জিকা ভাইরাসের কার্যপ্রক্রিয়া আবিষ্কার

মানবদেহে জিকা ভাইরাসের প্রভাবে মাইক্রোসেফালি রোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।

ইফতেখার আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2016, 12:26 PM
Updated : 24 April 2016, 12:26 PM

মাইক্রোসেফালি মানুষের মাথা ও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক গঠন ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। এই রোগে মস্তিষ্কের বাইরের কর্টেক্স স্তরের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। কর্টেক্স-এর কাজ হলো মানুষের মনোযোগ, স্মৃতি, উপলব্ধি ও চেতনাগত কর্মকাণ্ডে সহায়তা করা।

স্কাইনিউজ জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্রাকৃতির মস্তিষ্ক তৈরি করেছেন। পরবর্তীতে এতে জিকা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটানো হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, শিশু জন্ম নেওয়ার আগেই জিকা ভাইরাস শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে দায়ী কোষগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে এদের "ভাইরাস ফ্যাক্টরি"তে পরিণত করে। ফলে শিশুর মস্তিষ্ক সংকুচিত হয়ে পড়ে।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি, নিউরোসায়েন্স এবং মনোরোগ ও আচরণগত বিজ্ঞানের অধ্যাপক গুও-লি মিং বলেন, "যদি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে সংক্রমণ ঘটে, তবে এ ভাইরাস প্রধানত মিনি-ব্রেইনগুলোর নিউরাল প্রোজেনিটর কোষগুলোকেই আক্রমণ করে, এবং এর প্রভাব হয় খুবই গুরুতর। কিছু সময় পর মিনি-ব্রেইনগুলোর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং তা টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। পরবর্তী একটি ধাপে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময়কালের অনুকরণে জিকা প্রোজেনিটর কোষগুলোতে বাছাইয়ের ভিত্তিতে আক্রমণ চালায়। তবে তা কিছু স্নায়ুকোষেও প্রভাব ফেলে।"

মিং-এর স্বামী ও সহ গবেষক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি ও নিউরোসায়েন্স বিষয়ের অধ্যাপক হংজুন সং জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য নিয়ে গঠিত তাদের গবেষক দলটি থ্রিডি প্রিন্টিং ফাইলগুলো প্রকাশ করবে। এতে মিনি-ব্রেইন তৈরিতে প্রয়োজনীয় বায়োরিয়্যাক্টর তৈরিতে অন্যান্য গবেষকরা সহায়তা পাবেন।

তিনি আরও জানান, পার্কিনসন্স রোগে আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কের মৃত স্নায়ুকোষ প্রতিস্থাপনের জন্য ‘ডোপামিনার্জিক স্নায়ুকোষ’ সৃষ্টিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। একে "স্টেম কোষবিষয়ক জীববিদ্যায় পরবর্তী সীমারেখা" বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত বছর জিকা ভাইরাসের ব্যাপক প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ আমেরিকায় হাজার হাজার শিশু অপূর্ণাংগ মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকা ভাইরাসকে বিশ্বের জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জরুরি ঝুঁকি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিজ্ঞানীরা এ রোগের সমাধান আবিষ্কারে পুরোদমে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।