গ্যালাক্সি নোট ৭-এর জীবনাবসান

বাজারে আসার দুই মাসের মাথায় শেষ পর্যন্ত গ্যালাক্সি নোট ৭ তৈরির ইতি টানল স্যামসাং।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2016, 01:28 PM
Updated : 11 Oct 2016, 01:44 PM

মঙ্গলবার এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়- ‘স্যামসাং তার গ্যালাক্সি নোট ৭-এর উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার খবরটি আমরা নিশ্চিৎ করছি।’

বস্তুত এই ঘোষণার ফলে প্রযুক্তিবিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্যের শ্রেণিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটির সর্বাধুনিক উপহারের অকালমৃত্যু ঘটল।

চলতি বছর ২ অগাস্ট উন্মোচন আর ১৯ অগাস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া এই ফ্ল্যাগশিপ হ্যান্ডসেট নিয়ে শুরু থেকেই নানা বিপত্তির মুখে পড়ে দক্ষিণ কোরীয় এই ইলেকট্রনিক জায়ান্ট। স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষস্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অ্যাপলের আইফোন ৭-এর সঙ্গে লড়তে এই ফ্ল্যাগশিপ হ্যান্ডসেটই ছিল একমাত্র হাতিয়ার। ২০১৫ সালে বাজারে ছাড়া আগের সংস্করণগুলো বিক্রির সংখ্যাকে নোট ৭ ছাড়িয়ে যাবার আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ব্যবসায়ের প্রধান কোহ ডং-জিন।

চালানে বিলম্ব হওয়ার মাধ্যমে শুরু এই বিপত্তির। বাজারে আসার পর নতুন সব ফিচার দিয়ে আলোচক- সমালোচকদের আলোচনা গরম করার আগেই চলে আসে এই স্মার্টফোন ব্যাটারি থেকে আগুন লাগা আর বিস্ফোরণের অভিযোগ। অভিযোগের সংখ্যা যখন বাড়ছে তখন চীন ছাড়া সারা বিশ্বে বাজারে আসে ২৫ লাখ নোট ৭ ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এই ফোনের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে বড় বড় সব এয়ারলাইনও।

কিছুদিন যেতে না যেতেই অভিযোগ আসে চীন থেকেও। প্রতিষ্ঠানের দাবি ছিল চীনের আলাদা ব্যাটারি ব্যবহারের ফলে কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি চীনের গ্রাহকদের প্রতি 'বৈষম্য' করছে বলেও স্বর ওঠে বলে জানা যায় রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

গ্রাহকদের নানা আশ্বাস দিয়ে আবারও আগের নোট ৭ হ্যান্ডসেটগুলো বদলে বাজারে "পুরোপুরি নিরাপদ" নোট ৭-এর চালান দেয় স্যামসাং। সেই বদলে দেওয়া এই হ্যান্ডসেটেও দেখা যায় একই বিপত্তি। এবার আগুন ধরে প্লেনে থাকা "পুরোপুরি নিরাপদ" এক নোট ৭-এই, প্লেনের যাত্রা পিছিয়ে যায়। বড় বড় এয়ারলাইনে নোট ৭ নিষেধাজ্ঞার পুনরাবৃত্তিও বাদ যায় না। একে একে বড় একাধিক টেলিযোগাযোগ অপারেটরও এই হ্যান্ডসেটগুলো বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এমনকি ভিডিও গেইম জিটিএ ৫-এও এই হ্যান্ডসেট-কে বোমা হিসেবে দেখিয়েও করা হয় তামাশা।

শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের এই হ্যান্ডসেট বন্ধ রাখতে আহ্বান জানায় খোদ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিই। স্যামসাংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “গ্রাহকদের নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী আমাদের সব বিক্রেতাকে গ্যালাক্সি নোট ৭ বিক্রি ও বদলে দেওয়া বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে।”

গ্রাহকদের উদ্দেশে স্যামসাং বলেছে, “যাদের কাছে গ্যালাক্সি নোট ৭ এর আসল কিংবা বদলে দেওয়া ফোন রয়েছে, তাদেরকে সেগুলো বন্ধ রাখতে এবং ব্যবহার না করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।” ওই বিবৃতির পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে এটিঅ্যান্ডটি ও টি-মোবাইল গ্যালাক্সি নোট সিরিজের এ ফোন বিক্রি কিংবা বদলে দেওয়া বন্ধের ঘোষণা দেয়। যুক্তরাজ্যেও বদলে দেওয়া বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয় ভোডাফোন ও ইই- এর পক্ষ থেকে।

এক পর্যায়ে উৎপাদন স্থগিত করার ঘোষণা দেয় স্যামসাং। "এসব ঘটনা মূলত 'নোট ৭ ব্র্যান্ড নাম'- কে হত্যা করেছে। কে জানে তারা আবার এটি পুনরায় চালু করতে পারবে কিনা", বলেন চার্টার ইকুইটি রিসার্চ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডওয়ার্ড স্নাইডার।

এই খবরের রেশ শেষ না হতেই প্রতিষ্ঠানটি চিরতরে এই স্মার্টফোন তৈরি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিল।

এর মধ্যে মঙ্গলবার দিনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লেনদেনের হিসাবে দেখা যায় বিনিয়োগকারীরা ১৪.৭ ট্রিলিয়ন ইউরো ওন সরিয়ে নেওয়ার পর স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স-এর বাজারমূল্য সাত শতাংশের মতো কমে গেছে।

১০ অক্টোবর এক ধাক্কায় অ্যাপলের শেয়ার মূল্য ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।  স্যামসাংয়ের দুর্ভাগ্যেই অ্যাপলের শেয়ার মূল্য দ্রুত বাড়তে দেখা গেছে বলেও মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।

"আমার বিশ্বাস নোট ৭ সংক্রান্ত ঘটনাটি অ্যাপলের শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করবে"- এমনটাই মত ক্রেডিট সুইস-এর বিশ্লেষক কুলবিন্দার গারচা-এর।

আইডিসি-এর তথ্যমতে বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের মোট শেয়ার ২৩ শতাংশ। এর পরেই ১২ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে অ্যাপল।