‘কর্ণগোচরে’।”-- প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ম্যাশএবলকে বলেছেন তিনি।