মস্তিষ্কের ভাঁজে হ্যালুসিনেশনের আভাস

মানুষের মস্তিষ্কের ভাঁজের সঙ্গে দৃষ্টিভ্রমের সম্পর্ক খুঁজে পেয়ছেন বিজ্ঞানীরা। ১শ' ৫৩টি মস্তিষ্ক স্ক্যান করে গবেষণার পর দেখা যায়, মস্তিষ্কে সামনের অংশের ভাঁজ স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের দৃষ্টিভ্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত। দৃষ্টিভ্রম হয় এমন রোগীদের মস্তিষ্কের সামনের অংশের ভাঁজ স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় ছোট বলে জানান তারা।

আজমল বশির শিহাববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2015, 06:43 PM
Updated : 18 Nov 2015, 06:43 PM

এ বিষয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্তিষ্কের সামনের অংশ এমন একটি এলাকা যা বাস্তবে দেখা দৃশ্য আর কল্পনার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। গবেষণায় পাওয়া এমন তথ্য আগে থেকে রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। জন্মের ঠিক আগ মূহুর্তে মানুষের মস্তিষ্কে এই ভাঁজ দেখা যায়, বিজ্ঞানীদের ভাষায় যাকে বলে হয় প্যারাসিঙ্গুলেট সাকলাস বা সংক্ষেপে পিসিএস। এই ভাঁজের আকার ব্যাক্তিভেদে আলাদা হয়। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের স্নায়ুবিজ্ঞানী জন সিমন্স বলেন, "যদিও জন্মের সঙ্গে সঙ্গে এটি সম্পূর্ণ তৈরি হয় না, তবে এটি এমন এক অঞ্চল যাতে বিশেষভাবে লক্ষণীয় কোনো ভাঁজ থাকুক বা না থাকুক, অঞ্চলটি জন্মের সময়ই মস্তিষ্কে থাকে। যদি কেউ এই বিশেষ লক্ষণ নিয়ে জন্ম নেন যে তার এই ভাঁজ ছোট তবে জীবনের পরবর্তীতে তাদের দৃষ্টিভ্রমে ভোগার প্রবণতা থাকে।"

জন সিমন্স বলেন, স্কিৎজোফ্রেনিয়া একটি জটিল বিষয়। দৃষ্টিভ্রম এর একটি অন্যতম উপসর্গ মাত্র। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এটি তাদের অনিয়মিত কল্পনা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা গেছে।

১১৩ জন স্কিৎজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত মানুষ আর ৪০ জন স্বাভাবিক মানুষ, মোট ১শ' ৫৩ জনের মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান প্রতিবেদন সহ অস্ট্রেলিয়ান স্কিৎজোফ্রেনিয়া রিসার্চ ব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে এই গবেষণা চালান ড. সিমোন্স আর তার সহকর্মীরা।

"আমরা রোগীদের এমনভাবে আলাদা করেছি যাতে তাদের মধ্যে যতটা সম্ভব সরাসরি তুলনা করা যায়।" আলাদা করার বিষয়ে এমনটাই বলেন ড. সিমন্স। প্রত্যেকের বয়স, লিঙ্গ, ওষুধ এমনকি তারা বাহাতি না ডানহাতি তাও হিসাবে ধরা হয় বলে জানান তিনি। "তাদের মধ্যে এতটা মিল রেখে নেওয়া হয়েছে যে, তাদের মধ্যে শুধু একটাই পার্থক্য ছিল- এক দলের আগে স্কিৎজোফ্রেনিয়া ছিল, আরেক দলের ছিল না", বলেন তিনি।

আগের এক গবেষণায় তারা জানতেন ওই ভাঁজের দৈর্ঘ্য মানুষের 'বাস্তব পর্যবেক্ষণ'- এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে, তারা পিসিএসের পার্থক্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। আর এতে দেখা যায়, যারা দৃষ্টিভ্রমের ভুগছেন তাদের এ ভাঁজ দৃষ্টিভ্রম না থাকা রোগীদের চেয়ে ২ সে.মি. আর সুস্থ মানুষদের এ ভাঁজের চেয়ে ৩ সে.মি. ছোট। সেই সঙ্গে তারা জানান, এই দৈর্ঘ্য এক সে.মি. কমার সঙ্গে দৃষ্টিভ্রমের আশঙ্কা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।