কিন্তু, ট্রাম্প সমর্থকরা তার ব্যাপারে যা বলেন আর তার ভাষণ শোনার সময় যা ভাবেন, তা অধিকাংশ সময়ই এক রকম হয় না- ভাষ্য সিএনএন-এর।
মানুষের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর রাজনৈতিক প্রার্থীদের প্রভাব কেমন তা নিয়ে পরীক্ষা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডভিত্তিক স্টার্টআপ ‘স্পার্ক এক্সপেরিয়েন্স’।
এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মোট ৩০ জন, যাদের মধ্যে ১৫ জন ট্রাম্প সমর্থক এবং ১৫ জন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন-এর সমর্থক।
স্পার্ক ব্রেইনওয়েভ (মস্তিষ্ক উদ্দীপনা) ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে। কারিগরি প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ, ত্বক এবং ঘাম, মুখের নানা প্রতিক্রিয়া, হৃদস্পন্দন, আর চোখের ছোটখাট নড়াচড়া পরিমাপ করা হয়।
স্পার্ক-এর নিজস্ব অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এসব তথ্যের সমন্বয় করা হয়, যা দর্শকের মনযোগ ব্যাপ্তি এবং আবেগী প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে।
স্পার্ক এক্সপেরিয়েন্স-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী স্পেন্সার গেরল-এর মতে, প্রশ্নের উত্তরে কিছু অংশগ্রহণকারী ট্রাম্পের ব্যপারে গুরুত্বহীন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
সিএনএন-কে গেরল জানান, অংশগ্রহণকারীরা হয়তো বলে থাকেন "তিনি সেখানে যা বলেছেন তা আমি সমর্থন করতে পারছি না, এখানটায় তিনি কিছুটা আলোচনার বাইরে ছিলেন।"
গেরলের মতে, তাদের মানসিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে "ভিন্ন কিছু" দেখা যায়। যখন ট্রাম্প মুসলমানদের ব্যপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তখন ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
গেরল বলেন, "একই ভীতিকর বক্তব্যে ক্লিনটনের সমর্থকদের মাঝে তেমন শঙ্কা প্রকাশিত হতে দেখা যায় না।"
এই গবেষণায় উঠে আসে কীভাবে একই ক্লিপ রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ভিন্ন আলোড়ন সৃষ্টি করে।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়াও চেতনাময় গল্পগুলো সমর্থকদের সংযুক্ত রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্পের মেয়ে ইভানাকা, তার বাবার সম্পর্কে ভালোবেসে কথা বলছে এমন এক বিজ্ঞাপনী ফিচার ডেমোক্রেট দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিবাচক সাড়া পায়। কিন্তু যখন দর্শকদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বাবা, তখন সব আবেগ যেন পালকের মতো উড়ে চলে যায়।
মার্চ মাসে, সিএনএন-এর এক প্রতিবেদক, ব্রায়ান স্টেল্টার জিওপি বিতর্ক দেখা ১২জন দর্শকের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ নিয়ে এক প্রতিবেদন তৈরি করেন। এসবিবি রিসার্চ গ্রুপের ছোট এই গবেষণায় দেখা যায় জিওপি প্রার্থীদের মধ্যে ট্রাম্প সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
ডেমোক্রেটিক হিলারি ক্লিনটন বা বার্নি স্যান্ডার্সের মতো মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের কীভাবে ট্রাম্প সহজে একত্রিত করেন তা মোটেও বোধগম্য ছিল না।
স্পার্কের আবিষ্কার উন্মোচন করে যে, অংশগ্রহণকারীদের কেউ ট্রাম্প বা তার নীতির অনুরাগী না হলেও ট্রাম্প ঠিকই দর্শক মাত করে দিতে পারেন। আকর্ষণ মাত্রা নির্ণয়ের ১০ মাত্রার একটি স্কেলে ট্রাম্পের স্কোর ছিল ৭.৫ । ক্লিনটনের স্কোর ছিল ৪-৪.৫-এর মাঝে আর বার্নি স্যান্ডার্সের স্কোর ছিল ক্লিনটন আর ট্রাম্পের মাঝামাঝি ।
গেরল বলেন, “এটা অনেকটাই প্রার্থীর বাকপটুতার উপর নির্ভর করে।“
ট্রাম্প আর স্যান্ডার্স পুনরাবৃত্তিমূলক ছন্দ আর জোর দেওয়া শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। স্যান্ডার্স-এর স্বরভঙ্গি বেশ শক্তিশালী। তিনি থেমে থেমে প্রতিটি কথায় স্পষ্ট জোর দিয়ে কথা বলেন। অন্যদিকে ক্লিনটন জটিল শব্দ, দীর্ঘ বাক্য আর খুটিনাটি নীতি বেশি ব্যবহার করেন।
গেরল-এর মতে, এতে মানুষ দ্রুত বিরক্ত হয়। তিনি জানান, স্পার্ক মানুষের ব্রেইনওয়েভ ব্যবহার করে দুই বছর যাবৎ এমন পরীক্ষা চালিয়ে আসছে। এটি ‘অ্যাংরি বার্ডস’-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘রোভিও’-এর জন্য কোন বিজ্ঞাপণ কাঠামো বেশি গ্রহণযোগ্য তাও পরীক্ষা করেছিল।এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চোখের নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করে অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইট নিখুতকরণে সাহায্য করেছে।
গেরল জানান, কীভাবে ভোটাররা আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীদের দেখছে তা বোঝার জন্য স্পার্ক এই ব্রেইনওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গেরল আরো বলেন, "কিছু কারণে মানুষজন ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক আচরণ প্রত্যাশিত হিসেবে ধরে নেয়, যা অন্যান্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মানতে পারে না।" তার মতে, অনেক ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পের আগ্রহের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে শঙ্কা প্রদর্শন করলেও মানসিক প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায় যে তারা আসলে পুরো ব্যাপারে আমোদিত হচ্ছে।
গেরলের ভাষ্যমতে, "ট্রাম্প তার আশেপাশে সার্কাসের মতো হালকা পরিবেশ বজায় রাখেন বলেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে।"