নতুন আইপ্যাডে ‘সফট সিম’

অ্যাপলের সদ্য উন্মোচিত অ্যাইপ্যাড এয়ার ২ ট্যাবলেটের সবচেয়ে চমকপ্রদ ফিচার সম্ভবত এর সফটওয়্যারভিত্তিক সিম কার্ড। অ্যাপলের এই ‘সফট সিম’-এর কারণে ব্যবহারকারীরা সফটওয়্যারের সেটিংসে পরিবর্তন এনে ব্যবহারকারী নিজেই নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করতে পারবেন।

>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2014, 12:52 PM
Updated : 18 Oct 2014, 12:52 PM

নতুন আইপ্যাডে প্লাস্টিকের সিম কার্ড নির্ভরতা না থাকায় মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘দাদাগিড়ি’ কিছুটা হলেও কমবে বলে মন্তব্য করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।

নিজেদের সাইটে এই প্রযুক্তি নিয়ে অ্যাপল জানিয়েছে, “অ্যাপল সিমের মাধ্যমে আইপ্যাড থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের একাধিক মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতে পারবেন আপনি।”

প্রাথমিক অবস্থায় আইপ্যাড এয়ার ২-এর এই ‘সফট সিম’ প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের সুযোগ পাবেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা। আলাদা সিম কার্ড কেনার প্রয়োজন পরবে না তাদের। নিজের আইপ্যাড থেকে সরাসরি মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবায় সাইন আপ করতে পারবেন নতুন আইপ্যাডের ক্রেতারা। একই ‘সিম’ ব্যবহার করতে পারবেন একাধিক দেশে, একাধিক মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে।

অ্যাপলের এই নতুন প্রযুক্তি মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানের সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের স্বাধীনতা বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছে দ্য গার্ডিয়ান।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বেশিরভাগ মোবাইল ফোনই ‘লক’ করা থাকে। অর্থাৎ, কেবল একটি মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা যায় ওই ফোন। না চাইলেও অনেক সময় বাধ্য হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই থাকতে হয় ব্যবহারকারীকে। কিন্তু সিম সফটওয়্যারভিত্তিক হলে ‘ফোন লকিং’ বন্ধ করা সহজ হবে জানিয়েছে পত্রিকাটি।

সফটওয়্যার সিম কার্ডের বদৌলতে লম্বা সময়ের জন্য একই ডেটা প্ল্যান এবং মোবাইল ফোন অপারেটরের সেবায় আটকে থাকতে হবে না একজন ব্যবহারকারীকে। নিজের প্রয়োজন মতো স্বল্প সময়ের ডেটা প্ল্যান এবং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ঠিক করতে পারবেন একজন গ্রাহক।

আপাতত হাতে গোনা কয়েকটি মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে অ্যাপলের সফটওয়্যার সিমকেন্দ্রিক সেবায়। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ইই(EE) এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্প্রিন্ট, টি-মোবাইল এবং এটিঅ্যান্ডটি’র বিভিন্ন প্যাকেজ ব্যবহার করা যাবে নতুন অ্যাপল সিমের মাধ্যমে।

“অ্যাপল সিম আসলেই একটা বড় খবর। মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অ্যাপলের সম্পর্ক যে কতোটা জোরালো সেটাই প্রমাণ করে এটা। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এটা করা সম্ভব ছিল না।”-- মন্তব্য করেছেন বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইটের চিফ অফ রিসার্চ বেন উড।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোড ডিভিসন মাল্টিপল অ্যাকসেস (সিডিএমএ)-ভিত্তিক নেটওয়ার্কে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ ছিল আগে থেকেই। কিন্তু মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইসু না করায় সেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না গ্রাহকরা। আর যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত হয় সিডিএমএর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে পরিচিত গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন (জিএসএম) নেটওয়ার্ক।

আইপ্যাড এয়ার ২ দিয়ে প্রযুক্তি জগতে অভিষেক হল অ্যাপল সিমের। ২০১৫ সাল নাগাদ আইফোনেও এই প্রযুক্তি যোগ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে গার্ডিয়ান। আর যেহেতু প্লাস্টিকের সিমের মতো আলাদা স্লট প্রয়োজন হচ্ছে না, তাই অ্যাপল ওয়াচেও যোগ হতে পারে এই প্রযুক্তি।

এ ব্যাপারে বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের কর্মী নিল শাহ’র মন্তব্য, “মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর অ্যাপলের প্রভাব যে কত শক্তিশালী সেটাই প্রমান করে ‘সফট সিম’ প্রকল্প। আইফোনের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে এই প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগ সহজ হবে না। তবে আইপ্যাডের ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।