রোমাঞ্চকর ক্লাসিকোতে রিয়ালের জয়

উত্তেজনায় ঠাসা ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে সহজেই হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। নিজেদের মাঠে পিছিয়ে পড়ে প্রতি-আক্রমণের অনন্য নিদর্শন দেখিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেও আরো বড় ব্যবধানে জিততে পারতো রোনালদো-বেনজেমারা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2014, 04:17 PM
Updated : 26 Oct 2014, 06:55 AM

শনিবার সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে ম্যাচের শুরুতেই নেইমারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল অতিথিরা। তবে রোনালদোর পেনাল্টিতে সমতা ফেরানোর পর আক্রমণে গতি আরো বাড়ে স্বাগতিকদের। দ্বিতীয়ার্ধে পেপের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর করিম বেনজেমার গোলে মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোতে জয় নিশ্চিত হয় রিয়াল মাদ্রিদের।

সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে লা লিগার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের মাত্র তিন মিনিট পেরিয়েছে; এমন সময়ই বল নিয়ন্ত্রণ আর নিখুঁত ফিনিশিংয়ের অপূর্ব নিদর্শন দেখিয়ে গোল করেন নেইমার। লুইস সুয়ারেসের লম্বা পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে ডান পায়ের নিচু শটে কাসিয়াসকে ফাঁকি দেন ব্রাজিল তারকা। লিগে এটা নেইমারের নবম গোল।
সুয়ারেসকে শুরুর একাদশেই রেখেছিলেন কোচ লুইস এনরিকে। এই ম্যাচ দিয়েই চার মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ফিরলেন উরুগুয়ের এই ফরোয়ার্ড।
গোল শোধের সুযোগ দ্রুতই পায় রিয়াল। একাদশ মিনিটে দুই বার করিম বেনজেমাকে গোলবঞ্চিত করে পোস্ট। রোনালদোর ক্রসে বেনজেমার হেড ক্রসবারে লেগে ফিরে। বেনজেমার ফিরতি শট বার কাঁপিয়ে দেয়।
২৩তম মিনিটে গোলের সহজতম সুযোগ হারান এ ম্যাচে অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল লিওনেল মেসি। সুয়ারেস দারুণ নিচু ক্রস পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু চার গজ দূর থেকেও তা বাইরে মারেন আর্জেন্টিনা তারকা। গোলটি করতে পারলে সান্তিয়াগো বের্নাবেউতেই লা লিগার সর্বোচ্চো গোলদাতার রেকর্ডটি ছুঁতে পারতেন তিনি।
২৭তম মিনিটে ডানদিক থেকে ডি বক্সে বিপজ্জনক জায়গায় বল পাঠিয়েছিলেন মেসি। তা থেকে নেইমারের শট ঠেকিয়ে দেয় কারভাহাল।
বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালিয়ে অবশেষে ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে সমতা ফেরান রিয়ালের সবচেয়ে বড় তারকা রোনালদো। মার্সেলোর নিচু ক্রস ডি বক্সের ভেতর জেরার্দ পিকে হাত দিয়ে ফেরালে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ক্লাওদিও ব্রাভোকে বিপরীত দিকে পাঠিয়ে ডান কোনা দিয়ে বল জালে পাঠান রোনালদো। লা লিগায় ১৬ গোল করে এখন সবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে আছেন পর্তুগিজ এই তারকা।
বিরতির আগেই এগিয়ে যেতে পারতো রিয়াল; তবে মার্সেলোর ক্রসে অরক্ষিত হামেস রদ্রিগেসের হেড গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও বারের একটু বাইরে দিয়ে চলে যায়।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে পেপের দারুণ হেডে এগিয়ে যায় রিয়াল। টনি ক্রুসের কর্নার থেকে একটু পেছনে থাকা অরক্ষিত পর্তুগিজ ডিভেন্ডারের হেড রুখতে পারেননি ব্রাভো।
৫৬তম মিনিটে মাথিউ ভালবুয়েনার দূরপাল্লার শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দিয়ে কাসিয়াস জানান দেন, ফুরিয়ে যাননি তিনি।
প্রথমার্ধের লড়াই প্রায় সমানে-সমানে হলেও, দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল চড়াও হয়ে খেলে। বল দখলে রাখায় বার্সেলোনা এগিয়ে থাকলেও, আক্রমণে এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরাই।
সমতা ফেরানোর জন্য মরিয়া মেসি-নেইমাররা রিয়ালের সীমানায় বল হারালেই ইসকো, রোনালদোরা বার বার দ্রুতগতিতে ঢুকে পড়েন বার্সেলোনার সীমানায়। এভাবেই ৬১তম মিনিটে আসে বেনজেমার জয় নিশ্চিত করা গোলটি।
ইনিয়েস্তার ভুলে বল পেয়েছিলেন ইসকো; তবে ফাঁকা জায়গায় রোনালদোকে বল দিতে একটু দেরি করে ফেলেছিলেন তিনি। গোলে শট না নিয়ে রোনালদো তাই বল বাড়ান রদ্রিগেসকে। কলম্বিয়ার এই তারকার এগিয়ে দেয়া বলে করিম বেনজেমার কোনাকুনি শট রোখার সাধ্য ছিল না ব্রাভোর।
এরপর আরো কয়েকবার বার্সেলোনার রক্ষণের দুর্বলতায় গোলের সুযোগ তৈরি হয় রিয়ালের তবে তা থেকে আর গোল আসেনি।
প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ২২৯তম বারের মতো মুখোমুখি হয় স্পেনের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব দুটি। ক্লাসিকোর প্রবল উত্তেজনার চাপ পড়ে তারকা খেলোয়াড়দের ওপর। এর ফল, নবম মিনিটে মেসি আর চতুর্দশ মিনিটে নেইমারের হলুদ কার্ড দেখা। পরে হলুদ কার্ড দেখেন বার্সেলোনার জেরার্দ পিকে আর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাও। রোনালদোও ম্যাচের শেষের দিকে দেখেন হলুদ রঙ।
প্রথমার্ধে ভালো খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে অনুজ্জ্বল ছিলেন সুয়ারেস। আয়াক্স আর লিভারপুলের হয়ে অভিষেকে গোল পেলেও বার্সেলোনার হয়ে আর পাননি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ফেরা এই ফরোয়ার্ড। তবে মেসি-নেইমারের সঙ্গে বোঝাপড়াটা প্রথমার্ধে বেশ হয়েছে তার।
লিগে নবম ম্যাচে এসে প্রথম হারের পরও ২২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। আর সাত জয় আর দুই হারে ২১ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে রিয়াল।
মৌসুমের শুরু থেকে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মেসি তার জাদু দেখাতে পারেননি গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে। দ্বিতীয়ার্ধে তো স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে পারেনি; ম্যাচের যোগ করা সময়ে ক্রসবার উঁচিয়ে মারা ফ্রি-কিকটাই তার প্রমাণ।