ফেইসবুকের নীতি বদল, ‘সম্পাদক’ জাকারবার্গ

"মার্ক জাকারবার্গ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক, তবে নিজেও হয়তো এ বিষয়ে জানেন না।"

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2016, 02:32 PM
Updated : 22 Oct 2016, 02:32 PM

না চমকানোর কিছু নেই। ফেইসবুকের সম্পাদকীয় নীতিমালা নিয়ে এক প্রতিবেদনের শুরুটা এমনভাবেই করে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান। দৈনিকটি জানায়, শুক্রবার খবরে বোঝা যায়, ফেইসবুকে সম্পাদকীয় বিচারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাকারবার্গ-ই নেন। 

শুক্রবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ঘোষণা দেয়, এটি "খবর হওয়ার মতো, উল্লেখযোগ্য বা জনগণের আগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ" এমন কোনো গ্রাফিক উপাদান আর সেন্সর করবে না, এমনকি তা যদি "প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা লঙ্ঘন করে তাও"।

ফেইসবুক কর্মকর্তা জোয়েল কাপলান আর জাস্টিন ওসোফস্কি এই পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে লেখা এক ব্লগে জানান, "শিশু বা যারা দেখতে চান না তাদের গ্রাফিক ইমেইজ না দেখিয়ে বা নিরাপত্তা ঝুঁকি আরোপ না করে আরও বেশি ইমেইজ আর স্টোরি দেখানোর সুযোগ দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।"

নরওয়ে'র এক পত্রিকায় ছাপা ভিয়েতনাম যুদ্ধে পালানোর চেষ্টায় থাকা নাপাম শিশুর এক ছবি 'নগ্নতা'-এর অভিযোগে সরিয়ে দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয় ফেইসবুক। পরে অবশ্য নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনার প্রায় এক মাস পর ঘটে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ব্যবহার করা এক ছবি সরানোর ঘটনা। এবারও নিজেদের ভুল স্বীকার করে ফেইসবুক। এরপরই এমন সিদ্ধান্ত আনল ফেইসবুক।

নরওয়ে'র ওই ছবির ঘটনার সময় অফেনপোস্টেন নামের পত্রিকা'র প্রধান সম্পাদক এসপেন এগিল হান্সেন জাকারবার্গ-কে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে "বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সম্পাদক" হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি "চিন্তাশুন্যভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন" বলে অভিযোগ তোলেন।

এখন থেকে সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত ঠিক কীভাবে নেওয়া হবে তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি প্রতিষ্ঠানটি। শুধু বলা হয়েছে, "এটি ঠিক কীভাবে করা যায় তা বের করতে আমাদের সম্প্রদায় আর অংশীদারদের সঙ্গে আমরা কাজ করব, এ ক্ষেত্রে নতুন যন্ত্রপাতি আর নতুন কিছু প্রণয়নের পদক্ষেপ দুই উপায়ই অবলম্বন করব।"

সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে 'চেইন অফ কমান্ড' কী হবে, এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি ফেইসবুক। তবে, ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক প্রতিবেদনে এই চেইনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে জাকারবার্গ-এর নাম বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাকারবার্গ আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর কোনো পোস্ট না সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমনকি তা যদি ঘৃণামূলক উক্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান নীতি লঙ্ঘন করে তবুও। কর্মীরা এই দুই নীতির বিরোধিতা করলে, জাকারবার্গ এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। 

মার্কিন দৈনিকটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "জাকারবার্গ স্বীকার করেছেন মুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞা আনতে ট্রাম্প-এর করা আহ্বান ঘৃণামূলক উক্তির মধ্যে পড়ে, কিন্তু এগুলো সরিয়ে দেওয়ার প্রভাব অনেক বাজে বলেও জানান তিনি।"

এই প্রতিবেদনের জবাবে ফেইসবুক বলে, "যখন আমরা আমাদের নীতিমালা লঙ্ঘন করতে পারে এমন কোনো কনটেন্টের অভিযোগ যাচাই করি, আমরা প্রসঙ্গগুলো বিবেচনায় আনি। প্রসঙ্গগুলোতে রাজনৈতিক বক্তৃতার মূল্য থাকতে পারে।" ট্রাম্পএর পোস্টগুলো "কে হচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট, এই বিষয়ে চলমান আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অংশ" হওয়ায়, এই পোস্টগুলো নিয়ে আসা অভিযোগ "ঘটনাভেদে" দেখা হচ্ছিল।   

ফেইসবুক নতুন কোনো সম্পাদকীয় নীতিমালা প্রণয়ন করবে কিনা বা নতুন সম্পাদক নিয়োগ দেবে কিনা এ নিয়ে গার্ডিয়ান-এর করা প্রশ্নে কোনো জবাব দেয়নি ফেইসবুক।