এক্সবক্সের দশক পাড়ি

২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর অভিষেকের পর পুরো এক দশক পাড়ি দিল টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের গেইমিং কনসোল এক্সবক্স ৩৬০। ভিডিও গেইম খাতে বড় বড় গেইম আনার পাশাপাশি গেইমিং কনসোল যে শুধু গেইম খেলার জন্যই নয় মানুষের কাছে সেটাও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছে এটি।

আজমল বশির শিহাববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 10:43 AM
Updated : 23 Nov 2015, 10:43 AM

কিন্তু শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না কনসোলটির জন্য। কোনো ট্রেড শো বা সংবাদ সম্মেলন না করে এমটিভির এক অনুষ্ঠানে এটি উন্মোচন করেছিল মাইক্রোসফট। ২০০৫ সালের মান অনুযায়ী এটি খুবই অনুন্নত ছিল বলেই জানিয়েছে ইয়াহু টেক। বের করার সময় এর লাইনআপ ছিল ‘অনুপ্রেরণাহীন’। আর ‘রেড রিংস অফ ডেথ’ নামে কুখ্যাত তিনটি লাল ফ্ল্যাশলাইট ত্রুটির কারণে হাজার হাজার কনসোল অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে বিনামূল্যে ওইসব কনসোল মেরামত করে দিতে হয় মাইক্রোসফটকে।

সেসময় মাইক্রোসফটের এক্সবক্স বিভাগের পরিচালক পিটার মুরে এ বিষয়ে বলেন, “আমার অর্থবিষয়ক দলকে নিয়ে করা হিসাবে মোট খরচ ছিল ১শ’ ১৫ কোটি ডলার। আমি…… স্টিভের সামনে বসেছিলাম। যার জন্য আমি মরতেও পারি, কিন্তু তিনি একজন ভয় দেখানো মানুষ হতে পারেন।” স্টিভ বলতে তৎকালীন মাইক্রোসফট প্রধান স্টিভ বলমারকে বোঝানো হয়েছে মুরের বক্তব্যের করা হয়েছে।

সময়ের সঙ্গে উন্নতি হয় এক্সবক্সের। হেলো, গিয়ার্স অফ ওয়ার, ফেবল আর ফোরজা-এর মতো গেইম ফ্র্যাঞ্চাইজ দিয়ে গেইমিংয়েল জগতে নিজের অবস্থান গড়ে নেয় এক্সবক্স ৩৬০। সেই সঙ্গে কল অফ ডিউটি, গ্র্যান্ড থেফট অটোসহ ওই সময়কার বড় বড় গেইমগুলোর অনলাইনে পাওয়াতে থার্ড-পার্টি গেইম নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ শুরু করে মাইক্রোসফট। 

এক্সবক্সের সবচেয়ে বড় অবদানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে গেইম কেমন তার চেয়ে বেশি গেইম কীভাবে খেলা হবে তা নিয়ে কাজ করা। গেইমের অ্যাচিভমেন্টস, গেইমারস্কোর আর প্রয়োজনে পুরস্কার দেওয়ার ধারা চালু করে এটি, যা সনি আর অ্যাপলও অনুকরণ করেছিল।

এক্সবক্স লাইভ, এক্সবক্স ৩৬০-কে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে বলে মনে করেন অনেকেই। আনা হয় সহজেই অনলাইনে কনসোল সংযুক্ত করে বন্ধুদের গেইমে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইন গেইমিংয়ের সময় ভয়েস চ্যাটের সুবিধাও আনা হয়। 

আগে গেইমিং কনসোল শুধু গেইমারদের জন্যই ছিল। কিন্তু পরে ওই ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসে এক্সবক্স। শুধু গেইমিং নয়, পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও বিনোদনমাধ্যম হয়ে উঠে এটি। আর গেইমিং কনসোল যে শুধু গেইমের জন্যই নয়, এতে অন্যান্য বিনোদনের সুবিধাও থাকে, এ ধারারও প্রবর্তন ঘটে এর মাধ্যমে।

মুভি স্ট্রিমিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্সের সঙ্গে চুক্তি করে মাইক্রোসফট। এর ফলে এক্সবক্স লাইভ গ্রাহকরা বিনামূল্যে কনসোলটির মাধ্যমে মুভি দেখার সুযোগ পান। পরবর্তীতে হুলু, ইউটিউব, ইউএফসি আর এমএলবি ডটটিভিও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। একে একে এতে আনা হয় আনলিমিটেড মিউজিক স্ট্রিমিং সেবা, সেট-টপ বক্সের মতো নানা সুবিধা।

২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী এই কনসোল বিক্রির সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৪০ লাখ, যা ছিল কনসোলটিকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা গেইমিং সিস্টেমের তালিকায় ষষ্ঠস্থানে আনার জন্য যথেষ্ট। প্রথম না হলেও, ভিডিও গেইম খাতে মাইক্রোসফটকে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায় এই কনসোল।