মাঠে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে দুই দল সমানে সমান লড়লেও ‘ভাগ্য পরীক্ষার’ সময়টাতে চরম ব্যর্থ আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি শুটআউটে ৪-১ গোলের এই হারে মেসি-তেভেস-আগুয়েরো-দি মারিয়াদের প্রজন্মকে এখন পর্যন্ত ট্রফিশূন্যই থাকতে হলো। অথচ গত বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারার পর দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জেতার খুব কাছে এসে পড়েছিল মেসির দল।
শনিবার সান্তিয়াগোর জাতীয় স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য থাকার পর অতিরিক্ত সময়েও গোল হয়নি। টাইব্রেকারে খেলা গড়ালে গনসালো হিগুয়াইন ও এভার বানেগার ব্যর্থতায় শিরোপা স্বপ্ন ভাঙে জেরার্দো মার্তিনোর দলের।
টাইব্রেকারের প্রথম পেনাল্টি কিকে চিলির মাতিয়াস ফের্নান্দেস জোরাল শটে ওপরের বাঁ কোনা নিয়ে বল জালে জড়ান। আর্জেন্টিনার প্রথম পেনাল্টি কিক নেন মেসি; ডান দিক দিয়ে নিচু শটে বল জালে জড়ান তিনি।
আর্তুরো ভিদালের পরের শটে হাত লাগিয়েও ফেরাতে পারেননি আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সের্হিও রোমেরো। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় স্পট কিকটি হিগুয়াইন মেরে দেন ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে।
চিলির চার্লস আরানগিস তৃতীয় পেনাল্টি থেকে অনায়াসে গোল করেন। আর আর্জেন্টিনার এভার বানেগার দুর্বল পেনাল্টি কিক ব্রাভো ঠেকিয়ে দিলে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় চিলির।
রোমেরোকে বোকা বানিয়ে সানচেসের বুদ্ধিদীপ্ত পেনান্টি কিক থেকে বল ধীরে ধীরে জালে পৌঁছলে শিরোপা নিশ্চিত হয় এর আগে চার বার ফাইনালে উঠেও শূন্য হাতে ফেরা চিলির।
গতি দিয়ে আর্জেন্টিনাকে পরাস্ত করার পরিকল্পনা ছিল চিলির। মার্কোস রোহো, নিকোলাস ওতামেন্দিদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিপজ্জনকভাবে প্রতিপক্ষের রক্ষণ সীমায় ঢুকে যাচ্ছিলেন স্বাগতিক খেলোয়াড়রা। কিন্তু ডি-বক্সে গিয়ে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল এদুয়ার্দো ভারগাস, হোর্হে ভালদিভিয়া, আর্তুরো ভিদালদের। বেশিরভাগ শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তারা।
১৯তম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির শটে হেড করেছিলেন আগুয়েরো, বল জালে যাওয়ার মুহূর্তে স্বাগতিকদের বাঁচান গোলরক্ষক ব্রাভো।
সেমি-ফাইনালে জোড়া গোল করা আনহেল দি মারিয়াকে আধ ঘণ্টার মধ্যে হারায় দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়া দি মারিয়ার জায়গায় নামেন এসেকিয়েল লাভেস্সি।
প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে একটি করে সুযোগ আসে চিলি-আর্জেন্টিনার সামনে। ডি-বক্স থেকে দুর্বল শট নিয়ে আলেক্সিস সানচেস দারুণ একটি আক্রমণ নষ্ট করেন। এর পরপরই ডি-বক্স থেকে লাভেস্সির জোরালো শট ঠেকান ব্রাভো।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলে শুরু থেকে। ৬৬তম মিনিটে পাল্টা-আক্রমণ থেকে সানচেসের নৈপুণ্যে আচমকাই সুযোগ আসে চিলির সামনে। ডি-বক্সে গোল করার মতো জায়গায় ভিদালকে বল পাঠান আর্সেনাল তারকা। কিন্তু একটু দেরি করে নেওয়া ভিদালের শট কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন পাবলো সাবালেতা।
৮২তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ আসে সানচেসের সামনে। অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নেওয়া তার ভলি অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে বল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে গিয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন সানচেস। বাকি সময়েও কোনো দলই গোল না পাওয়ায় টাইব্রেকারে গড়ায় খেলা। আর তাতেই কোপা আমেরিকার ৯৯ বছরের ইতিহাসে যুক্ত হয় নতুন এক চ্যাম্পিয়নের নাম। ২০০৪ ও ২০০৭ সালের পর আবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারল আর্জেন্টিনা।