'পতাকা': বাংলা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রোগ্রামিং। উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরও খেলার ছলে প্রোগ্রামিং ধারণা দেওয়ার নজির রয়েছে।

তাহমিন আয়শা মুর্শেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2016, 02:53 PM
Updated : 24 August 2016, 07:34 AM

বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তর-এ আনা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নামের একটি বই। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ের মৌলিক ধারণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা যখন নিজের মায়ের ভাষায় খেলতে খেলতে প্রোগ্রামিংয়ে হাত পাকাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই এটি বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাথায় ঢুকছে না কিছুই, লক্ষ্য শুধুই পরীক্ষার ফল, আর সেজন্য চলছে না বুঝেই মুখস্তের চেষ্টা। কিন্তু এর মূল কারণ কী? "মূল কারণ হচ্ছে ভাষা সমস্যা"- এমনটাই ভাষ্য ‘নবীনদের জন্য প্রথমবারের মতো বাংলায় তৈরি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ পতাকা’-এর নির্মাতা দল-এর দলনেতা ইকরাম হোসেনের। 

সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে যোগ দেন নির্মাতারা। দলের সদস্যরা হলেন ইকরাম হোসেন, ওসমান গণি নাহিদ আর রাকিব হাসান অমিয়। 

কয়েক বছর ধরে স্কুল-কলেজের সিলেবাসে নতুন যোগ হওয়া আইসিটি (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনলজি) নামের নতুন বিষয় যোগ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে আলোচনার সূত্রপাত করেন ইকরাম হোসেন। তিনি বলেন, "একদম নতুনদের কাছে কোডিং জিনিসটি কঠিন বা ঘোলাটে লাগতেই পারে। আইসিটি বিষয়টিতে কোডিংয়ের কিছু জিনিস রয়েছে, যা প্রথমবারের মতো অনেক ছাত্রছাত্রী সহজে নিতে পারে না। নাম্বারের জন্য হয়ত মুখস্ত করে যায় পুরোটাই কিন্তু কোডিংয়ের আসল মজাটাই তারা পায় না।" এর মূল কারণ হিসেবে উপযুক্ত 'সহযোগিতার' অভাবকেই চিহ্নিত করেন তিনি। 

আড্ডার ফাঁকে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন তাদের নতুন এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের সঙ্গে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া এর বেটা সংস্করণের পরিচয় তাদের ভাষায় ছিল অনেকটা এমন- "পতাকা কোডের প্রতিটি লাইন হবে সম্পূর্ন বাংলায়, মোটামুটি দৈনন্দিন ব্যবহৃত একটি বাক্যের মত। কোড লিখার জন্য থাকছে কোড হাইলাইটিংসহ একটি চমৎকার কোড এডিটর। আপনার চিন্তা চেতনাকে প্রোগ্রামিং রুপ দেওয়া এবং সেটাকে বাংলায় লিখার জন্যে পতাকায় যে কোন ইউনিকোড টুল (অভ্র /ইউনিবিজয়) ব্যবহার করতে পারবেন। "

"অভ্র/বিজয় পিসিতে ইনস্টল না থাকলেও সমস্যা নেই, এডিটর এ বিল্ট-ইন ফনেটিক বাংলা (অভ্র) লেখার সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া এডিটরের ডানে থাকা কিওয়ার্ডগুলো ক্লিক করলেই তা ইনডেশনসহ অটো-টাইপ হয়ে যাবে, ফলে সিনট্যাক্স ভুলে যাওয়ার চিন্তা নেই", মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে ইকরামের কথার সঙ্গে আরও যুক্ত করেন আরেক সদস্য অমিয়।  

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সফটওয়্যার প্রকৌশল পড়াশুনা শেষে এখন দেশের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন আরেক সদস্য ওসমান গণি নাহিদ। দলনেতার সঙ্গে সায় দিয়ে তিনি বলেন, "আমাদের কাজের লক্ষ্যই ছিল নিজেদের মাতৃভাষায় নতুনদের সহজে প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পরিচিত করে দেওয়া।" পুরো কাজ সম্পন্ন করতে তাদের লেগেছে ছয় মাস। এর কেবল অনলাইন সংস্করণ হিসেবে চালু করা হয়েছে আপাতত। খুব শীঘ্রই তারা এর ডেস্কটপ সংস্করণ আর মোবাইল অ্যাপ হিসেবেও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন বলে আশা করছেন।

প্রথম এই বাংলা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে আরও উন্নত করার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কি করবেন?" -প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে ইকরাম জানান, "সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একে আরও সমৃদ্ধ করতে চাই আমরা। আর তাই অনলাইনে 'ওপেন সোর্স' হিসেবেই রাখা হচ্ছে 'পতাকা' কে।" এ ছাড়াও এর সঙ্গে দেওয়া গেইমিংয়ের নতুন কিছু লেভেল যোগ করবেন তারা, যার মাধ্যমে ছোটরাও খেলতে খেলতে পরিচিত হতে পারবে কোডিংয়ের নতুন এই জগতে।

নিজেদের এই কাজ একেবারেই অলাভজনক এবং বিজ্ঞাপনমুক্ত বলে দাবি করেন তারা। "তাহলে বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরির জন্য তাদের উদ্দেশ্য কি?" -এমন প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত নাহিদ। তার থেকে অনেকটা ফ্লোর কেড়ে নিয়ে সামান্য হেসে স্পষ্ট ভাষায় ইকরাম বলেন, "প্রথমবারের মতো বাংলা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরির 'কৃতিত্ব' টুকুই চাই আমরা।"

১৬ ডিসেম্বর 'পতাকা' এর মূল সংস্করণ মুক্তি দিতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। নতুন এই বাংলা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ নবীনদের জন্য ভাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে পারবে বলে বিশ্বাস করছেন তরুণ প্রকৌশলী এই দলটি। 

অমিয় ইউনিভার্সিটি অফ কার্ডিফ থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এবং ইকরাম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সফটওয়্যার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। দুইজনই বর্তমানে আলাদা আলাদা দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইটি বিভাগে কাজ করছেন।