মঙ্গলে ছিল সাগর, হয়েছিল সুনামি

প্রাচীন মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন স্থান জুড়ে শক্তিশালী সুনামি সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত এমন গর্ত শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2017, 01:16 PM
Updated : 27 March 2017, 01:16 PM

বিজ্ঞানীদের দলটির ধারণা, তিনশ’ বছর আগে মঙ্গলের উত্তরে থাকা একটি সাগরে একটি গ্রহাণু আছড়ে পড়ার পর দেড়শ’ মিটার উঁচু ঢেউ তৈরি করেছিল। গ্রহটির উত্তরের সমতলের ‘লমনসভ’ নামের এই গর্ত মঙ্গলভূমিতে থাকা সুনামির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

৪৮তম লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স কনফারেন্স-এ এ নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ১২০০ কিলোমিটার প্রশস্ত লমনসভ-এর নামকরণ করা হয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীর রুশ বিশেষজ্ঞ মিখাইল ভাসিলিয়েভিচ লমনসভ-এর নামে।

সাম্প্রতিক সময়ে এই ধারণা কিছুটা মূল্য হারিয়েছে, কয়েকজন বিজ্ঞানীর ধারণা এই লাল গ্রহের উত্তর অঞ্চলে আগে একটি সাগর ছিল, যা পরে ভরাট হয়ে নিম্ন সমভূমিতে পরিণত হয়। দক্ষিণের উচ্চভূমি আর উত্তরের নিম্নভূমির মধ্যকার সীমানা পেরিয়ে সুনামি ঢেউ পাড়ি দেওয়ার প্রমাণ এই অনুমানকে আরও শক্তিশালী করেছে। 

উত্তরের সমভূমিতে আর দক্ষিণে প্রাচীন তটরেখার দিকে ভেসে যাওয়া পলি শনাক্ত করেছেন ফ্রান্সোয়েস কস্টার্ড, স্টিভ ক্লিফোর্ড আর তাদের সহকর্মীরা।  

ফরাসী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ প্যারিস-সাড ও ফ্রান্সের জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সিএনআরএস-এর ড. কস্টার্ড বলেন, “মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধ আর দক্ষিণ গোলার্ধের মাঝামাঝি আমরা সুনামির প্রচলিত কিছু উৎস খুঁজে পেয়েছি। এর মানে হচ্ছে এক সময় সেখানে উত্তরে একটি সাগর ছিল।”

যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি ইনস্টিটিউট-এর ড. ক্লিফোর্ড বলেন, “পলিজমা আলামতগুলো উত্তরের সমভূমি থেকে উচ্চভূমির দিকে গিয়েছে আর তা একটি সম্ভাব্য প্রত্ন-উপকূলের কাছাকাছি যুক্ত হয়েছে। ফ্রান্সোয়েস আর তার সহকর্মীদের করা বিভিন্ন মডেলিং থেকে পাওয়া অনুমান এ সময়ে একটি সাগর থাকার বিষয়ে বিশ্বাস করার মতো প্রমাণ দিতে পেরেছে।”

এর আগে সেখানকার বিস্তৃত ভূখণ্ড কাদার প্রবাহ, কাদা আগ্নেয়গিরি বা হিমবাহের মুখে পড়েছে বলেও ধারণা বিজ্ঞানীদের। অনুমান করা মঙ্গলের সুনামি ভূমিতে দেড়শ’ কিলোমিটার গিয়েছিল, উচ্চভূমিতে উঠেছে প্রায় একশ’ মিটার।

স্টিভ ক্লিফোর্ড বলেন, “যদি আমাদের কাছে এমন প্রমাণ থাকে যে তা তিনশ’ বছর আগে ঘটেছিল, তাহলে উত্তরের সম্পভূমিতে অবশ্যই একটি সাগরও ছিল।”

“এটাই এখানে মূলকথা, এর মানে হচ্ছে এখানে সে সময় ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে পানি ছিল আর মঙ্গলে জমে থাকা সব পানির প্রভাব এতে ছিল বলে ধারণা করা যায়।”

ওই সময় দুটি বড় ঢেউ সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানান কস্টার্ড। তিনি বলেন, “এটি আসলেই বড় মাপের, দ্রুত গতির সুনামি ছিল। একদম শুরুতে এর প্রভাবে ৭০ কিলোমটার ব্যাসের গর্ত তৈরি হয়েছিল।”

“প্রথমবারের ঢেউ প্রায় তিনশ’ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় উঠে। তার কয়েক ঘণ্টা পর, সুনামির ঢেউ ওই গর্ত থেকে কয়েকশ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রত্ন-উপকূলে পোঁছায়।” দানবাকৃতির এই ঢেউ মালভূমি আর পাহাড়গুলোর উপর দিয়ে ভেসে উপত্যকাগুলোর মধ্য দিয়ে যায়।

“শেষে, মঙ্গলের সাগর ওই গর্ত ভরে ফেলার কারণে এক ধরনের প্রতিঘাত সৃষ্টি হয়, যা আরেকটি ঢেউ সৃষ্টি করে”, যোগ করেন কস্টার্ড।

যদি তিনশ’ বছর আগে মঙ্গলে কোনো সাগর থেকে থাকে, এটি লাল গ্রহটিতে জীবের জন্য আরও বসবাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে এই ধরনের জীববিদ্যার ইংগিত এখন শনাক্ত করা যেতে পারে বলে আশা জাগছে, বলা হয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।

জার্নাল অফ জিওফিজিক্যাল রিসার্চ-এ এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।