এই ন্যানোস্যাটেলাইট নিয়ে যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর কাছে তুলে ধরেছেন গবেষক ড. আরিফুর রহমান খান। বাংলাদেশের ন্যানো স্যাটেলাইট যাত্রা মূলত তার হাত ধরেই শুরু। এই ন্যানো স্যাটেলাইট তৈরির শুরুর সময়টায় তিনি গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জাপানের কিউসু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (কিউটেক)-তে। ড. আরিফ আর বাংলাদেশে থাকা ব্র্যাক অন্বেষা দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে করা হয়েছে এই প্রতিবেদন।
যেভাবে শুরু
এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোকে ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহ বা ন্যানো স্যাটেলাইট বানানো শেখাতে ২০০৯ সালে একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা দেয় ‘ইউনাইটেড নেশন’স অফিস ফর আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্স’, ২০১৩ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানানো হয়। এই প্রকল্পের ঘাঁটি হিসেবে বেছে নেওয়া হয় জাপানের কিউসু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (কিউটেক)-কে। এই প্রকল্পের কথা শোনার পরই নিজ দেশের মেধাবীদের নিয়ে কিছু করার আশা জাগে ড. আরিফুর-এর। যোগাযোগ শুরু করে দেন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।
“কিন্তু এটা তখন কেউ বিশ্বাসই করতে চায়নি, এমনকি কোনো জবাবও পাইনি”- বলেছেন তিনি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান-কে বিষয়টি বোঝানোর পর তার কাছ থেকে কিছুটা আগ্রহ পাওয়া যায় বলেও জানান। ২০১৩ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত-এর উৎসাহে দেশে আসেন ড. আরিফুর।
এল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
দেশে এসে ড. নিশাত-কে কীভাবে বিষয়টা বুঝিয়ে বলবেন তা নিয়ে খলিলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা চলছে, এমন সময় পাশে পান একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স ও ন্যাচারাল সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মৌসুমী জহুর-কে। তিনি ড. আরিফুর-কে তার এই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)-এর সাবেক প্রধান ড. আবু আব্দুল্লাহ জিয়াউদ্দিন আহমাদ-এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাদের মধ্যে আলোচনায় জাপান আর বাংলাদেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি ছাত্র-শিক্ষক বিনিময় চুক্তি করার পরিকল্পনা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ড. খলিলুর-কে আমন্ত্রণ জানানো হয় জাপানে।
সারা বিশ্বের উদীয়মান মহাকাশ গবেষক, যারা বিশ্ববিদ্যলয় শিক্ষার্থী, তাদের কৃত্রিম উপগ্রহবিষয়ক শিক্ষা দিতে কাজ করা সংগঠন ইউনিসেক গ্লোবাল-এর সঙ্গে কীভাবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে ড. খলিলুর-এর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন তিনি। ইউনিসেক গ্লোবাল পরিচালিত এই হাতেকলমে শিক্ষার নাম দেওয়া হয় ক্যানসেট লিডার ট্রেইনিং প্রোগ্রাম (সিএলটিপি)। সংগঠনের সচিব রেই কাওয়াশিমা সাহস যোগান ও পরামর্শ দেন।
দেশি শিক্ষার্থীরা কাজ করলেন কিউটেক-এ
২০১৪ সালের অক্টোবরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও কিউটেক-এর মধ্যে মৌখিক চুক্তির উপর ভিত্তি করে জাপানে যান বাংলাদেশের আব্দুল্লাহিল কাফি ও মাইসুন ইবনে মনোয়ার। তারা সেখানে কাজ করছেন, আর এ দিকে ড. খলিলুর ইউনিসেক গ্লোবাল-এর সদস্য হওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন। ২০১৪ সালের নভেম্বরের ১৮-২০ তারিখে দ্বিতীয়বারের মতো জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইউনিসেক গ্লোবাল-এর বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে কী কী পরিকল্পনা আছে, কত দিন পরে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এগুলো তুলে ধরেন তিনি। এই আয়োজনের শেষ কার্যদিবসের রাতে মাইসুন আর কাফির হাতে একটি গাঢ়-সবুজ রঙের মলাট করা কাগজ দেওয়া হয়, যেটি ছিল ইউনিসেক গ্লোবাল-এর সঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর স্বারক। সব আয়োজন শেষে দুই শিক্ষার্থী ড. আরিফুর-কে কাগজটি দিয়ে বলেন, “স্যার, এটি আপনার জন্য।” সে অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গিয়ে ড. আরিফুর বলেন, “চশমায় চোখ ঢেকে ভাবলাম, ছাত্রদের কাছ থেকে একজন মাস্টারের এর চেয়ে আর বেশি কি পাওনা আছে।”
দেশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া
ইতোমধ্যেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও কিউটেক-এর মধ্যে চুক্তির আলোচনা চলছিল, ভবিষ্যতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে আসা যাওয়া করতে পারে তাই ছিল এই চুক্তির লক্ষ্য। বাংলাদেশ থেকে জাপানের হোক্কাইদো বিশ্ববিদ্যালয়-এ এসে ২০১৫ সিএলটিপি-তে অংশ নিতে পাওয়া যায় আরেক শিক্ষার্থীকে- রায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা। তাকে নিয়ে ড. আরিফুর-এর মন্তব্য হচ্ছে, “সাহসের বলিহারি। তার চেয়েও বিশাল বলিদান করেছেন তার বাবা-মা। নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে, কন্যাকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত না করে, বিদেশে পাঠাচ্ছেন, তাও কিনা ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহ বুঝতে! তাও আবার নিজেদের পকেট কেটেই! মাথা নত হল। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে সে-ই প্রথম নারী বাংলাদেশী যে কিনা ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহের জ্ঞান নিতে দেশ ছাড়ছে। বেগম রোকেয়া বেঁচে থাকলে হয়তো তাকে বুকে জড়িয়েই নিতেন।”
দেশের প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট বানানো শুরু
ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে জয়েন্ট গ্লোবাল মাল্টি ন্যাশনাল বার্ডস প্রজেক্ট (জে: জাপান, জি: ঘানা, এম: মঙ্গোলিয়া, এন: নাইজেরিয়া, বি: বাংলাদেশ)। সংক্ষেপে এর নাম দেওয়া হয় বার্ডস প্রজেক্ট। প্রজেক্ট শুরু, কিন্তু তখনও বাংলাদেশ থেকে বিন্দুমাত্র আশ্বাসবাণী পাওয়া যায়নি বলে জানান ড. আরিফুর। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে হরিও-৪ এর ক্রিটিক্যাল ডিজাইন রিভিউ (সিডিআর) শেষ করে দেশে এলেন ড. আরিফুর।
দেশে এসে স্পারসো-তে গেলেন তিনি। তার ভাষায়, “বাঘা-বাঘা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের বোঝালাম কী চাই, কেন চাই, স্পারসো কী পাবে, সরকার কী পাবে, দেশ কী পাবে, আগামী প্রজন্ম কী পাবে, একটি ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহতে কত সময় দিতে হবে, কত পয়সা লাগবে, আমাদের, ল্যাসাইন-কিউটেক এর কতটুকু সামর্থ্য আছে।”
এ দিকে, দেশের তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাইসুন-কে জাপান সরকার বৃত্তি দিতে রাজি হয়েছে। তখন চিন্তা বাকি দুজনকে নিয়ে। তখন ড. আরিফুরদের আশা এই ন্যানো স্যাটেলাইট স্পারসো’র হোক আর এই দুই শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হোক। স্পারসো কর্মকর্তারা বুঝলেন, চেয়ারম্যান অন্য বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় সিদ্ধান্ত দিতে পারলেন না। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. আরিফুর-কে ফোন দেওয়া হল, স্যার ফজলে হাসান আবেদ দেখা করতে চান। তিন শিক্ষার্থী, ড. খলিলুর আর ড. আরিফুর স্যার ফজলে’র কার্যালয়ে যান। ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “১৫ মিনিট সময়, আমাকে বোঝান।” তারপরের অভিজ্ঞতা ড. আরিফুর-এর বর্ণনায় এমন- “ঢোক গিললাম। বলা শুরুর ৫ থেকে ৭ মিনিটও হয় নাই, বললেন কত পয়সা লাগবে? বললাম। তিনি রাজি হলেন।” তারপর স্যার ফজলে জানতে চাইলেন, এই তিন শিক্ষার্থীর কি হবে? “একজনের জন্য যে জাপান সরকার দুই বছরের বৃত্তি দিয়েছে তা জানালাম। এখন মাথার যন্ত্রণা এই দুই ছানাপোনা।” স্যার ফজলে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সুপারিশের কথা বলে বৃত্তি চাইতে বলেন। স্যার ফজলে জানতে চান ডিগ্রি অর্জনের পরে কী হবে? ড. আরিফুর বলেন, “কী আর হবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করবে, নয়ত দেশে বসেই সরকারের বড় কৃত্রিম উপগ্রহ বানাবে। আমরা কতদিন আর বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকব”?
