দেশে আউটসোর্সিংয়ের নতুন পথ ‘গুগল গ্লাস’

নিছক আনন্দ লাভ কিংবা সখের ইচ্ছেপূরণে ‘গুগল গ্লাস’ নামের যে চশমা বাজারে এসেছিল, তা এখন হয়ে উঠছে হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যম।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2016, 03:01 PM
Updated : 30 July 2016, 03:01 PM

যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে রোগী পর্যবেক্ষণ, রোগের বর্ণনা সংরক্ষণ (মেডিক্যাল হিস্ট্রি) ও অন্যান্য কাজে এখন এই বিশেষ প্রযুক্তির চশমাটির ব্যবহার শুরু হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে দূরের কোনো স্থানে বসে ডাক্তার-রোগীর কথপোকথন থেকে প্রয়োজনীয় অংশের লিখিত ডকুমেন্ট তৈরি করার কাজ পাচ্ছেন অনেকে।

গুগল গ্লাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করার কাজটি করছে বাংলাদেশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অগমেডিক্স। সম্প্রতি ঢাকায় দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বিপিও সম্মেলনে বিদেশে কর্মসংস্থানের নতুন এই উদ্যোগটি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম ব্যবস্থাপক মেহেদী জুলফিকার।

মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গুগল গ্লাসকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত করার অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি বাংলাদেশেরই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অগমেডিক্স নির্মাণ করেছে। আর এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কিভাবে তৈরি হলো সেই সুযোগ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে তার অসুস্থতার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন। গুগল গ্লাস ও স্কাইপ সংযোগের মাধ্যমে সেই কথা ও ছবি চলে যায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা আমাদের কর্মীদের কাছে। তারা একটি লিখিত মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ইমেইল করেন। এই হলো নতুন কাজের ধরন।”

যুক্তরাষ্ট্রেন নতুন স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী প্রতিজন রোগী চিকিৎসকের কাছে গেলে তার প্রেসক্রিপশন তৈরির পাশাপাশি রোগের একটি বিস্তারিত লিখিত প্রতিবেদন তৈরি করে দিতে হয় ওই চিকিৎসককে। এর ফলে রোগী অন্য কোনো রাজ্যে, অন্য কোনো হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে গেলেও আগের সমস্যাগুলো সহজে জানা যায়।

মেহেদী বলেন, অগমেডিক্সের গুগল গ্লাস সেবা চালুর আগে এতদিন ডাক্তাররা নিজেরাই এই লেখালেখির কাজটি করতেন। অথবা তাদের পাশে আরেকজন লোক বসিয়ে লেখানোর ব্যবস্থা করা হত। এতে একদিকে ডাক্তারের সময়ে যেমন ব্যয় হত, অন্যদিকে খরচও বাড়ত।

অগমেডিক্সের মানব সম্পদ কর্মকর্তা মিনারুল ইসলাম জানান, গত দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দেড়শ ও ভারতে প্রায় দুইশ তরুণ-তরুণী গুগল গ্লাসের এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আউটসোর্সিং করার সুযোগ পাচ্ছে। তারা ইংরেজি লিসেনিংয়ে যেমন দক্ষ তেমনি প্রতি মিনিটে ৬০টিরও বেশি শব্দ লিখার মতো দক্ষতা রয়েছে তাদের।

দেশের কোনো তরুণ-তরুণী এই কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সরকারের কাছে ২০ থেকে ২৫ হাজার দক্ষ লোকের চাহিদা দিয়েছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা রাখি।”

যুক্তরাষ্ট্রের সাটার হেলথ, ডিগনিটি হেলথ, ক্যাথলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভস (সিএইচআই) এবং ট্রাই হেলথ ইনকর্পোরেশনসহ মোট পাঁচটি শীর্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে অগমেডিক্স। ধীরে ধীরে কাজের পরিধি আরও বাড়ানো হচ্ছে।

গুগল গ্লাসে শক্তিশালী ক্যামেরার পাশাপাশি রয়েছে ভয়েস রেকর্ডের সুযোগ। এ ছাড়া এর চাটপ্যাড অপশনের কারণে পরিচালনা প্রক্রিয়াও ‘অত্যন্ত সহজ’। রেকর্ডিং অপশনে ভয়েস সিগনালের মাধ্যমে অপশনগুলো পরিচালনা করা যায়। ফলে তথ্য ও প্রয়োজনীয় ছবি-ভিডিওর সরাসরি সম্প্রচারের জন্য ভালো একটি মাধ্যম গুলগ গ্লাস।