আগামী শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় শুরু হতে যাওয়া ফাইনালে ইতিহাস গড়ার হাতছানি থাকছে চিলির সামনেও। কোপা আমেরিকার ৯৯ বছরের ইতিহাসে চার বার ফাইনাল খেললেও কখনও শিরোপা জিততে পারেনি তারা। এবার সে শূন্যতা ঘোচাতে মরিয়া দলটি।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিচারে লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ এই ফুটবল প্রতিযোগিতায় বরাবরের মতো এবারও আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল পেয়েছিল ‘ফেভারিট’ তকমা। কিন্তু স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা এবং শক্তির বিচারে চিলিকেও শুরু থেকে এগিয়ে রাখছিল অনেকেই।
সেই অনেকের ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করে টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলতে থাকে চিলি। আর্তুরো ভিদাল, আলেক্সিস সানচেস ও এদুয়ার্দো ভারগাসদের নৈপুণ্যে এখন পর্যন্ত অপরাজিত দলটি এ পর্যন্ত ১৩টি গোল করেছে।
অন্যদিকে, তারকায় ঠাসা দল নিয়ে আসা আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বে চিলির মতো অপরাজিত থাকলেও নিজেদের ঠিক মেলে ধরতে পারছিল না। প্যারাগুয়ের সঙ্গে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ২ গোলে এগিয়ে গিয়েও পয়েন্ট হারায় দলটি। পরের দুটি ম্যাচেই একমাত্র গোলে জেতে মেসিরা।
কোয়ার্টার-ফাইনালে তো নির্ধারিত সময়ে গোল করতেই ব্যর্থ হয় ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা। তবে সমর্থকদের সব শঙ্কা দূর করে সেমি-ফাইনালে জ্বলে ওঠে লিওনেল মেসি-সের্হিও আগুয়েরো-গনসালো হিগুয়াইনদের নিয়ে গড়া আর্জেন্টিনার বিশ্বসেরা আক্রমণভাগ। প্যারাগুয়ের রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করে ৬-১ গোলে জিতে জানিয়ে দেয়, এবার শিরোপা জিততেই এসেছে তারা।
ফাইনালে ওঠার ওই লড়াইয়ে প্যারাগুয়ের জালে দুটি গোল করেন আনহেল দি মারিয়া। আর একটি করে গোল করেন আগুয়েরো, হিগুয়াইন, মার্কোস রোহো ও হাভিয়ের পাস্তোরে। প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করা মেসি আর বল জালে পাঠাতে না পারলেও তা নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই আর্জেন্টিনার। কারণ সেমি-ফাইনালে প্যারাগুয়ের জালে সতীর্থদের করা ৬টি গোলের ৪টিতেই অবদান ছিল দলের সবচেয়ে বড় এই তারকার।
আক্রমণভাগের সবাই ছন্দে ফেরায় কোচ জেরার্দো মার্তিনোর দুশ্চিন্তাও তাই কেটে গেছে। মেসির গোল না পাওয়া নিয়েও তাই খুব একটা ভাবনা নেই। তবে বার্সেলোনার এই তারকা ফাইনালেই গোল খরা কাটানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর সেটা যদি হয়, তাহলে চিলির রক্ষণের জন্য সেটা হবে বাড়তি চ্যালেঞ্জ।
সেমি-ফাইনালে বিশাল ব্যবধানে হারের পর প্যারাগুয়ের কোচ রামন দিয়াস যেমন একরকম ঘোষণাই দিয়ে দেন, তাদের বিপক্ষে মেসি-দি মারিয়ারা যেমন খেলেছে ফাইনালে তেমন খেললে চিলির কোনো সম্ভাবনাই নেই। প্যারাগুয়ের ফরোয়ার্ড লুকাস বারিওসের ধারণাও তাই। তার মতে, মাঠে মেসিরা সামান্য সুযোগ পেলেই তাদের মতো চিলিকেও দুমড়ে মুচড়ে দেবে।
আর্জেন্টিনার সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল চিলির জন্য মোটেও সুখকর নয়, কোপা আমেরিকার মঞ্চে তো নয়ই। ১৯১৬ সালে লাতিন আমেরিকার সেরা এই ফুটবল টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার কাছে ৬-১ গোলে হেরেছিল চিলি। তারপর এই প্রতিযোগিতায় আরও ২৩ বার মুখোমুখি হয়েছিল দল দুটি, কিন্তু কখনই তারা জিততে পারেনি। আর সবধরনের প্রতিযোগিতামূলক লড়াইয়ে ৩৬ বারের দেখায় একবারই মাত্র আর্জেন্টিনাকে হারাতে পেরেছে তারা।
পরিসংখ্যান আর ঠিক সময়ে মেসিদের অদম্য হয়ে ওঠ - সব বিচারেই সান্তিয়াগোয় হতে যাওয়া ফাইনালে চূড়ান্ত ফেভারিট আর্জেন্টিনাই। চিলির ধারাবাহিক পারফরম্যান্স কঠিন এক লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে বটে, কিন্তু সম্ভাবনার দৌড়ে এগিয়ে দিয়েগো মারাদোনার উত্তরসূরিরাই।