সেমির স্বপ্ন নিয়ে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ

বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা-এই দুই দলের সামনেই বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের সেমি-ফাইনালে খেলার সুযোগ আছে। তবে স্বাগতিক বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কার জন্য সমীকরণটা মেলানো একটু কঠিন। কেননা, শেষ চারের টিকেট পেতে হলে জয় দরকার রোশান-ইশানদের, অন্যদিকে ড্র হলেই চলবে মামুনুল-এমিলিদের।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2015, 02:44 PM
Updated : 1 Feb 2015, 02:44 PM

‘এ’ গ্রুপ থেকে দুই জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছে মালয়েশিয়া। এই গ্রুপের অন্য দল হিসেবে শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকাল পাঁচটায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা।

গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি সামনে রেখে দুই অধিনায়ক অবশ্য দুই রকম কথা বললেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে রোববারের সংবাদ সম্মেলনে।

বাংলাদেশ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, “আমার হোম গ্রাউন্ডে আমি যদি বলি, শুধু ড্র করার জন্য যাচ্ছি, সেটা ঠিক হবে না। এটা আমাদের হোম গ্রাউন্ড, এখানে আমাকে জিততে হবে।”

শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক এ সি সানজেভা অবশ্য সেমি-ফাইনালে ওঠার চেয়ে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতিতে বেশি জোর দিচ্ছেন।

“বিশ্বকাপের বাছাই পর্বই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ আসরের ম্যাচগুলো আমাদের জন্য বাছাই পর্বের প্রস্তুতি নেয়ার বোনাস ম্যাচ।”

এএফসির র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ; ৩৪তম অবস্থানে রয়েছে স্বাগতিকরা। অন্যদিকে গোল্ড কাপের এ আসরে খেলা ছয় দলের মধ্যে এএফসির র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা, ৩৮তম স্থানে রয়েছে তারা।

দুই দলের সর্বশেষ দুই ম্যাচের পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের পক্ষে। গত বছর অক্টোবরে দুটি প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। যশোরের ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র হলেও রাজশাহীতে জাহিদ হাসান এমিলি লক্ষ্যভেদ করায় ১-০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ।

গোল্ড কাপের এ আসরে দুই দলের শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে ১-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। আর মালয়েশিয়ার কাছে শ্রীলঙ্কার হার ছিল ২-০ ব্যবধানের।

গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা হারলেও গোল পার্থক্যের হিসেবে আবার এগিয়ে মামুনুলরা। এ কারণে গ্রুপের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্বাগতিকরা। গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকার কারণে সোমবারের ম্যাচে ড্র করলেও শ্রীলঙ্কাকে টপকে এ আসরের সেমি-ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ।

তবে গোল্ড কাপের লক্ষ্য নিয়ে দুই কোচের কথায়ও কোনো লড়াইয়ের উত্তাপ নেই। বাংলাদেশ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ বলেন, “আমাদের পরের ম্যাচটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং তাদেরকে টপকে পরের রাউন্ডে যেতে হবে। ফুটবলে গোল করাটাই মুখ্য। আমি মনে করি, এবার ফল আসবে। আশা করি ছেলেরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচে ভালো ফল বয়ে আনবে।”

শ্রীলঙ্কা কোচ নিকোলা কাভাজোভিচ প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলা কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করলেন। জানালেন, এ আসরে তার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই। তবে মামুনুলদের যে একেবারে ছেড়ে কথা বলবে না তার ছাত্ররা, সেটা তিনি বুঝিয়ে দিলেন দারুণ উদাহরণ টেনে।

“শ্রীলঙ্কার মানুষের একটা দিক আমি খুব পছন্দ করি। তাদের মধ্যে লড়াই করা মানসিকতা আছে এবং তারা কখনোই আত্মসমপর্ণ করে না।”

“আমার দলের খেলোয়াড়দেরও এই মানসিকতা আছে। এ কারণে প্রথম ম্যাচে হারলেও এ ম্যাচের জন্য আমাদের অনুপ্রেরণার কমতি নেই”, যোগ করেন এই সার্বিয়ান।

এ ম্যাচেও বাংলাদেশের পক্ষে থাকছে নিজেদের মাঠ ও পরিচিত দর্শকের সামনে খেলার বাড়তি সুবিধা। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারাটা ভাবনায় ফেলেছে স্বাগতিকদের।

নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত বছর খেলা চার ম্যাচে ফরোয়ার্ড এমিলি, ওয়াহেদ, জাহিদ নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। গত অগাস্টে নেপালের বিপক্ষে খেলা দুই প্রীতি ম্যাচে দলের পক্ষে একটি মাত্র গোল করেন সোহেল রানা। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত অক্টোবরে খেলা দুই ম্যাচে একটি করে গোল পেয়েছিলেন এমিলি।

গোল্ড কাপের উদ্বোধনী ম্যাচেও মালয়েশিয়ার বিপক্ষে শুরুর কুড়ি মিনিট ছন্দে না থাকলেও পরের সময়টাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল মামুনুলদের মুঠোয়। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় উদ্বোধনী ম্যাচে সাফল্যের হাসি হাসতে পারেনি স্বাগতিকরা। ফরোয়ার্ড জাহিদ হোসেন একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করে প্রতিপক্ষ কোচের প্রশংসা কুড়িয়েছেন কিন্তু তার তৈরি করে দেয়া সুযোগের একটাও কাজে লাগাতে পারেননি এমিলি।

শ্রীলঙ্কাও গোল্ড কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে গোল পায়নি । তবে এই দলটি সেট-পিস থেকে সাফল্য তুলে নিতে বেশ পারদর্শী। আগের বাংলাদেশ সফরে যশোরের ম্যাচে সেট পিস থেকে ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিলেন দলটির মিডফিল্ডার এ এন রোশান। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও ভাগ্যকে পাশে না পাওয়ায় গোল বঞ্চিত হন তিনি; রোশানের ফ্রি-কিক পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়।

রোশানের এমন একটি ফ্রি কিক শ্রীলঙ্কাকে সেমি-ফাইনালে তুলে নিতে পারে। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক মামুনুলের চাওয়া একটাই-যে কোনো মূল্যে অতিথিদের হারিয়ে গোল্ড কাপের শেষ চারে খেলা।