রোমাঞ্চ নিয়ে মৌসুমের প্রথম ‘ক্লাসিকো’

প্রতি মৌসুমেই ক্লাসিকোর রোমাঞ্চ নিয়ে হাজির হয় স্পেনের দুই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনা। তবে দুই দলের মধ্যে এই মৌসুমের প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়ানোর আগে সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদটা অনেক উঁচুতে রয়েছে। দুই দলেরই আক্রমণভাগের তারকারা ফর্মের তুঙ্গে থাকায় অবিস্মরণীয় এক লড়াইয়ের প্রত্যাশা করছে ফুটবল বিশ্ব।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2014, 02:53 AM
Updated : 25 Oct 2014, 11:56 AM

শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে শুরু হবে মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকো।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে রিয়াল শিবিরে যোগ হয়েছে বড় একটা দুশ্চিন্তা। চোটের কারণে ছিটকে পড়েছেন ফরোয়ার্ড গ্যারেথ বেল।

বার্সেলোনা শিবিরে অবশ্য নেই তেমন কোনো চোট সমস্যা। উল্টো নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সুয়ারেসের ফেরার সম্ভাবনায় আরো বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছে সমর্থকেরা। ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলা হয়নি উরুগুয়ের স্ট্রাইকার সুয়ারেসের। তবে কিছুদিন আগে জাতীয় দলের হয়ে ওমানের জালে জোড়া গোল করে আভাস দিয়েছেন- লম্বা সময় ধরে প্রতিযোগিতামুলক ম্যাচ না খেললেও মেসি ও নেইমারের সঙ্গে কার্যকর ত্রয়ী গড়তে খুব একটা সমস্যা হবে না তার।

আর মৌসুমের শুরু থেকে মেসি-নেইমার জুটি তো দারুণ সফল। তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে লিগে এখনও অপরাজিত দলটি। এ পর্যন্ত সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলে বার্সেলোনার করা ২৮ গোলের ১৯টিই এসেছে লাতিন আমেরিকার ওই দুই তারকার পা থেকে। গত মঙ্গলবার আয়াক্সের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে জেতা ম্যাচেও একটি করে গোল আছে তাদের। মেসি-নেইমারের এমন ফর্ম, সঙ্গে আবার সুয়ারেসের অন্তর্ভুক্তি- রিয়াল রক্ষণের জন্য হতে পারে ভয়ঙ্কর।

এছাড়া রিয়ালের বিপক্ষে মাঠে নামার সময় মেসির সামনে থাকবে অনন্য এক রেকর্ডের হাতছানি। একটি গোল করতে পারলেই লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা তেলমো সাররার ২৫১ গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন আর্জেন্টিনার এই তারকার। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠে এমন একটি রেকর্ড গড়তে পারলে সেটা আনন্দ হবে আরো বেশি।

ফর্ম বিবেচনায় রিয়াল সমর্থকদের জন্যও খুশি হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান আছে। লিগের গত দুই ম্যাচে ১০ গোল করেছে রিয়াল। আর আট ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৩০ বার বল পাঠিয়েছে দেশের সফলতম দলটি।

রিয়াল শিবিরে গ্যারেথ বেলের ছিটকে পড়াটা একটা ধাক্কা হয়ে এলেও গত বুধবার লিভারপুলকে উড়িয়ে দেয়া আক্রমণভাগের উপর আস্থা রাখতেই পারেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি। ম্যাচটি ৩-০ ব্যবধানে জেতে বর্তমান ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা।

তাছাড়া মৌসুমের শুরু থেকে দলের সেরা তারকা রোনালদো একের পর এক গোল করে চলেছেন। সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলে এবারের মৌসুমে এ পর্যন্ত ২১ গোল তার। লিভারপুলের জালেও একবার বল পাঠান তিনি। সঙ্গে বেনজেমা করেন জোড়া গোল। তাই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রিয়ালের এই আক্রমণ জুটিকে আটকাতে বার্সেলোনার রক্ষণকে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।

একদিকে, মেসি-নেইমার-সুয়ারেস অন্যদিকে রোনালদো-বেনজেমা, বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হামেস রদ্রিগেসও পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। এমন সব তারকায় ঠাসা ম্যাচে জয়ের মূলমন্ত্র কি হতে পারে? রিয়ালের কোচ কার্লো আনচেলত্তির মতে, এখানে জিততে হলে সবার আগে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে ঠেকাতে হবে।

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে আনচেলত্তি বলেন, “বিশ্বে আর কোনো ম্যাচ নেই যেখানে (উভয় দলেই) এত মানসম্পন্ন আক্রমণভাগ আছে। ঠিকই একইরকম মান মাঝমাঠ ও রক্ষণেও। আমি জানি না (এখানে) জয়ের চাবি কাঠিটা কি হবে। ভালোভাবে রক্ষণ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে, হয়তো এটাই হবে মূল কাজ, লুইস এনরিকেও হয়তো এমনটাই ভাবছেন।”
বার্সেলোনার কোচ লুইস এনরিকে অবশ্য নতুন কোনো পরিকল্পনা নয়, নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে চান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সব সময়ের মতো একই ধরণের ফুটবল ভাবনা আর মনোভাব নিয়ে আমরা ওখানে খেলতে যাব।”

লিগে আট ম্যাচের সাতটিতেই জিতে ২২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। আর ছয় জয় আর দুই হারে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে রিয়াল। এই ম্যাচে হারলে মেসিদের থেকে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়বে রোনালদোরা।

তাই শীর্ষস্থানধারীদের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল রাখতে জয়টাই একমাত্র লক্ষ্য রিয়ালের। আর বার্সেলোনার চাওয়া চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে পয়েন্ট ব্যবধান আরো বাড়িয়ে নেয়া।