দেশে দেশে বড় ধরনের সাইবার হামলা

বিশ্বের একশটি দেশে একটি ‘র‌্যানসমওয়্যার’ ছড়িয়ে পড়ার খবর এসেছে, যাতে আক্রান্ত হয়েছে স্বাস্থ্য ও টেলিকমসহ বিভিন্ন খাতের বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2017, 06:20 PM
Updated : 13 May 2017, 06:11 AM

বিবিসি জানিয়েছে, একটি ম্যালওয়্যার এসব সংস্থার নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কম্পিউটার স্ক্রিনে একটি বার্তা দিচ্ছে। কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে বিটকয়েনের মাধ্যমে ৩০০ ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে সেখানে।

আক্রান্ত এসব কম্পিউটার স্ক্রিনের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করছেন ভুক্তভোগী ব্যবহারকারীরা।

শুক্রবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাত পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, স্পেন, ইটালি, ভিয়েতনাম, তাইওয়ানসহ ৯৯টি দেশে এই ‘র‌্যানসমওয়্যার’ ছড়িয়ে পড়ার খবর দিয়েছে বিবিসি।

সাইবার নিরাপত্তা ফার্ম আভাস্ট জানিয়েছে, তারা  ‘র‌্যানসমওয়্যার’ আক্রমণের ৭৫ হাজারটি শনাক্ত করেছে।

“এটা আসলেই বিশাল,’ বলেন আভাস্টের কর্মকর্তা জ্যাকাব ক্রুস্টেক।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ওয়ানাক্রাই’ নামের পুরনো একটি ম্যালওয়্যারের নতুন কয়েকটি সংস্করণের মাধ্যমে এই সাইবার হামলা চালানো হয়েছে।

র‌্যানসমওয়্যার

র‌্যানসমওয়্যার হল এক ধরনের ম্যালওয়্যার যা কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ব্যবহারকারীর কাজে বাধা দেয় এবং অনেক সময় হার্ড ড্রাইভের তথ্য একটি নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে এনক্রিপ্ট করে ফেলে।

এর ফলে ব্যবহারকারী ওই কম্পিউটার ব্যবহার করতে গেলে তার কাছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুক্তিপণ বা অর্থ দাবি করা হয়। 

এ ধরনের ম্যালওয়্যার কম্পিউটার ওয়ার্ম বা ট্রোজান ভাইরাসের মত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

জোসেফ পোপ নামের এক হ্যাকার ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মত র‌্যানসমওয়্যার তৈরি করেন যা ‘এইডস’ বা ‘পিসি সাইবর্গ’ নামে পরিচিতি পায়। ২০১৩ সালে র‌্যানসমওয়্যার ব্যবহার করে বিটকয়েন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের বেশ কিছু ঘটনার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসে।

ক্যাসপারেস্কি ল্যাবের গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস টিমের কস্টিন রাইয়ু বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে এক টুইটে জানান, ওই সময় পর্যন্ত ৭৪টি দেশে ৪৫ হাজারের বেশি কম্পিউটার এই র‌্যানসমওয়্যারের শিকার হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন তারা।

অচল হয়ে পড়েছে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের আইটি নেটওয়ার্ক: ছবি গার্ডিয়ডান

 

এই সাইবার হামলায় বড় ধরনের জটিলতায় পড়েছে ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)।

যুক্তরাজ্যের অন্যতম এই রাষ্ট্রায়ত্ত চিকিৎসা সেবা ইউনিটের আইটি নেটওয়ার্ক আক্রান্ত হওয়ায় শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের আওতাধীন হাসপাতাল ও ট্রাস্টগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম থমকে যায়।

ফলে এসব হাসপাতালের কর্মীরা তাদের কম্পিউটারে রোগীদের তথ্য দেখতে পারছিলেন না। রোগীদের নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্স অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হাচ্ছিল।

কম্পিউটার সচল না থাকায় অনেক হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য সব সেবা বন্ধ রাখতে হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সাক্ষাতের সূচিও বাতিল করা হয়।

এনএইচএস ডিজিটাল এক বিবৃতিতে জানায়, কেবল তারাই এ হামলার শিকার হয়নি। আরও বেশ কিছু সংস্থায় একই ধরনের র‌্যানসমওয়্যারের আক্রমণের খবর তাদের কাছে আছে।  

একই র‌্যানসমওয়্যারের শিকার হওয়ার খবর দিয়েছে বেশ কয়েকটি স্প্যানিশ কোম্পানি। টেলিকম খাতের বড় কোম্পানি টেলিফোনিকা এক বিবৃতিতে বলেছে, আক্রান্ত হলেও তাদের গ্রাহক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে না।

স্পেনের জ্বালানি খাতের কোম্পানি ইবেরদ্রোলা ও গ্যাস ন্যাচারাল এই সাইবার হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব কোম্পানি তাদের কর্মীদের কম্পিউটার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ক্ষতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেলিভারি কোম্পানি ফেডএক্সও এই র‌্যানসমওয়্যারের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, তাদের উইন্ডোজভিত্তিক কিছু কম্পিউটার এই ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হয়েছে এবং দ্রুত এই জটিলতা তারা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। 

 

ইটালি থেকে এক টুইটার ব্যবহারকারী একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে একটি ইউনিভার্সিটির ল্যাবে ‘ওয়ানাক্রাই’ আক্রান্ত কম্পিউটার দেখানো হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, এই র‌্যানসমওয়্যারে যেসব বিটকয়েন ওয়ালেটে মুক্তিপণের টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে, সেসব ওয়ালেটে মোটা টাকা জমা পড়ার খবর আসছে।

ব্রিটিশ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কেভিন বিউমন্টকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, “এটি একটি বড় ধরনের সাইবার অ্যাটাক। এত দ্রুত ইউরোপের এত প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আমি আগে দেখিনি।”  

পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন এমন গবেষকদের কেউ কেউ এই হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ-এর চুরি যাওয়া হ্যাকিং টুলের যোগাযোগ দেখতে পাচ্ছেন।  

তারা বলছেন, মাইক্রোসফট গত মার্চে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমাতে একটি প্যাচ ছাড়লেও বিশ্বজুড়ে অনেক কম্পিউটারই হয়ত আপডেট করা হয়নি।