গাজায় বাংলাদেশীদের ঈদ শুভেচ্ছা

মুহুর্মুহ ইসরায়েলি হামলা, প্রাণহানী আর মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে অভাবিত এক ঈদ শুভেচ্ছা পেলেন গাজাবাসী। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ লোকজন সরাসরি ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন গাজায় আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের।

আব্দুল্লাহ জায়েদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2014, 11:35 AM
Updated : 31 July 2014, 11:35 AM

উপায়টি বাতলে দিয়েছিলেন জনৈক ‘ইহুদি’ ড. নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন, একজন পলিটিকাল সায়েন্টিস্ট, শিক্ষক এবং ইসরায়েল-গাজা সঙ্ঘাত বিশেষজ্ঞ। শিক্ষকতা করেছেন ব্রুকলিন কলেজ, রাটগার্স কলেজ, হান্টার কলেজ, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, এবং ডিপল ইউনিভার্সিটিতে। তার বাবা-মা দুজনই ছিলেন মানবিক বিপর্যয় থেকে বেঁচে আসা মানুষ ‘হলোকাস্ট সার্ভাইভার’।

নিজের ফেইসবুক ফ্যান পেইজে নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন লেখেন, “এই ঈদে গাজার কোনো একটি পরিবারকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তাদের জানিয়ে দিন সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছায় এসবের অবসান হবে এবং ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে। তাদের মনে করিয়ে দিন তারা একা নন।

(আপনার ফোনটি হাতে নিয়ে) শুরু করুন +৯৭২ দিয়ে। এরপর নিচের যেকোনো লোকাল এরিয়া কোড জুড়ে দিন- গাজা সিটি: ৮২৮, খান ইউনিস: ৮২০, সেন্ট্রাল গাজা: ৮২৫ এবং রাফা: ৮২১।

এরপর যেকোনো পাঁচটি ডিজিট জুড়ে দিন। উদাহারণ: +৯৭২(৮২৮)১২৩৪৫।”

ড. ফিঙ্কেলস্টাইনের ওই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন বিশ্ববাসী, ফোন করেছেন গাজায়। যারা শুভেজ্ছা জানিয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই সে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে।

গাজায় ফোন করেছিলেন বাংলাদেশী নীলা নাহার। তিনি বলেছেন, “গাজার একটি নম্বরে ফোন করেছিলাম ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে। আমি বাংলাদেশ থেকে ফোন করেছি শুনে কেঁদে ফেলেন একজন বৃদ্ধ। উনি বারবার বলছিলেন ‘শুকরান’।”

শাহরিয়ার সাদাত লিখেছেন, “৯/১০ বার ফোন করার পর এক নারী আমার ফোনটি ধরেন। আমি বাংলাদেশে থেকে ফোন করেছি শুনে খুবই খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু উনি বললেন ‘এখানে আমরা ঈদ অনুভব করছি না। গাজায় এসে সাহায্য কর আমাদের।”

মোরসালিন খান দীপ্ত নিজে ফোন করেছেন এবং অন্যদেরও আহ্বান জানিয়েছেন, “তারা হয়ত আমাদের ভাষা বুঝবেন না, সেক্ষেত্রে এইটুকু বলুন ঈদ মুবারক। এটা তারা বুঝবেন এবং তারা হয়তো খানিকটা আশা পাবেন”।

বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকেও নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইনের পদ্ধতিতে ফোন করা হয়। একজন মহিলা ফোন পেয়ে বলেন, “আল্লাহ মালিক”।

ফিঙ্কেলস্টাইনের ওই পোস্টটির নিচেই কমেন্ট আকারে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন অনেকেই। যুক্তরাজ্যের নাগরিক রেজ মাটিন লিখেছেন: “গাজার সিটির একটা নম্বরে ফোন করেছিলাম। এক বোন ফোন ধরেছিলেন। ঈদ মোবারক বললাম। তিনি উত্তরে বললেন, “ঈদ মোবারক, আমরা মারা যাচ্ছি।”

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হেনাদ এল-দাদুন লিখেছেন, “আমি মাত্র ফোন করেছিলাম। এক বোন ফোন ধরেছিলেন। যখন আমি তাকে বললাম পৃথিবী তাদের ভুলে যায়নি, তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম।”

কানাডার শিক্ষার্থী রাওয়ান ঘুনেইম লিখেছেন, “একজন মহিলার সঙ্গে কথা বললাম। তিনি বললেন তাদের জন্য ঈদ আর ঈদ নেই, শ্বাস নিচ্ছেন গ্যাসের মধ্যে। দোয়া করতে বললেন তিনি।”

ড. ফিঙ্কেলস্টাইনের পোস্ট থেকে উৎসাহিত হয়ে ফোন করার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ আটকে গেছেন নেটওয়ার্ক জটিলতায়। আবার কেউ বারবার ফোন করার পরও ফোনটি ধরেননি কেউ। এর ব্যখ্যা দিয়েছেন গাজার এক নারী।

পোস্টটির নিচের কমেন্টে বালসাম এল লিখেছেন, “আপনাদের উদ্দেশ্যটা খুবই ভালো তবে এটা না করলেই হয়তো ভালো হবে। গাজায় আমার পরিবারের সদস্যরা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলেই ভয় পাচ্ছেন। তারা ধরে নেন ফোনটা ইসরায়েলিরা করেছে। হয়তো ইসরায়েলিরা বম্বিং শুরু করার আগে ঘর ছাড়তে বলছে তাদের। একারণেই কিছু কিছু পরিবার ফোন ধরছে না।”