এবার ব্রাজিলের সামনে মেক্সিকো বাধা

গত বছরের কনফেডারেশনস কাপে দেখা হয়েছিল দল দুটির। এবারের মতোই গ্রুপ পর্বে, এমনই দ্বিতীয় ম্যাচে। আর খেলাটি হয়েছিল এই ফোর্তালেজার আরেনা কাস্তেলাওতেই। বিশ্বকাপের মহড়ার মতো মূল পর্বেও অভিন্ন পরিস্থিতিতে অভিন্ন মাঠে দেখা হচ্ছে ব্রাজিল-মেক্সিকোর।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2014, 07:18 AM
Updated : 17 June 2014, 07:18 AM

বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত একটায় শুরু হওয়া ‘এ’ গ্রুপের দ্বৈরথের আগে দুই শিবিরের অবস্থা বেশ বিচিত্র! স্বস্তির সৌরভ যেমন বিলাচ্ছে সেখানে, সমান্তরালে উঁকি দিচ্ছে অস্বস্তির কাঁটাও!

এমনিতে ফুটবলীয় ধার-ভারে, সাফল্য-ঐতিহ্যে ব্রাজিলের সঙ্গে পেরে ওঠার মতো দল না মেক্সিকো। মুখোমুখি ৩৮ লড়াইয়ের মধ্যে সেলেসাওদের ২২ জয় সে কথাই বলবে। যা বলছে না, সেটি হল, চার-চারটি ফাইনালে মেক্সিকোর কাছে ব্রাজিলের পরাজয়ের পরিণতি! ১৯৯৯ সালের কোপা আমেরিকা ফাইনাল এবং সর্বশেষ ২০১২ অলিম্পিক ফাইনালের হারও আছে তাতে। এই রেকর্ড লাতিন আমেরিকার দলটির জন্য অস্বস্তির, মধ্য আমেরিকান প্রতিপক্ষের জন্য স্বস্তির। আবার রেকর্ড বইয়ের আরেক পাতা ওল্টালে উল্টে যাবে চিত্রনাট্য। বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়ার চার ম্যাচেই যে জয় ব্রাজিলের! এর মধ্যে সর্বশেষ যেবার দেশটিতে বিশ্বসেরাদের মেলা বসেছিল, সেই ১৯৫০ আসরে ৪-০ ব্যবধানে জয় ছিল স্বাগতিকদের।

ইতিহাসের প্রেরণা আর সতর্কতা সঙ্গী করেই তাই বুধবার চেনা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাঠে নামবে ব্রাজিল-মেক্সিকো।

এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে দুটি দলই। দ্বিতীয় ম্যাচে জিতলে তাই নকআউট পর্ব একরকম নিশ্চিত। মেক্সিকোর জন্য ওই নকআউট পর্বে পৌঁছা সাফল্য হিসেবে বিবেচিত। ব্রাজিলের ক্ষেত্রে তা নয়। সেটি বরং শিরোপা জয়ের ‘বাধ্যবাধকতা’ পূরণের ক্ষেত্রে আরেকটি ধাপ মাত্র। ১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর থেকে কখনোই নকআউট পর্বে যাওয়ার জন্য দুই ম্যাচের বেশি লাগেনি ব্রাজিলের। ঘরের মাটিতে কী আর সেটি লাগবে!

তবে ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচটিতে কিন্তু ব্রাজিলকে সর্বজয়ী রূপে দেখা যায়নি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে শুরুটা ছিল ভীষণ নড়বড়ে। মার্সেলোর আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ার সাও পাওলোর গ্যালারি থেকে দুয়োধ্বনিও স্লোগানের মতো সরব হচ্ছিল একটু একটু করে। সোনার ছেলে নেইমার সেটিকে বদলে দেন জয়ধ্বনিতে। দূর থেকে নেওয়া শটে ফিরিয়েছেন সমতা, এরপর পেনাল্টিতে এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। আর শেষ দিকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে অস্কার নিশ্চিত করেন ব্রাজিলের জয়। যে জয়ে রেফারির পক্ষপাতিত্ত্বের অভিযোগ স্পষ্ট। কারণ ফ্রেডকে ফাউল করায় যে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছেন জাপানি রেফারি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের।

রেফারিং নিয়ে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকা মেক্সিকানদের মনেও। ক্যামেরুনের বিপক্ষে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচটি মাঠের ওই দন্ডমুণ্ডের কর্তার জন্যই আরো বড় ব্যবধানে জেতা হয়নি বলে বিশ্বাস তাদের। জিতেছে তারা ১-০ গোলে, আরো দু’বার জিওভানি দোস সান্তোস বল জালে জড়ালেও তা বাতিল হয়েছে অফসাইডের অজুহাতে। অজুহাতই, কেননা রিপ্লে বলছে, সেগুলো ছিল বৈধ গোল।

আজকের ম্যাচের রেফারি তুরষ্কের কুনেত কারিরের উপর তাই আলাদা করে চোখ থাকবে সবার; বিশেষত মেক্সিকোর।

বিশ্বকাপের আবহে আক্রমণভাগের চেয়ে ব্রাজিলের রক্ষণভাগকেই মানা হচ্ছিল শক্তিশালী হিসেবে। প্রথম ম্যাচে এর প্রতিফলন কিন্তু ছিল না। বরং বড্ড নড়বড়ে দেখিয়েছেন চার ডিফেন্ডারকে। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বারবার আক্রমণে উঠেছিলেন ক্রোয়াটরা। দস সান্তোস, পেরালতার মতো চটপটে কিছু আক্রমণাত্মক ফুটবলার আছে মেক্সিকোর। তাদের বিপক্ষে আজ বড়সড় পরীক্ষা দিতে হবে চিয়াগো সিলভা, দাভিদ লুইস, দানি আলভেস, মার্সেলোদের।

তবে সেটি নিশ্চিতভাবেই মেক্সিকান ডিফেন্ডারদের পরীক্ষা আরও বড়। তুখোড় ফর্মের নেইমার-অস্কারকে ঠেকাতে হবে যে। প্রথম ম্যাচে গোল না পাওয়ায় মরিয়া ফ্রেডও ঝামেলায় ফেলবেন নিশ্চিত। ইনজুরির কারণে হাল্কের খেলাটা অবশ্য অনিশ্চিত। সময়মতো তিনি সেরে না উঠলে বের্নার্দ, রামিরেস কিংবা উইলিয়ানকে খেলাতে পারেন কোচ লুই ফেলিপে স্কলারি।

যে ১১ জনই খেলুক, স্টেডিয়ামের ভেতরের ৬০ হাজার, দেশের ২০ কোটি আর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা আরো কোটি কোটি দর্শকের পাগলপারা সমর্থন নিয়েই খেলবে ব্রাজিল। তাদের ‘সবার’ বিপক্ষে জেতাটা মেক্সিকো জন্য অসম্ভব-প্রায়!