বিটকয়েনের উদ্ভাবক অস্ট্রেলীয়?

নিজেকে ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের স্রষ্টা সাতোশি নাকামতো বলে দাবি করেছেন অস্ট্রেলীয় উদ্যোক্তা ক্রেইগ রাইট। আর বিটকয়েন ফাউন্ডেশন-এর প্রধান গবেষক গ্যাভিন অ্যান্ড্রেসেন এই দাবিকে সত্য বলে অভিমত দিয়েছেন।

ইফতেখার আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2016, 10:17 AM
Updated : 3 May 2016, 10:17 AM

ক্রিপ্টোকারেন্সি বলতে একটি ডিজিটলা মুদ্রা ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে মুদ্রা লেনদেনে এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

২০০৮ সালে প্রথম সাতোশি নাকামতো নামে অজ্ঞাত কেউ বিটকয়েন উদ্ভাবন করেন। ২০০৯ সালে এটি ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার হিসেবে বের করার পর থেকে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে এই ভার্চুয়াল মুদ্রা। এই আলোচনায় ব্যাংকিং খাতের লেনদেনে নিরাপত্তা থেকে শুরু করে হ্যাকারদের মুক্তিপণ দাবির মতো নানা প্রসঙ্গ স্থান পায়।

অ্যান্ড্রেসেন জানান, তিনি মি. রাইটের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করেন এবং রাইট অনুষ্ঠানে সাতোশি নাকামতো যে আসলে তারই ছদ্মনাম - এর সপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, "তিনি আমার উপস্থিতিতেই সর্বপ্রথম বিটকয়েন ব্লক - ব্লক ওয়ান থেকে ব্যক্তিগত কি ব্যবহার করে এমন একটি কম্পিউটারে প্রবেশ করেন, যাতে কোনোরকম বিকৃতি ঘটানো হয়নি বলে আমি বিশ্বাস করি।" তবে, "এমন একটি ব্যাপার শতভাগ প্রমাণ করা অসম্ভব" বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রতিটি কি প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ ভিন্ন একেকটি ডিজিটাল কোড, যা নির্দিষ্ট কিছু বিটকয়েনে যুক্ত থাকে। তবে, নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত কনসেনসাস-২০১৬ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ বিবিসি-কে জানান, এই দাবি বিশ্বাস করার আগে তারা আরও প্রমাণ দেখতে চান।

বিবিসি জানায়, রাইটের এ দাবি নিয়ে সন্দেহের পেছনে অবশ্য তার ব্লগে প্রকাশিত ক্রিপ্টোগ্রাফিক কি যাচাই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রক্রিয়ার জটিল সব ধাপ এবং তথ্যাবলী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড্যান কামিনস্কি জানান, এই প্রক্রিয়া যাচাই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে "মারাত্মকভাবে প্রতিরোধী"।

অন্যদিকে, রাইট কেন এমন একটি প্রক্রিয়াকে প্রমাণ হিসেবে বেছে নিলেন, তা ব্যাখ্যা করতে মি. অ্যান্ড্রেসেন অপারগতা প্রকাশ করেন।

কনসেনসাস সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ কোনোরকম রাখঢাক না রেখেই এ ঘোষণায় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ব্লকচেইন প্রতিষ্ঠান ইথিরিয়াম-এর ভিটালিক বুটারিন জানান, মি. রাইটের এমন ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণার কারণেই এর সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্নের উদয় হয়েছে।

ক্রিপ্টোকারেন্সিনির্ভর ব্যবসায়িক অ্যাপ শেইপশিফট-এর প্রতিষ্ঠাতা এরিক ভুরহিস বলেন, "আমি সাধারণত গ্যাভিন (অ্যান্ড্রেসেন)-এর মতামতে বিশ্বাস করি, তাই এ ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে চাইলেও আমি এখনও পুরোপুরিভাবে সন্দেহমুক্ত নই।"

আবার অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানই মি. রাইটের এই দাবিকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। বিটকয়েন কাঠামোনির্ভর প্রতিষ্ঠান গ্যাপ ৬০০-এর ড্যানিয়েল লিপসিজ বলেন, "সাতোশি নাকামতো-কে পাওয়া গেলে তা ভালো সংবাদ হবে বলে আমি মনে করি।"

তিনি জানান, মি. রাইটের পক্ষ থেকে জনসম্মুখে প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে তা ভালোই হবে, তবে তিনি মি. অ্যান্ড্রেসেনের বক্তব্যে বিশ্বাস রাখতে রাজি আছেন।

এ প্রসংগে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মতামত ব্যক্ত করেন লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিকস-এর অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ড. গ্যারিক হাইলম্যান। তিনি বলেন, "ক্রেইগ রাইট-ই সাতোশি কিনা, নাকি সে অন্য কেউ, তা ইদানিং বিটকয়েনের সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা বর্তমানে সাতোশি-পরবর্তী বিশ্বে বাস করছি বলে কেউ কেউ মতামত দিতে পারেন। তবে, আমি মনে করি, সাতোশি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাদের অবদানকে তুচ্ছ করা উচিত নয়।"