ফেইসবুকের সৌরচালিত প্লেন নিয়ে জাকারবার্গ

চলতি বছর ২৮ জুন সফলভাবে নিজেদের প্রথম সৌরচালিত মনুষ্যবিহীন প্লেন উড়িয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যমে ফেইসবুক, নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে এমনটা জানান প্রতিষ্ঠান প্রধান মার্ক জাকারবার্গ।

রিয়াদ মোর্শেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 11:53 AM
Updated : 23 July 2016, 11:53 AM

২১ জুলাই ফেইসবুকে ওই পোস্ট-এর মাধ্যমে অ্যাকুইলা নামের নতুন প্লেন-এর উড্ডয়ন সাফল্য বর্নণা করেন মার্ক। এই প্লেন সৌরশক্তিতে চালে এবং এটি মনুষ্যবিহীন প্লেনগুলোর সর্বোচ্চ ভ্রমণের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলে। এই প্লেনটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে- পৃথিবীর প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেট সরবরাহ করা।

তিনি বলেন, "অ্যারিজোনা'র ইউমা এলাকায় সন্ধ্যার আগে প্লেনটির যাত্রা শুরু হয়। আমাদের মূল অভিযান ছিল প্লেনটিকে আধাঘণ্টা উড়ানো, কিন্তু সব কিছু এত ঠিকঠাকভাবে ছিল যে, আমরা একে ৯৬ মিনিট উপরে রাখার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা আমাদের মডেল আর এয়ারক্রাফট কাঠামো নিয়ে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছি-- আর দুই বছর কাজের পর, অ্যাকুইলা-কে সত্যিই মাটির উপড়ে উঠতে দেখা ছিল আবেগময়।"

জাকারবার্গ ব্যাখা করেন, তারা যে মাইলফলক-কে লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছেন, আর এজন্য তাদের এখনও অনেক কাজ করতে হবে। তিনি জানান, তাদের লক্ষ্য এই প্লেনকে ৬০ ফুট উড়ানো, এক মাস পর্যন্ত একে ভাসমান রাখা এবং লেজার এর সঙ্গে এর যোগাযোগ ঠিক রাখা, যা আগে কখনও হয়নি।

মার্ক জানান, এই ধরনের লক্ষ্যকে সফল করতে তাদের প্রকৌশলগত অনেক সমস্যার সমাধান করতে হবে। এই সমস্যাগুলো নিয়ে বর্তমানে কাজ করছেন তারা, কয়কটির কথা উল্লেখও করেছেন তিনি। 

একটি সমস্যা হচ্ছে ওজন। প্লেন-এর একো ডানা বোয়িং ৭৩৭-এর ডানার চেয়েও চওড়া, কিন্তু একে বেশিক্ষণ উড়াতে হলে এর ওজন কমিয়ে আনতে হবে। এ কারণে এর বডি বানানো হয়েছে কার্বন ফাইবার দিয়ে যেন পুরো প্লেনের ওজন এক হাজার পাউন্ড-এর কম হয়। তারা একে আরও হালকা বানানোর চেষ্টা করছেন।

ক্ষমতা-- অ্যাকুইলা দিনের বেলা যে পরিমাণ সৌরশক্তি সংগ্রহ করবে তা এর প্রপেলার, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আলোক ব্যবস্থা, হিটার আর এভিওনিক্স পরিচালনায় যথেষ্ট হতে হবে। এ কারণে এতে ব্যবহার করতে হয় পাঁচ হাজার ওয়াট ক্ষমতা, যা প্রায় ৩টি হেয়ার ড্রায়ার চালনার শক্তির সমান। এ ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী ব্যবস্থা আনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাকারবার্গ। 

নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়েছেন জাকারবার্গ। তিনি জানান, অ্যাকুইলা অনেকাংশেই স্বনির্ভর কিন্তু এটি এখনও প্রায় এক ডজন প্রকৌশলী, পাইলট আর যন্ত্রকারিগর নিয়ে বানানো একটি 'গ্রাউন্ড ক্রু'-এর উপর নির্ভরশীল। এই দলটি নিচ থেকে প্লেনটি পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ করে। তারা এয়ারক্রাফটটির দিক নির্দেশনা, উচ্চতা, বাতাসে এর গতি নিয়ন্ত্রণ করেন বা প্লেনটিকে একটি জিপিএসভিত্তিক রুট ঠিক করে দেন। ভূমি ত্যাগ এবং ভূমিতে নেমে আসার কাজ একাই করতে পারে প্লেনটি।

গতি নিয়ে জাকারবার্গ বলেন, "আপনি যখন অ্যাকুইলা উড়তে দেখবেন, সবচেয়ে আশ্চর্জজনক যা দেখবেন, তা হচ্ছে এটি কত ধীরে উড়ে। এটি উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে কম শক্তি ব্যবহারের জন্য, অ্যাকুইলা-কে যত ধীরে সম্ভব চলতে হবে। উপরের উচ্চতায় যেখানে বায়ু হালকা হয়ে আসে, তখন আমরা আরও একটু দ্রুত হতে সক্ষম হব-- ঘণ্টায় প্রায় ৮০ মাইল।" 

উড্ডয়ন, উড়ার সময় আর নামার জন্য অ্যাকুইলা-এর ডানা আর প্রপেলারগুলো উচু, এবং শীতল উচ্চতায় আর নিচু ও উষ্ণ উচ্চতায়, দুই ক্ষেত্রেই চলতে সক্ষম হতে হয়। এতে কী পরিমাণ শক্তি খরচ হয় তা বের করতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান জাকারবার্গ।   

অ্যাকুইলা ‘কমিউনিকেশনস পেলোড’ নামের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যার মাধ্যমে বর্তমান প্রযুক্তির থেকে ১০ গুণ বেশি দ্রুত ডেটা আদানপ্রদান করতে পারবে।