আসছে বাজেটেও পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দাবি

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে পুঁজিবাজারে আবারও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2017, 03:46 PM
Updated : 5 April 2017, 03:46 PM

এবিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে একটি আবেদন পেশ করেছেন সংগঠনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ।

এর একটি কপি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছেও পাঠানো হয়েছে ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের আগেও একই রকম প্রস্তাব রেখেছিল মার্চেন্ট ব্যাংকার্সের সংগঠন বিএমবিএ।

লিখিত বক্তব্যে বিএমবিএ সভাপতি সায়েদুর রহমান বলেন, “দেশের অর্থনীতিতে অনেক টাকা করের আওতার বাইরে রয়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থের মালিকরা উৎপাদনশীল খাতে এ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন না।

“এর ফলে এ টাকা দেশের অনুৎপাদিত খাতের পাশাপাশি অবৈধ কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাই রেগুলেটরি বডির কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই পুঁজিবাজারে এ অর্থ বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়াহোক।”

লিখিতপত্রে অনাদায়যোগ্য সুদের উপর কর ছাড় চাওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউজ নেগেটিভ ইক্যুইটিতে থাকা তাদের অ্যাকাউন্টগুলোর সুদ মওকুফ করেছে। তারপরও এ অ্যাকাউন্টগুলো আন রিয়েলাইজেবল (অনাদায়যোগ্য সুদ) রয়েছে। কিন্তু আন রিয়েলাইজেবল ইন্টারেস্টের ওপর কর দিতে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

একইভাবে সরকারের বিশেষ প্রণোদনার অর্থ থেকে দেওয়া গ্রাহকের সুদ মওকুফের টাকার ওপর কর দিতে চাপ দিচ্ছে এনবিআর।

তবে অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক সরকারের বিশেষ প্রণোদনার অর্থ নিলেও গ্রাহকের সুদ মওকুফ করেনি জানিয়ে এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বিএমবিএ সভাপতির ভাষ্য জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে সায়েদুর রহমান বলেন, “যদি কেউ সরকারের বিশেষ প্রণোদনার অর্থ নিয়েও সুদ মওকুফ না করে থাকে, তাহলে তাদের ব্যাপারে কতৃপক্ষের কাছে জানানো হোক; তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

“কিন্তু যারা নিয়ম অনুয়ায়ী চলেছে, নেগেটিভ ইক্যুইটিতে থাকা তাদের অ্যাকাউন্টগুলোর সুদ মওকুফ করেছে, তাদের পক্ষে অনাদায়যোগ্য সুদের উপর কর দেয়া সম্ভব না। এটা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য খুবই দরকার।”

বর্তমানে বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত নয় এমন সব কোম্পানির চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি কর-রেয়াত সুবিধা পায়।

এ সুবিধা ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার আহ্বান জানিয়ে বিএমবিএর লিখিতপত্রে বলা হয়, এতে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহ পাবে। এতে সরকার আরো বেশি রাজস্ব পাবে।

পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে একই কর হারে আনতে হবে।

বর্তমানে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো ১৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে জানিয়ে বিএমবিএ সভাপতি সায়েদুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউজকে দিতে হচ্ছে ৩৫ শতাংশ কর এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৩৭ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে। তাই সবার জন্য সমান অর্থাৎ ১৫ শতাংশ কর সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছি।”

এছাড়াও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সমান। তাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির চেয়ে ৪০ শতাংশ কম ভ্যাট দেওয়ার সুবিধা দিতে প্রস্তাব করে বিএমবিএস।

এর কারণ হিসেবে তাদের লিখিতপত্রে দাবি করা হয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অনেক বেশি স্বচ্ছ, তারা ভ্যাট ফাঁকি দিতে পারে না; অ-তালিকাভূক্ত কোম্পানি পারে ।

পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর ওপর যে ১০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন টেক্স রয়েছে, তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করে লিখিতপত্রে বলা হয়, এসব দাবি বাস্তবায়ন করলে পুঁজিবাজার উন্নত হবে এবং সরকারের সুনাম হবে।