২০১৬ কে ঘিরে ব্যবসা বাণিজ্যের জগতেও কম হইচই হয়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান যখন চলতি বছরের প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত তখন অনেকেই চাইছেন যত দ্রুত পারা যায় এই বছরটিকে ভুলে যেতে। নীচে সিএনএন-এর প্রকাশ করা এমনই কিছু নামকরা প্রতিষ্ঠানের কথা তুলে ধরা হল যাদের জন্য বছরটি ছিল অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো।
১. ইয়াহু
প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছর শুরু করে এর কর্মীসংখ্যা ১৫ শতাংশ ছাঁটাইয়ের মধ্য দিয়ে। তারপরই এর দুই দুইটি বিশাল আকারের তথ্য লঙ্ঘনের ঘটনা সামনে আসে যার ফলে প্রায় একশ’ কোটি গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্থ হন। আর এর প্রভাব পড়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মূল্যে যা সেপ্টেম্বরের পর ১৪ শতাংশ হ্রাস পায়।
২. স্যামসাং
বছরটি মোটেও ভালো কাটেনি দক্ষিণ কোরীয় ইলেক্ট্রনিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং-এর। প্রতিষ্ঠানটির সমস্যা শুরু হয় যখন আগুন লাগা সংক্রান্ত ঘটনার জের ধরে এর লাখ লাখ বিক্রিত গ্যালাক্সি নোট ৭ বাজার থেকে তুলে নিতে হয়। এরপর তারা আগের ফোনগুলো বদলে নতুন নিরাপদ নোট ৭ বিতরণ শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীতে সেটিতেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। শেষমেশ প্রতিষ্ঠানটি নোট ৭-এর উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। যার ফলে ব্যাপক আর্থিক লোকসান গুনতে হয় স্যামসাংকে এবং খ্যাতিও খোয়ায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি প্রায় তিন লাখ ওয়াশিং মেশিনও বাজার থেকে তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় কারণ সেগুলোও অগ্নি সংক্রান্ত ঝুঁকির মধ্যে ছিল। ফলাফলস্বরূপ এর শেয়ারমূল্যের দরপতন ঘটে এমনকি প্রতিষ্ঠানটিকে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্তও বিবেচনায় আনা হয়।
৩. ওয়েলস ফার্গো
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এক সঙ্গে ৫,৩০০ কর্মীকে পদচ্যুত করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা গোপনে ২০ লাখ অননুমোদিত অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিল। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জন স্টাম্ফ-কে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয়। এই জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশের পরপরই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারমূল্য ১২ শতাংশ হ্রাস পায়।
৪. ডয়চে ব্যাংক
এ বছর অনেক বড় প্রতিষ্ঠানই আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় লড়াই করেছে। বিশেষ করে ডয়চে ব্যাংকের জন্য বছরটি ছিল তুলনামূলক বেশী বেদনাদায়ক। এই বছর খুব একটা লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। আর সঙ্গে আছে নীতিবিরুদ্ধ কর্মী ছাঁটাইয়ের দায়। এর মধ্যেই সেপ্টেম্বরে বিষাক্ত সীসা প্যাকেটজাতের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৪০০ কোটি মার্কিন ডলার দাবি করে, যা প্রতিষ্ঠানটির জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলস্বরূপ আগের ২০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারমুল্য ২০ শতাংশ কমে যায়।
৫. থেরানোস
এ বছর ছিল বেসরকারি মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেরানোসের দর্শনীয় পতনের সাক্ষী। আগের বছরের শেষ দিকে মূলত এর খারাপ সময়ের শুরু হয় যখন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তদন্ত বায়োটেক প্রতিষ্ঠানটির বৈজ্ঞানিক দাবি ও রক্ত পরীক্ষার পদ্ধতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটিকে এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এলিজাবেথ হোমস-কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা দ্বারা একাধিক তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়। অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটি জানায় তারা তাদের পরীক্ষাগার বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে এবং শতাধিক কর্মী ছাঁটাই করবে।
৬. টুইটার
মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের জন্য চলতি বছরটি শুরু হয় এর শেয়ারমূল্য হ্রাসের মধ্য দিয়ে। আর আগের বছরের শেষের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকসংখ্যা ব্যাপকহারে কমে যেতে শুরু করেছে বলেও জানায় তারা। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি এর শতাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয় এবং এর ভিডিও কলিং অ্যাপ ভাইন বন্ধ করে দেয়। যদিও পরবর্তীতে ভাইনকে ক্যামেরা অ্যাপ হিসেবে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। আর প্রতিষ্ঠানটির জন্য সর্বশেষ আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হয় এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া ও কিছু উচ্চপদস্থ নির্বাহীর প্রতিষ্ঠান ত্যাগের ঘটনাকে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবছরের শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারমূল্য ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
৭. মাইল্যান
নেদারল্যান্ডস-এ নিবন্ধিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মাইল্যান প্রথম কেলেঙ্কারিতে পড়ে যখন এই বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির ‘এপিপেন’ নামের জীবনরক্ষাকারী এলার্জি চিকিৎসার ওষুধের মূল্য ২০০৯ সাল থেকে মোট ১৫ বার বৃদ্ধি করার বিষয়টি সামনে আসে। এই সাত বছরে ওষুধটির মূল্য ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয় যা শুধু ব্যবসায়িক মুনাফা বৃদ্ধির প্রতীক ব্যতীত আর কিছু নয়। যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি সড়ে ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে রাজি হয়। আর এর শেয়ারমূল্য কমে যায় ৩০ শতাংশ।
৮. মন্টে ডেই পাসি ডি সিয়েনা
এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ব্যাংক যা এখন পর্যন্ত টিকে রয়েছে ও মোট সম্পদের বিচারে ইতালির তৃতীয় বৃহত্তর বাণিজ্যিক ও খুচরো ব্যাংকও বটে। আগের ৫৪৪ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে ব্যাংকটি। সম্ভবত ২০১৬ সালের মতো এতটা খারাপ সময়ের সম্মুখীন কখনোই হয়নি। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির মোট দেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮০০ কোটি ইউরোতে। প্রতিষ্ঠানটির অসরকারি উৎস থেকে ৫০০ কোটি অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার এটিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।