মুক্তিপণে বিটকয়েন!

আগের দিনগুলোতে মুক্তিপণ বা চাঁদা আদায়ের মতো অবৈধ লেনদেনগুলো ব্রিফকেইসভর্তি চিহ্নছাড়া নোটের মাধ্যমেই করতে অভ্যস্ত ছিল অপরাধীরা। দিন বদলাচ্ছে আর বাড়ছে প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা। এখন আর ব্রিফকেইস নয়, ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন ব্যবহার করে কাজ সারছে তারা।

আজমল বশির শিহাববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2015, 11:15 AM
Updated : 27 July 2015, 11:15 AM

বর্তমানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন কম্পিউটার হ্যাক করে মূল্যবান ফাইল হাতিয়ে নিয়ে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ডাউন করে দিয়ে বিটকয়েনের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করে থাকে। অনেক সময় এই মুক্তিপণের পরিমাণ হয় ২০ হাজার ডলারেরও বেশি।

নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান সফোসের সূত্রমতে, একদল সাইবার অপরাধী বিটকয়েনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রনিবাসী আক্রান্তদের কাছ থেকে এক মাসেরও কম সময়ে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। সাইবার অপরাধীদের ওই দলটি রাশিয়া বা ইউক্রেইনভিত্তিক বলে ধারণা ব্রিটিশ এই প্রতিষ্ঠানটির।

সরকারী বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা না থাকায় আর সহজেই বাস্তব মুদ্রায় রূপান্তরযোগ্য হওয়ায়, বিটকয়েন অপরাধীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সহজেই অনলাইন বা বাস্তবে এক একটি বিটকয়েন প্রায় ২৯০ ডলার মূল্যে বিক্রি করা যায় বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। মার্কিন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান আরবার নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক কার্ট উইলসন বলেন, "বিটকয়েন অপরাধীদের খুবই পছন্দের"।

‘অনলাইন ড্রাগ বাজার’ বা  ‘সিল্ক রোড’-এর মতো সাইটে বিটকয়েন ব্যবহার করে হেরোইন বা কোকেইনের মতো মাদক কেনাবেচা হত। এ সাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর বিটকয়েনের গুরুত্ব কমতে শুরু করার কথা বলা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে দুই ব্যাক্তিকে আটক করার কথা জানায় এফবিআই। তারা জানায়, আটক দুই ব্যাক্তি কয়েন ডট এমএক্স নামের একটি সাইট চালাত। ওই সাইটে মুক্তিপণ হিসাবে পাওয়া অপরাধীদের বিটকয়েন কেনাবেচা হতো।

সাম্প্রতিক এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাইবার অপরাধীদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। আক্রান্ত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে প্রায় ১০ হাজার ডলারের মতো মুক্তিপণ চাওয়া হয়। আর এক্ষেত্রে কোনো আলোচনার সুযোগ দেয় না অপরাধীরা। অপরাধীদের পাঠানো এক মেইলে বলা ছিল, "আমাকে অগ্রাহ্য করবেন না, এর ফলে টাকার অংকটা বাড়বে। একবার পরিশোধ করলে আপনার সাইট সারাজীবনের জন্য আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে"।

ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে সহজেই শনাক্ত করার উপায় থাকে বলে অপরাধীরা এখন আর এভাবে লেনদেন করতে চায় না। অন্যদিকে, বিটকয়েনের মাধ্যমে খুব নিরাপদেই অপরাধীরা তাদের লেনদেন সারতে পারে। এক্ষেত্রে আক্রান্তদের টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো উপায়ই থাকে না।

২০০৯ সালে অনলাইনে লেনদেনের উপায় হিসেবে বিটকয়েন বের করা হয়। তখন নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের কাছেও সমাদৃত হয়েছিল এই ভার্চুয়াল মুদ্রা।