নিরাপদে রাখুন আইক্লাউডের ছবি

অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স, জনপ্রিয় মডেল কেইট আপটন আর আরিয়ানা গ্রান্ডের মতো হলিউডি সেলিব্রেটিদের নগ্ন ছবি ফাঁস হওয়ার পর অ্যাপলের ক্লাউড সেবা ‘আইক্লাউড’-এর নিরাপত্তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। সেলিব্রেটিদের খোলামেলা ছবিগুলো নিয়ে ‘গসিপ’ করতে গিয়ে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অনেকে হয়তো ভুলেই গেছেন, আইক্লাউডের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁটল থাকলে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে আছেন তারাও।

আজমল বশির শিহাববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2014, 12:22 PM
Updated : 8 Sept 2014, 12:22 PM

মার্কিন সংবাদ সাময়িকী টাইম এক প্রবন্ধে জানাচ্ছে কীভাবে নিরাপদ রাখতে পারবেন আইক্লাউডে রাখা আপনার ছবিগুলো।

অ্যাপল ডিভাইস মালিকদের অনেকেই হয়তো খেয়াল করেননি; প্রয়োজনীয় ডেটা আইক্লাউডে ব্যাকআপ রাখার সময় চালু করা ‘মাই ফটো স্ট্রিম’ ফিচারটি কিন্তু ঠিকই চলছে ব্যাকগ্রাউন্ডে। ফলে আইফোন ব্যবহার করে তোলা সবগুলো ছবি একে একে আপলোড হয়ে যাচ্ছে আইক্লাউডে।

যে কোনোভাবেই হোক, আইক্লাউড অ্যাকাউন্টে একবার অনুপ্র্রবেশ করতে পারলে মালিকের আইপ্যাড বা আইফোন ছাড়াই ছবিসহ সব কন্টেন্ট ডাউনলোড করে নিতে পারবে একজন হ্যাকার। আর শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাঘা বাঘা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চেষ্টা সত্বেও পাসওয়ার্ড চুরির ঘটনা বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে বারবার। 

সেলিব্রেটিদের ছবি ফাঁস হওয়ার ঘটনায় আইক্লাউডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দায়ী তা এখনও পরিষ্কার নয়। আলোচনা সমালোচনার মধ্যেই আইক্লাউডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে অ্যাপল। তবে আইক্লাউড অ্যাকাউন্টে থাকা ছবিগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে পারেন ব্যবহারকারীরা নিজেই।

ফটো স্ট্রিমের সব ছবিই কি ক্লাউডে জমা হয়?: আইফোনে ক্যামেরা রোলের ছবিগুলো জমা থাকে আইফোনের নিজস্ব মেমোরিতেই। কিন্তু হিসেব পাল্টে যায় ‘ফটো স্ট্রিম’ চালু করা থাকলে। আইফোনের ফটো অ্যাপ থেকেই দেখা যায় ‘মাই ফটো স্ট্রিম অ্যালবাম’। এই অ্যালবামের ছবিগুলো জমা হয়ে থাকে আইক্লাউড সার্ভারে। শেষ ৩০ দিনে তোলা ছবিগুলোই জমা থাকে। একাধিক অ্যাপল ডিভাইস একই আইক্লাউড অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সিঙ্ক করে ছবিগুলো দেখা যায় সহজেই। অটোমেটিক ব্যাকআপ হিসেবে এই সেবা বেশ কার্যকর।

কিন্তু এতে ছবিগুলো জমা থাকে ক্লাউড স্টোরেজেই। ফলে ক্লাউড হ্যাকিংয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকবে ওই ছবিগুলোও।

ফটো স্ট্রিম ডিসএবল করবেন যেভাবে: ফটো স্ট্রিম বন্ধ করা জন্য যেতে হবে আইফোনের সেটিংসে। সেটিংস থেকে আইক্লাউডে, আর সেখান থেকে ফটোসে (আইওএস ৬-এর ক্ষেত্রে ফটো স্ট্রিম)। ম্যানুয়ালি বন্ধ করতে হবে ‘ফটো স্ট্রিম’ ফিচারটি।

নির্বাচিত দু-একটি ফটো ডিলিট করতে চাইলে করনীয়: হয়তো পুরো ফটো স্ট্রিম বন্ধ করতে চাইছেন না ব্যবহারকারী, তবে ডিলিট করা দরকার দুএকটি স্পর্শকাতর ফটো। এক্ষেত্রে ফটো স্ট্রিমের এডিট অপশন থেকে ডিলিট করা সম্ভব সেগুলো।

এতে ফটো স্ট্রিম আর ক্লাউড থেকে ডিলট হবে ওই ছবিগুলো। যে ডিভাইস থেকে ছবি তোলা হয়েছে সেখানে কিন্তু ঠিকই থেকে যাবে ছবিগুলো। নিজের ডিভাইসেও ছবিগুলো না রাখতে চাইলে ‘ক্যামেরা রোল’ থেকে ডিলিট করতে হবে ছবিগুলো।

আইক্লাউডের পাসওয়ার্ড নিরাপত্তা?: সেলিব্রেটিদের ছবি ফাঁস হওয়ার ঘটনায় হ্যাকাররা ভুক্তভোগী সেলিব্রেটিদের দুর্বল পাসওয়ার্ডের সুযোগ নিয়েছে বলে বক্তব্য অ্যাপলের। ‘মাই অ্যাপলআইডি’ থেকে পাল্টে নেওয়া যায় পাসওয়ার্ডগুলো।

পাসওয়ার্ড নির্ধারণের ক্ষেত্রে একাধিক অ্যাকাউন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহারই শ্রেয়। আর পাসওয়ার্ডে ব্যক্তিগত তথ্য না রাখার পরামর্শ দিয়েছে সিকিউরিটি ফার্ম ম্যাকাফি। পাশাপাশি কমপক্ষে ১৪ অক্ষরের পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ছোট-বড় অক্ষর, সংখ্যা আর সিম্বল এলোমেলো করে সাজিয়ে তৈরি কিন্তু মনে রাখতে সহজ এমন পাসওয়ার্ডগুলোই শ্রেয়।

‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’: সাইবার জগতে নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যবহার বাড়ছে ‘টু-স্টেপ অথেনটিকেশন’ ফিচারের। আইক্লাউডের জন্যেও আছে এই দুই স্তরের এই নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থা।

‘টু-স্টেপ অথেনটিকেশান’-এর অংশ হিসেবে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে একটি ট্রাস্টেড ডিভাইস, প্রয়োজন হতে পারে আপনার ফোন নম্বর। অ্যাপল ডিভাইসে এই ফিচারটি চালু করার জন্য যেতে হবে ‘মাই অ্যাপলআইডি’ অপশনে। সেখান থেকে ‘পাসওয়ার্ড অ্যান্ড ভেরিফিকেশন’, অতঃপর ‘টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন’।

এরপর যখনই ব্যবহারকারী আইক্লাউড অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করতে চাইবেন, ব্যবহারকারীর ফোন বা অন্য অ্যাপল ডিভাইসে বিশেষ কোড পাঠাবে অ্যাপল। প্রতিবার লগইন করার জন্য দিতে হবে ভিন্ন ভিন্ন কোড। ওই কোডগুলো জানতে হলে হ্যাকারকে সরাসরি উপস্থিত থাকতে হবে আইফোন বা অন্য অ্যাপল ডিভাইসের সামনে।