এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সমাজের নানা সমস্যা সহজে দূর করা সম্ভব বলেই বিশ্বাস আয়োজকদের।
“মানুষ তার আশপাশের জগতের সঙ্গে যেভাবে পারস্পরিক যোগাযোগ করে থাকে সেখানে মোবাইল এবং ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনছে। নতুন ডিজিটাল সেবাগুলো আগের চেয়ে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করছে।”-- বললেন শারারাত ইসলাম। তিনি ব্র্যাক যোগাযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক এবং ব্র্যাকাথন ২০১৭-এর আয়োজক কমিটির সদস্য।
“ব্র্যাক এই প্রেরণাকে কাজে লাগাতে চায় এবং সেসব উদ্ভাবকদের বের করতে চায় যারা এই পরিবর্তনগুলোকে বাস্তব রূপ দিচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।
এই বছরের প্রতিযোগিতার স্লোগান রাখা হয়েছে ‘কোড ফর বাংলাদেশ’।
প্রতিযোগিতার বিষয়ে আয়োজকরা বলেন, “ব্র্যাকাথন হচ্ছে এমন একটি প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে কোডাররা তাদের উদ্ভাবনী মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের দেশে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ হবেন।”
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি এই প্রতিযোগিতার নিবন্ধন শুরু হয়। ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত bracathon.brac.net ওয়েবসাইটে গিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো কোডার এই প্রতিযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। পৃথক ব্যক্তি বা দলগতভাবে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
প্রতিযোগিতার জন্য আটটি বিভাগ রাখা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী দলগুলো তাদের পছন্দমতো বিভাগে নিবন্ধন করতে পারবে বলে জানানো হয়।
নিবন্ধন করা প্রতিযোগীদের অ্যাপ্লিকেশনের পরিকল্পনা বিবেচনা করে চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের জন্য দল বাছাই করবে ব্র্যাকাথন কর্তৃপক্ষ। বাছাই করা দলগুলোর পর্যবেক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি বুটক্যাম্প করার কথা রয়েছে আয়োজকদের।
চূড়ান্ত পর্বে ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা হতে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা পর্যন্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নেওয়া দলগুলো তাদের অ্যাপ তৈরি ও উপস্থাপন করবে।
বিচারকরা প্রতিযোগীদের অ্যাপ বিবেচনা করে বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ী দল ঘোষণা করবেন। পরবর্তীতে বিজয়ী দলগুলোকে তাদের অ্যাপের উন্নয়নের জন্য তহবিল এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহায়তা দেবে আয়োজকরা। আর অ্যাপ তৈরি পুরোপুরি শেষ হলে সেগুলো ব্র্যাক-এর অভ্যন্তরে এবং সমাজের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিগত আয়োজনের অ্যাপগুলো
এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্র্যাকাথন-এর প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয়। এই আসরে নিবন্ধন করা ১৬০টি দলের মধ্য থেকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য ২৭টি দল বাছাই করা হয়।
ব্র্যাকাথন-এর এ সাতটি বিভাগে সাতটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন বিচারকরা। পরবর্তীতে এই সাত দলের মধ্যে পাঁচটি দল ব্র্যাক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পুরোপুরিভাবে তাদের অ্যাপ তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে।
ব্র্যাকাথন ২০১৫-এর বিজয়ী পাঁচ অ্যাপ হল-
মাইক্রো লার্নিং:
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর তৈরি ‘মাইক্রো লার্নিং’ নামের অ্যাপটি প্রতিযোগিতার এক বিভাগে জয়ী হয়। টিম অ্যামিটি নামের এই দলের সদস্যরা হলেন, এস এম মহি উস সুন্নাত, মনামী ইসলাম, শায়েখ হাসান স্মরণ, ইয়াছিন অাহমেদ, মনজুর রাকিব ভূঁইয়া।
ব্র্যাক-এর লাখো কর্মীকে অ্যাপের মাধ্যমে কম সময়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাই ছিল এই দলের লক্ষ্য। মাইক্রো লার্নিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা প্রশিক্ষক ছাড়াই ব্র্যাক-এর নীতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। এ ছাড়া অ্যাপের মাধ্যমেই তারা পরীক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ফলাফল বিবেচনা করতে পারবেন বলে জানানো হয়।