এবার শুরু হয় দুই শিক্ষার্থীর বৃত্তি সন্ধানের পালা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলন, তুলে ধরা হলো ন্যানো স্যাটেলাইটের বিবরণ-
২০১৫ সালের ৩০ জুলাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জিডিএলএন সেন্টারে ‘ন্যানোস্যাটেলাইট পসিবিলিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সেস ক্লাব। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন ড. আরিফুর। এই সভায় বাংলাদেশের জন্য ন্যানো স্যাটেলাইট খুবই লাভজনক হবে বলে জানান তিনি। এর মাধ্যমে দেশের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, কৃষি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ আরও বিভিন্ন খাতে-এর ব্যবহার ব্যাপক অগ্রগতি আনবে বলে তুলে ধরেন তিনি। এজন্য বাংলাদেশকে বেশ সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে দৌড়ঝাঁপ চলছেই
এরপর আবার ঢাকায় আইইউবি-তে গেলেন ড. আরিফুর। সেখানে সবাইকে বোঝালেন, আইইউবি বার্ডস প্রজেক্ট-এ অন্তর্ভুক্ত হতে চাইল। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সঙ্গে আইইউবি ও কিউটেক-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক করা নিয়ে কথা হয়, পরে তা হয়ও।
কোথাও বৃত্তির ব্যবস্থা করতে না পেরে দুই শিক্ষার্থীকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তারা বাসা থেকে অর্থ জোগাড় করতে পারবেন কিনা। তারাও বললেন, “স্যার, চিন্তা করবেন না, মা-বাবা রাজি হবেন।”
এবার পালা গ্রাউন্ড স্টেশন
পরবর্তী কাজ হচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়-এর সঙ্গে কিউটেক-এর বার্ডস নিয়ে চুক্তি করতে হবে এবং ন্যানো স্যাটেলাইটের জন্য অর্থ পাঠাতে হবে, মহাকাশ থেকে তথ্য গ্রহণে ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র বা গ্রাউন্ড স্টেশন বানাতে হবে, ছাত্র-শিক্ষক চুক্তি করতে হবে। এসব কাজ ড. খলিলুরকে বুঝিয়ে দিয়ে জাপানে চলে গেলেন আরিফুর। এ ক্ষেত্রে ড. খলিলুর-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সবার সব বিষ হজম করে বাকি পুরো কাজটাই উনি সফলতার সঙ্গে করতে পেরেছেন বলেই আজ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো আনন্দ।”
বার্ডস প্রজেক্ট-এর কাজ শুরু
বার্ডস প্রজেক্ট-এ কয়েকটি দেশের ন্যানো স্যাটেলাইট বানানোর কাজ শুরু হয়। দেশগুলো হচ্ছে- জাপান, ঘানা, মঙ্গোলিয়া, নাইজেরিয়া এবং বাংলাদেশ। প্রতিটি ন্যানো স্যাটেলাইটের আকার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় ১০ সেন্টিমিটার আর ভর ১ কেজির মতো। এই প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে দেশগুলোর জন্য মানবসম্পদ তৈরি করা, যারা পরে তাদের দেশে থেকেই পরবর্তী কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরিতে মনোযোগী হতে পারবেন।
এ প্রকল্পে দলে সবার কাজ ভাগাভাগি করা হল। মাইসুন পেলেন গ্রাউন্ড স্টেশন কমিউনিকেশন (৯৬০০ বিপিএস), কাফি পেলেন ডিগি-সিঙ্গার (এর মাধ্যমে মহাশূন্য থেকে সঙ্গীত প্রচার করা হবে) আর সিঙ্গেল ইভেন্ট ল্যাচ-আপ (এসইএল) এবং অন্তরা পেলেন অ্যান্টেনা ডিপ্লয়মেন্ট চ্যালেঞ্জ। তিন শিক্ষার্থী রাত-দিন গবেষণাগারে কাজ করা শুরু করে দিলেন।
দেশে চলছে গ্রাউন্ড স্টেশন বানানোর কাজ
দেশে বিটিআরসি থেকে গ্রাউন্ড স্টেশন পরিচালনার অনুমোদন পাওয়া যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাড় দিতে রাজি হয়, ব্র্যাকও অর্থ পাঠাতে প্রস্তুত হয়। ওদিকে তিন শিক্ষার্থী ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে কৃত্রিম উপগ্রহ পর্যন্ত যোগাযোগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন থেকে আন্তর্জাতিক সনদ (অ্যামেচার ব্যান্ড জিএস অপারেশন লাইসেন্স) পেয়েছেন। ধীরে ধীরে ন্যানো স্যাটেলাইটের প্রোটোটাইপ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং মডেল তৈরি করা হয়, সম্পন্ন হয় এর পরীক্ষাও। এর মধ্যে ড. আরিফুর নাসা’র অর্থায়নে চালিত সিএসইটিআর নামের একটি কেন্দ্রে ন্যানো স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করতে চলে যান।
ন্যানো স্যাটেলাইট হস্তান্তর
