২০৪০-এর আগেই মঙ্গল জয়!

মানব সভ্যতার ইতিহাসে যে দিনগুলো কখনোই ভোলার মতো নয় তার একটি ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। পৃথিবী ছেড়ে চাঁদের বুকে প্রথমবারের মতো পরেছিল কোনো মানুষের পদচিহ্ন। প্রথমে নিল আর্মস্ট্রং তারপর বাজ অলড্রিন, মানব সভ্যতার চিহ্ন পৌঁছে দিলেন মহাশূণ্যে।

আব্দুল্লাহ জায়েদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2014, 01:37 PM
Updated : 27 July 2014, 02:16 PM

মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে নতুন এক জয়ের আশার কথা জানিয়েছেন কিংবদন্তী নভোচারী বাজ অলড্রিন। ২০৪০ সালের মধ্যেই মঙ্গলে মানব সভ্যতার পদচিহ্ন পরবে বলে আশা তার।

শুক্রবার ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কের ফেইসবুক হেডকোয়ার্টারে বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিল অলড্রিন। উত্তর দিয়েছেন নাসার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত মিশন নিয়ে ভক্তদের বিভিন্ন প্রশ্নের। তাতে উঠে এসেছে মঙ্গল অভিযানের প্রসঙ্গটিও। আর সেখানেই বললেন ‘২০৪০ সাল পর্যন্ত’ সময় লাগতে পারে।

বাজ অলড্রিনের সঙ্গে ভক্তদের সেই প্রশ্ন-উত্তর পর্বের বিশেষ কিছু অংশ তুলে ধরা হল নিচে:

প্রশ্ন: মি. অলড্রিন, আপনি কি মনে করেন যে এর মধ্যেই মঙ্গলে পৌঁছানো উচিত ছিল আমাদের?

বাজ অলড্রিন: ২০০৯ সালে অগাস্টিন কমিশন অফ ইউনাইটেড স্পেস ভিশনে যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জমা দিয়েছিলাম তাতে ২০৩১ সালের মঙ্গলে পা রাখার কথা বলেছিলাম আমি। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে যার নেতৃত্ব দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমি বিশ্বাস করি ২০৪০ সালের মধ্যেই মঙ্গলে পৌঁছাবো আমরা।

প্রশ্ন: মঙ্গলে বসতী স্থাপনের জন্য বয়স্ক নাকি তরুণদের পাঠানো ভালো হবে?

বাজ অলড্রিন: বিভিন্ন বয়সের নভোচারী পাঠানোই শ্রেয় হবে।

প্রশ্ন: ষাটের দশকে মহাকাশ অভিযানগুলো মূলত অনুসন্ধানী অভিযান ছিল। মহাকাশ প্রোগ্রামগুলোকে সেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আমরা কী করতে পারি?

বাজ অলড্রিন: আমি মনে করি ষাটের দশকের তুলনায় অনেক বেশি পরিপক্ক আমরা। ১৯৮৫ সালেই আমি শুধু পৃথিবী আর চাঁদ নয়, পৃথিবী আর মঙ্গলের মধ্যেকার ‘Continuous cycling orbit’ তত্ত্ব দিয়েছি। (‘Continuous cycling orbit’ হচ্ছে তাত্বিক যাত্রাপথ, যাতে একটি মহাকাশযানের কক্ষপথে একই সঙ্গে পরবে পৃথিবী আর মঙ্গল, দুটি গ্রহ একবারের উড্ডয়নেই ঘুরে আসতে পারবে মহাকাশ যানটি।)

প্রশ্ন: স্পেস এক্স প্রোগ্রাম নিয়ে আপনার মত কী?

বাজ অলড্রিন: তরুণ ও উদ্ভাবনী একটি প্রকল্প। নতুন চিন্তাধারা যা পুরানো চিন্তাধারার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এক চ্যালেঞ্জের রূপ নিয়েছে।

প্রশ্ন: নাসা কী ভাবে আরো বেশি তহবিল সংগ্রহ করতে পারে?

বাজ অলড্রিন: অফিস ব্যবস্থাপক আর বাজেট আত্মসাতকারীদের বলুন জন গ্লেন (মহাকাশে পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী প্রথম মার্কিনী) আর আমার মতো যারা প্রথম দিককার মহাকাশ জয়ী আছেন তাদের কথা শুনতে। মঙ্গল জয়ের জন্য বিবেচনামূলক তহবিলের ১ শতাংশ আর আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তৎপরতাই বা কেন নয়?

প্রশ্ন: মি. অলড্রিন, আপনি কি এয়ার ফোর্সে আপনার প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু বলতে পারেন?

বাজ অলড্রিন: ‘মায়টাং’ মাসট্যাং টি-২৮ প্রশিক্ষণের জন্য সেরা ছিল। তবে একবার আমি জি-স্যুট ছাড়াই ‘double Immelmann’ করার চেষ্টা করেছিলাম। পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম আমি। যখন জ্ঞান ফিরলো আমি তখন টেক্সাসের হাতে, কন্ট্রোল স্টিক তখনও আমার দুই হাতেই ছিল। সৌভাগ্য যে কন্ট্রোল স্টিক টেনে ধরার জ্ঞান ফিরে এসেছিল আমার। (৫০-এর দশকে মার্কিন বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন অলড্রিন। ‘double Immelmann’ হল যুদ্ধবিমান চালনায় জটিল একটি রণকৌশল)।

দীর্ঘ দিন ধরেই মঙ্গল অভিযান নিয়ে সক্রিয় বাজ অলড্রিন। গনমাধ্যমগুলোতে এই বিষয়ে নিয়ে নিয়মিত আলোচনাও করেন তিনি। সোচ্চার নাসার মহাকাশ অভিযানে মার্কিন সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাব নিয়েও। কিংবদন্তী এই মহাকাশ জয়ী ভব্যিষ্যদ্বাণী সত্যি হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। সত্যি হলে মানব সভ্যতার ইতিহাসে যোগ হবে আরেকটি দিন যা হয়েতো ভোলা যাবে না কখনোই।