অদম্য মেসির কাছে বায়ার্নের হার

পেপ গার্দিওলার কোনো কৌশলই কাজে লাগেনি; রোখা যায়নি লিওনেল মেসিকে। আর্জেন্টিনা তারকার অসাধারণ নৈপুণ্যে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বার্সেলোনা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 08:53 PM
Updated : 7 May 2015, 08:36 AM

বুধবার কাম্প নউতে বায়ার্নকে উড়িয়ে দেওয়ার রাতে ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটের জাদুতে জোড়া গোল করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে ছাড়িয়ে যান মেসি।

ম্যাচের আগের দিন বলা প্রতিপক্ষ কোচ গার্দিওলার কথাই সত্যি প্রমাণিত হলো। মেসিকে রোখা অসম্ভব! নেইমারের শেষ গোলটাতেও ছিল আর্জেন্টিনা অধিনায়কের অবদান।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের প্রথম পর্বের এই ম্যাচের প্রথম দশ মিনিট এলোমেলো খেলে বার্সেলোন। কিছুটা গুছিয়ে নেওয়ার পর দ্বাদশ মিনিটে গোলের প্রথম ভালো সুযোগটি পেয়েছিলেন লুইস সুয়ারেস। অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে বল পেয়ে এগুনো উরুগুয়ে তারকার সামনে ছিলেন কেবল গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার। সুয়ারেসের শট দারুণ দক্ষতায় পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন জার্মান এই গোলরক্ষক।

তিন মিনিট পরেই আবার গোলের সুযোগ আসে। এবার এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি-বক্সের ভেতর থেকেই সুয়ারেস পাস দিয়েছিলেন নেইমারকে। কিন্তু ব্রাজিল তারকা ঠিকমতো বলে পা লাগাতে পারেননি।

১৮তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ হেলায় হারায় বায়ার্নও। টমাস মুলার ডান দিক থেকে বল পাঠিয়েছিলেন ডি-বক্সে। কিন্তু মুখে চোটের কারণে প্রতিরক্ষা মুখোশ পরে খেলতে নামা রবের্ত লেভানদোভস্কি ঠিকমতো শট নিতে পারেননি গোলরক্ষককে একা পেয়েও।

তিন মিনিট পরেই আবার বার্সার আক্রমণ। পায়ের কারুকাজ দেখিয়ে মেসি বল বাড়িয়েছিলেন ডি-বক্সে, তবে সেখানে অপেক্ষমান নেইমারের নাগাল পাননি।

২৭তম মিনিটে কর্নার থেকে সুয়ারেসের হেড চলে যায় ক্রসবার উচিয়ে। ৩৬তম মিনিটে মেসির ফ্রি-কিকও ঠিকঠাক বুঝে বল হাতে জমান নয়ার।

৩৯তম মিনিটে আবার বায়ার্নের রক্ষাকর্তা নয়ার। রক্ষণের উপর দিয়ে ইনিয়েস্তার দারুণ পাসে আলভেসের আচমকা শটও পা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ঠেকিয়ে দেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের সেরা এই গোলরক্ষক।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বার্সেলোনার ডি-বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি-কিক পায় বায়ার্ন; তবে চাবি আলোনসোর বল বাধা পায় রক্ষণ প্রাচীরে।

একটু পরে মেসিও গোলে শট নিয়েছিলেন; তবে বল জমা পড়ে নয়ারের হাতে। কিন্তু মেসি জাদুর তখনও যে বাকি।

৭৭তম মিনিটে দেখা মিলল অদম্য মেসির। ডান দিক থেকে দানি আলভেসের বল পায়ে জমানোর পর বাঁ পায়ের মাপা নিচু শটে কাছের পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি।

৮০তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলটাতো মেসির মাপের খেলোয়াড়ের বিবেচনাতেও অসাধারণ। ৩০ গজ দূরে বল পেয়ে পায়ের জাদুতে জেরোম বোয়েটাংকে মাটিতে লুটিয়ে ফেলে ডান পায়ের টোকায় নয়ারের মাথার উপর দিয়ে তিনি পাঠিয়ে দেন জালে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এ মৌসুমে ১১ ম্যাচে এটি মেসির দশম গোল। আর মোট ৭৭টি গোল নিয়ে রোনালদোকে ছাড়িয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোল দেওয়ার রেকর্ড আবার নিজের নামে লেখালেন চারবারের বর্ষসেরা এই তারকা।

ম্যাচের শেষের দিকে মূল্যবান ‘অ্যাওয়ে’ গোলের সন্ধানে মরিয়া হয়ে আক্রমণে উঠে গিয়েছিল বায়ার্নের খেলোয়াড়রা। বল পেয়ে মেসি বাড়ান ফাঁকায় থাকা নেইমারের দিকে। অনেকখানি দৌড়ে নয়ারকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়াতে কোনো ভুল করেননি ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ড। গার্দিওয়ার মুখে তখন ফুটে ওঠে এক রাশ হতাশা।

শেষ ১৫ মিনিটে ৯ বার বলে পা লাগিয়েছেন মেসি, তাতে দুটি গোল আর গোলে একটি সহায়তা তার!

২০০৬ সালে ডিসেম্বরের পর এই প্রথম বার্সেলোনা বল দখলের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু ম্যাচে এক কথায় দাঁড়াতেই পারেনি ৫০ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রাখা বায়ার্ন।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগের দেখায় এই কাম্প নউতেই সেমি-ফাইনালে বার্সেলোনাকে ৩-০ গোলে হারের লজ্জায় ডুবিয়েছিল বায়ার্ন। এর আগে নিজেদের মাঠে ৪-০ গোলে জেতায় দুই লেগ মিলিয়ে ৭-০ গোলের বিশাল জয় পেয়েছিল তারা। সেই হারের প্রতিশোধের অর্ধেকটা নিয়েই বায়ার্নের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় এখন খেলতে যাবে বার্সেলোনা।

বার্সেলোনার সাবেক কোচ গার্দিওলার কাম্প নউতে ফেরাটা সুখকর হলো না মোটেও। আগামী সপ্তাহে নিজেদের মাঠে চমক না দেখাতে পারলে আগামী ৬ জুন বার্লিনের ফাইনালে লুইস এনরিকের দলের যাওয়াটা কিছুতেই ঠেকাতে পারবেন না তিনি।