তিন শিক্ষার্থী ফ্লাইট মডেল তৈরি করেন। ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের তৈরি করা ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির (জাক্সা) কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেদিন দুপুরে কিউসু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজিতে স্যাটেলাইটটি হস্তান্তর অনুষ্ঠান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। এটি হস্তান্তর করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব এবং কিউসু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজির প্রেসিডেন্ট ইউজি অই। এ সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন কিউটেক ল্যাবরেটরি অব স্পেসক্র্যাফট এনভায়রনমেন্ট ইন্টারকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক মেংগু চো, ড. মো. খলিলুর রহমান এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। ওই অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ সাদ আন্দালিব বলেন, “আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, এই প্রযুক্তিটা শিখে নেওয়া, কেননা পরবর্তীতে যেন আমাদের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্যাটেলাইটের ডিজাইন থেকে শুরু করে সামগ্রিক কাজটা নিজেরাই করতে পারে। সেটাই আমরা শুরু করলাম।”
এর মধ্যে ড. খলিলুর দেশে থাকা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত গ্রাউন্ড স্টেশন দল-কে নিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করে ফেলেন।
গ্রাউন্ড স্টেশন উদ্বোধন
২০১৭ সালের ২৫ মে ব্র্যাক বিশ্বদ্যিালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাসের ৪ নম্বর ভবনের ছাদে ব্র্যাক অন্বেষা ন্যানো স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন উদ্বোধন করেন ব্র্যাক চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ। গ্রাউন্ড স্টেশনটির উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে গবেষণার ক্ষেত্রে খুব বেশি বিনিয়োগ করা হয় না। আমরা এখনও মনে করি, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো রিসার্চ করবে আর আমরা এর ফলাফল ভোগ করব।”
এ গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ দলে প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ছিলেন ড. খলিলুর, ইনভেস্টিগেটর হিসেবে কাজ করেন ব্র্যাক বিশ্বিবিদ্যালয়ের বৈদ্যুতিক ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান সাগর। দলের সদস্যদের তিনটি ভাগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা হলেন- দলনেতা মোহাম্মদ সৌরভ, বিজয় তালুকদার, আয়নাল হুদা এমিল আর সানান্দ জগতি চয়ন। প্রথম প্রজন্মের সদস্যরা হলেন- আরাফাত হক, জামিল আরিফিন। দ্বিতীয় প্রজন্মের সদস্যরা হলেন- মো. শাকিল, আদনান সাব্বির, মো. মাহবুবুল আলম ও শাহরিয়ার হাসান পরশ।
গ্রাউন্ড স্টেশন বানাতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন? বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর এমন প্রশ্নের জবাবে সৌরভ বলেন, “এখন তো সবাই মোটামুটি জানে এটা কি, কিন্তু কাজ শুরু সময় কেউ এটা নিয়ে জানত না। গ্রাউন্ড স্টেশন বানাতে বিটিআরসি’র অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে, তাদেরকে এটা নিয়ে বোঝাতে হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, কোথায় বানানো হবে এটা নিয়েই চিন্তার বিষয় ছিল। পরে এই বিল্ডিং বেছে নেওয়া হয়, এক্ষেত্রে রাজউকের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে।
গ্রাউন্ড স্টেশন চালুর পর অন্য আরেকটি স্যাটেলাইট থেকে এতে ডেটা গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোরা’র ছবিও পাওয়া যায়। কিন্তু আবহাওয়া বিষয়ে খুব একটা জ্ঞান না থাকায় তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেননি বলে জানান আরাফাত।
ন্যানো স্যাটেলাইটটি ফ্যালকন ৯-এ করে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পাঠানোর পর, সেখান থেকে তা কক্ষপথে স্থাপন করা হবে।
সৌরভ জানালেন- এখন পুরো টিম অপেক্ষা করছে আমাদের জাতীয় সংগীত বাজানোর। হ্যা, কক্ষপথে পৌঁছানোর পর ন্যানো স্যাটেলাইটের প্রথম কাজটিই হবে এটি।