থ্রিডি প্রিন্টারে চিকিৎসা বিপ্লব

শুধু চকলেট কিংবা খেলনা বানানোর কাজে সীমাবদ্ধ নয় থ্রিডি প্রিন্টারের ব্যবহার। থ্রিডি প্রিন্টার এখন মানুষের জীবন বাঁচানোর এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গও বটে।

ফজলে আজিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2014, 08:21 AM
Updated : 18 April 2014, 08:21 AM

নেদারল্যান্ডসের অধিবাসী ২২ বছর বয়সী এক নারীর মাথায় খুলি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নবদিগন্তের সূচনা করল থ্রিডি প্রিন্টার।

ওয়্যারড ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নেদারল্যান্ডসে এক নারীর মাথার খুলির পুরুত্ব ১.৫ মিলিমিটার থেকে ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। এতে মাথাব্যথা ও চোখের বিভিন্ন অসুবিধা শুরু হয়। চিকিৎসার জন্য নিউরোসার্জনের কাছে গেলে অপারেশন করে মাথার খুলি প্রতিস্থাপন করা হয়। সেখানে ইমপ্ল্যান্ট করা হয় থ্রিডি প্রিন্টারে প্রিন্ট করা প্লাস্টিকের খুলি।

বলা হয়েছে, এটাই বিশ্বে প্রথম থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি মাথার খুলি প্রতিস্থাপনের ঘটনা। তবে, যার মাথায় খুলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

থেমে নেই পথচলা। মাথার খুলি থেকে শুরু করে শরীরের হাঁড়ও প্রতিস্থাপন করতে ব্যবহার করা যাবে থ্রিডি প্রিন্টারে প্রিন্ট করা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক থ্রিডি প্রিন্টারের আরও কিছু সফলতার কাহিনি।

মাথার খুলি

হল্যান্ডের ইউট্রেখট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের একজন চিকিৎসক সিএনএনকে জানান, তাদের কাছে একজন রোগী আসেন যার মাথার খুলির পুরুত্ব বেড়েই যাচ্ছিল। এতে তার মাথাব্যথা ও চোখের সমস্যা দেখা যায়। হাসপাতাল থেকে বলা হল চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন তিনি। এমনকি পরবর্তীতে একই কারণে জীবনবিপন্নের ঝুঁকিও রয়েছে। এ সময় তার মাথায় অপারেশন করে প্রতিস্থাপন করা হয় থ্রিডি প্রিন্টারে প্রিন্ট করা একটি খুলি। অপারেশনের পরবর্তী তিনমাস পর দেখা গেছে রোগী স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন, নতুন উদ্যমে ফিরেছেন কর্মজীবনে।

চোখ

থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে মানুষের চোখ। কৃত্রিম চোখগুলো দেখতে অবিকল মানুষের চোখের মতোই। যুক্তরাজ্যের ফ্রিপ ডিজাইন অ্যান্ড রিসার্চ কোম্পানি জানিয়েছে, থ্রিডি প্রিন্টারে এক ঘণ্টায় তারা ১৫০টি চোখ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সঙ্গে থ্রিডি প্রিন্টারে কৃত্রিম চোখ তৈরির কাজ করবে ভারত। আগামী এক বছরের মধ্যে ওই চোখ মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

নাক ও কান

বিভিন্ন কারণে নাক ও কান প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে। এতে ভবিষ্যতে সে জায়গাতেও দেখা যাবে কৃত্রিম নাক কিংবা কান। চেহারার সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা যাবে নাক কিংবা কান। আগামী তিন বছর নাগাদ নাক ও কান প্রতিস্থাপন করা যাবে।

কৃত্রিম চামড়া

আগুনে পোড়া রোগীদের শরীরে চামড়া প্রতিস্থাপন বিষয়ে চলছে গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েক ফরেস্ট স্কুল অফ মেডিসিনের জেমন ইউ গবেষণা করছেন কীভাবে আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের শরীরে ঝলসে যাওয়া চামড়া প্রতিস্থাপন করা যায়। এতে ভবিষ্যতে শরীরের এনজাইম ও কোলাজেন ব্যবহার করে টিস্যু সেল ও স্কিন সেল তৈরি করে চামড়ায় লাগানো যাবে। এতে শরীরে স্বাভাবিক চামড়ার মতোই দেখা যাবে থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি স্কিন।

অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ

সুদানে যুদ্ধের সময় ১৪ বছর বয়সী কিশোর ডেনিয়েল ওমরের বাড়ির পাশে বোমা হামলায় তার দুহাত উড়ে যায়। তার জন্য কৃত্রিম হাত তৈরি করেছে সাউথ আফ্রিকাভিত্তিক থ্রিডি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান রোবোহ্যান্ড।

একইভাবে তৈরি করছে শরীরে প্রতিস্থাপনযোগ্য বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। থার্মোপ্লাস্টিকের মাধ্যমে মানুষের হাত, বাহু এমনকি আঙুল প্রিন্ট করা যাবে বলে জানিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান।

এতে ব্যবহার করা হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে থার্মোপ্লাস্টিক পলিলেক্টিড ও স্টেইনলেস স্টিল। সুদানে যুদ্ধাহতদের জন্য রোবোহ্যান্ড তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ধরনের ঘটনার শিকার লোকদের একশ’ ডলারে কৃত্রিম হাত সরবরাহ করছে তারা।

হাড়

শরীরে হাড় প্রতিস্থাপনের ধারণাটি কিছুটা পুরনো বটে।

২০১১ সালে ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন তারা কৃত্তিমভাবে শরীরের হাড় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ক্যালসিয়াম ফসফেট। ফলে তা স্বাভাবিক হাড়ের মতোই শরীরে কাজ করবে। প্রাণীর শরীরে ওই হাড় সফলভাবে প্রতিস্থাপন করার পর এ তথ্য জানিয়েছে তারা। এতে ভবিষ্যতে মানুষের শরীরে হাড় প্রতিস্থাপন করা যাবে।