প্রযুক্তি খাতে হয়রানি: ভয়ে মুখ খুলেন না নারীরা

যৌন হয়রানির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘নজিরবিহীন’ নজরদারির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি হাব হিসেবে পরিচিত সিলিকন ভ্যালি-কে। লিঙ্গ বৈষম্য, অনুপুযুক্ত আচরণ ও এমনকি নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন নারী অভিযোগ করার পর এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, এমনটাই বলা হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক মার্কিন সাইট বিজনেস ইনসাইডার-এর প্রতিবেদনে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2017, 07:27 PM
Updated : 27 August 2017, 07:27 PM

২০১৫ সালে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ক্লেইনার পার্কিনস কাওফিল্ড অ্যান্ড বায়ার্স-এর নামে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী এলেন পাও। যদিও এ মামলায় সফল হননি তিনি। চলতি বছরের শুরুতে উবার কর্মী সুসান ফাওলার হয়রানি আর বৈষম্যের অভিযোগ তুলে আলোচনার জন্ম দেন। এরপর বিভিন্ন নারী প্রতিষ্ঠাতা ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অংশীদাররা সিলিকন ভ্যালিতে হয়রানির বিষয়ে আওয়াজ তোলেন।

সব মিলিয়ে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বাজে আচরণ নিয়ে অনেক বেশি নারী আওয়াজ তুলছেন বলেই উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। তবে, এই নারীরা মোট সংখ্যার একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র, এর কারণ হচ্ছে অধিকাংশ যৌন হয়রানির বিষয় নিয়ে কোনো অভিযোগ তোলা হয় না।

এ ধরনের ঘটনাগুলো প্রকাশের উদ্দেশ্যে মার্কিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান উইমেন হু টেক পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন এমন নারীদের কাছ থেকে তাদের কাহিনিগুলো সংগ্রহ করে। এই জরিপে প্রযুক্তি খাতের পুরুষ ও নারী মিলিয়ে সাড়ে নয়শ’ কর্মী অংশগ্রহণ করে। শুরুর দিকে, মাত্র ১০ জন নারী তাদের কথা প্রকাশ করেন। 

কেন নারীরা তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করেন না? এমন প্রশ্নের মুখে নারীদের কাছ থেকে পাওয়া উল্লেখযোগ্য জবাব হচ্ছে-

  • “এরপর, আমি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিশোধ, আমার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিদ্বেষ আর আমার বিষয়টির প্রচার হওয়া নিয়ে ভীত ছিলাম। প্রতিষ্ঠান ছাড়ার পরও আমার তার সমর্থন (পেশাদার রেফারেন্স) প্রয়োজন হতে পারে জেনে আমি এটা নিয়ে আগ্রহী ছিলাম না।”
  • “কারণ, আমার পরিচালক ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাকে বের করে দেওয়া হবে- এমন উদ্বেগ নিয়ে আমি আতঙ্কগ্রস্থ ছিলাম। আমার কাজ দরকার ছিল।”
  • “এমন আচরণ সব জায়গায় হচ্ছে আর গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হচ্ছিল। অধিকাংশ পুরুষ সহকর্মী নিজেরা নিজেরা বিদ্রূপ করেন। একবার আমি আমার এক জেষ্ঠ্য কর্মকর্তার সঙ্গে একটি প্রকল্প নিয়ে হলঘরে কথা বলছিলাম। নতুন এক শিক্ষানবিশ কর্মী আমার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বললেন, “তাকে (ওই নারী) প্যান্ট না পরা অবস্থায় দেখতে কেমন লাগবে তা ভেবে আমি অবাক।” 
  • “এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ আছে বলে আমার মনে হয়নি। সবচেয়ে গুরুতর যৌন হয়রানির ঘটনা আমার গাড়িতে ঘটেছিল, সেখানে শুধু আমি আর হয়রানিকারীই ছিলেন। তিনি উঁচুমাত্রায় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।”
  • “এটি এত বেশি হয় যে আমার কাছে বিষয়টিকে রীতির মতো মনে হয়েছে। আমার মনে হয় আমি ভেবেছিলাম আমি এটি সামাল দিতে পারব।”

নারীদের কাছ থেকে শোনা কথায় কিছু বিষয়ে মিল পাওয়া গেছে। সেগুলো হচ্ছে তারা মনে করেন তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই, বিষয়টি নিয়ে তারা হইচইয়ের জন্ম দিতে চান না আর তাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়া হতে পারে এমন ভয়। 

জরিপে দেখা যায়, ৫৩ শতাংশ নারী অংশগ্রহণকারী কোনো না কোনোভাবে কর্মক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হয়েছেন। পুরুষ অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে অংকটা ১৮ শতাংশ।

হয়রানির শিকার হওয়া অধিকাংশ নারী বলেছেন, সহকর্মী বা তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ কাজ করেছেন। ৭২ শতাংশ লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন, ৫১ শতাংশ মর্যাদাহানিকর মন্তব্য পাওয়ার কথা বলেছেন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ৪৫ শতাংশ।

জরিপে অংশ নেওয়া পুরুষ কর্মীদের উদ্বেগ ছিল ভিন্ন। তাদের অধিকাংশই মর্যাদাহানি করে এমন মন্তব্য বা কৌতুক, বয়সভিত্তিক বৈষম্য অথবা তাদের পেশাদার চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে জানান। পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন ও লিঙ্গবিষয়ক হয়রানির মাত্রা তালিকায় নিচের দিকে ছিল।