ব্র্যাকম
ব্যাক কর্মীদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ‘ব্র্যাকম’ নামের অ্যাপ তৈরি করেন বাংলা ট্র্যাক মিয়াকি ভাস লিমিটেড-এর পাঁচ সদস্য নাহিদুল ইসলাম, মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী, মো. এহসান জামান, রাফিদ মেহেদী ভূঁইয়া, মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন।
টিম মিয়াকি নামের দলটির তৈরি এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্র্যাক-এর প্রত্যন্ত এবং নিকটবর্তী ব্রাঞ্চ অফিসগুলোর কর্মক্ষমতা ও মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের খবরাখবর রাখা যাবেবে। পরিদর্শকরা অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প পর্যবেক্ষণ এবং প্রকল্পের ছবি দেখে তার মান নির্ধারণ করতে পারবেন।
প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে মিয়াকি দলের সদস্য ইলিয়াস হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে তাদের এই অ্যাপটির কাজ শেষ করা হয়েছে এবং ব্র্যাক তা ব্যবহার করছে।
ফিক্স মাই স্ট্রিট:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী সাইদুল হক অনিক, সাইফুল ইসলাম, ওয়াসিফ আদনান খান, শাবাব শাহরিয়ার খান, ই এম ওয়াসিফুর রহমান চেীধুরী’র দতলটির নাম ছিল বুয়েট গেইমচেঞ্জারস। তাদের তৈরি অ্যাপের নাম ‘ফিক্স মাই স্ট্রিট’। এই অ্যাপটির মাধ্যমে ভাঙ্গা রাস্তাঘাট, ঝুলন্ত বিদ্যুতের তারসহ পরিবেশের বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতার ছবি তোলা যাবে। অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবির বিভাগ বাছাই করে তা সরকারের ওই বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেবে।
প্রিভেন্ট টিবি:
যক্ষা প্রতিরোধে ‘প্রিভেন্ট টিবি’ নামের গেইম তৈরি করে বিজয়ী হয় টিম রিবুট। এই দলের সদস্যরা হলেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর মো. রেজাউল হাসান ইভান, জিসান হায়দার জয়, জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, রাকিব খান এবং তাওসিফ যাহিন খান।
দলটির তৈরি এই গেইমের মাধ্যমে যক্ষা রোগ কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা জানা যাবে। ইতোমধ্যেই অ্যাপ-এর কাজ শেষ করে তা ব্র্যাক-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ইভান।
ব্র্যাক ওয়ালেট
ব্র্যাক-এর মোবাইল লেনদেন সেবা বিকাশ-এর জন্য মোবাইল অ্যাপ ‘ব্র্যাক ওয়ালেট’ তৈরি করে একটি বিভাগে জয়ী হয় টেকনোলাইভ। বিকাশের জন্য ইউজার ইন্টারফেইস তৈরি করাই ছিল দলটির উদ্দেশ্য। এই দলে ছিলেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টেকনোলাইভ-এর পাঁচ সদস্য। দলের সদস্যদের সম্পর্কে জানতে ওই দলেরই সদস্য তানভীর সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আগের আসরের বিজয়ী দলগুলোকে তিন হাজার মার্কিন ডলার তহবিল দিয়েছে আয়োজকরা। ব্র্যাকাথন ২০১৭ নিয়েও একই ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে আয়োজকদের। তবে, এবার বিজয়ীদের জন্য পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার তহবিল দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
আগের আসরের থেকে এবারের আসরে কিছুটা ভিন্নতাও আনা হয়েছে। ব্র্যাকাথন ২০০১৫-তে শুধু ব্র্যাক সম্পর্কিত সমস্যার সমাধানে জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবার শুধু ব্র্যাক নয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমস্যাও প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
আগের আসরের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের তৈরি অ্যাপগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজিবুল জানান, দলগুলো ইতোমধ্যেই অ্যাপের কাজ শেষ করেছে এবং অ্যাপগুলো নিয়ে একমাস পাইলট প্রকল্প চালানো হয়েছে। পরবর্তীতে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করা শুরু করেছে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিকভাবে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মের জন্য অ্যাপটি তৈরি করা হলেও পরবর্তীতে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বিজয়ী দলগুলোই অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের জন্য অ্যাপটি তৈরি করেছেন বলেও জানানো হয়।