মুক্তির অপেক্ষায় তার নতুন গেইম ‘ইভিল উইদিন’। এলিমেন্টারি স্কুলে থাকতেই শিক্ষকের কাছে শুনেছিলেন জাপানিজ ক্লাসিক ভূতের গল্প ‘ইয়োৎসুয়া কাইদান’। হররের সঙ্গে সেটাই ছিল মিকামির প্রথম পরিচয়। আর সেই অনুভূতি কখনোই ভোলেননি তিনি।
হরর ভিডিও গেইমস জগতের এই ‘গডফাদার’-এর অতীত, অনুপ্রেরণা, চিন্তাধারা এমন অনেক কিছুই উঠে এসেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে।
সেই ছোটবেলায় ক্লাসের শিক্ষকের কাছে শোনা ‘ইয়োৎসুয়্যা কাইদান’ শুনে যে অনুপ্ররণা তিনি পেয়েছিলেন, গল্পের বিশ্বাসঘাতকতা আর অতিপ্রাকৃতিক প্রতিশোধের হিমশীতল ঘটনাগুলোর ছাপ এখনও পাওয়া যায় তার সৃষ্টিতে।
সেই গল্প শোনার ২০ বছর পরের ঘটনা, ওসাকাভিত্তিক গেইম ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান স্টুডিও ক্যাপকম এর উদীয়মান ডিজাইনার শিনজি মিকামির ঘাড়ে গুরুভার পরলো সনির প্লেস্টশন আর সেগা স্যাটার্ন কনসোলের জন্য একটা ভয়ের অ্যাডভেঞ্চার গেইম বানানোর।
গত কয়েক বছর ধরে গেইমিং জগত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অ্যাসাসিনস ক্রিড, গ্র্যান্ড থেফট অটো, আনচার্টেড-এর মত গেইমগুলো। সারভাইভাল হরর গেইমগুলো গত কয়েক বছরে তেমন সাড়া পায়নি বললেই চলে। তবে পরিবর্তন আসছে সেই দৃশ্যপটে। ডিমন’স সোল আর ডার্ক সোল শিরোনামের গেইমগুলোর বদৌলতে গেইমাররা আবারও ঝুঁকছেন হরর সারভাইভালের দিকে।
এর মধ্যে ক্যাপকম ছেড়েছেন মিকামি। নিজের পছন্দের আলাদা টিম ‘ট্যাংগো গেইমওয়র্কস’ বানিয়েছেন। কাজ করছেন ‘ইভিল উইদিন’ নিয়ে।
গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে ‘ইভিল উইদিন’ নিয়ে মিকামি বলেন, “রেসিডেন্ট ইভিলের পরের সময়টায় অনেক পরিবর্তন এসেছে ভিডিও গেইম ডিজাইনিংয়ে। ৯০ এর দশকের গেইমগুলোতে ইচ্ছে মতো নড়াচড়ার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এখন একই সঙ্গে গেইমের চরিত্র আর ক্যামেরা নাড়ানোর সুযোগ পায় গেইমার। খেলার গতিও বেড়েছে, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রতিটি সিনেও মিল থাকতে হয় এখন। ‘ইভিল উইদিন’ বানানোর সময় এর সবকিছুই মাথায় রাখতে হয়েছে আমার।”
মিকামির এই গেইমটাও সারভাইভাল হরর ধাঁচের। গেইমার এটি খেলবেন সেবাস্তিয়ান কাস্টেলানোস চরিত্রটি নিয়ে। খেলতে খেলতে উন্মোচিত হবে মানব শরীরের উপর ভয়াবহ পরীক্ষা-নিরিক্ষার কথা।
বাজারের আর দশটা শুটিং গেইমের আদলে গেইম বানানোর কোন ইচ্ছে নেই বলেই জানান মিকামি। বরং হরর গেইমে কল্পনাশক্তির ব্যবহারই পছন্দ তার। মনের উপর এই গেইমগুলো যে প্রভাব ফেলে সেদিকটাতেই মিকামির কৌতুহল বেশি।
রেসিডেন্ট ইভিল তৈরির সময় টানা তিন মাস মনোবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণাও করেছেন মিকামি। আর মানুষ নিজের স্বজাতিকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পায় এই উপলব্ধি থেকে রেসিডেন্ট ইভিলের মূল চরিত্রতো বটেই, জোম্বি চরিত্রগুলো ডিজাইনেও মিল রাখা হয়েছে সাধারণ মানুষের শারীরিক গঠন আর পারিপার্শিকতার সঙ্গে। ইভিল উইদিনেও একই পথে হেঁটেছেন মিকামি।
গথিক উস্থাপনা, ভয়ংকর দানব, জাম্প শক ছাড়াও মিকামির গেইমগুলো বরাবরই শক্তিশালী নারী চরিত্রের জন্য খ্যাত। রেসিডেন্ট ইভিল গেইমগুলোতে জিল ভ্যালেন্টাইন আর ক্লেয়ারে রেডফিল্ড নারী চরিত্রগুলো পুরুষ চরিত্রগুলোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে জোম্বিদের সঙ্গে।
বিশ্ব বাজারে ইভিল উইদিনের অভিষেক হবে খুব শিগগিরই। এরপর কী করবেন মিকামি? শুধু হরর গেইমে নন, ডেভিল মে ক্রাই, ব্যাঙ্কুইশ, কিলার ৭ এর মতো গেইমগুলোতে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। তবে অন্যান্য সফল গেইম ডিরেক্টরদের তুলনায় মিকামি অনেকটাই সাদামাটা মানুষ বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
একনায়ক নয় বরং সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন তিনি। “আমার কর্মীদের নতুন আইডিয়া আমি সবসময় ভালোভাবেই নেই। দলের জুনিয়র সদস্যদের সঙ্গে জোট বেঁধে গেইমের পারফর্মেন্স পরীক্ষা করতেও আপত্তি নেই তার।