ধানমণ্ডি মাঠ নিয়ে লড়াই ‘অভিজাত’ ও ‘সাধারণে’

মাঠের অধিকার নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে এখন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী এবং শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কর্মকর্তারা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2014, 03:01 PM
Updated : 20 April 2014, 05:29 AM

ধানমণ্ডি আট নম্বর মাঠ হিসেবে পরিচিত এই স্থানটি শেখ জামালের নাম ব্যবহার করে কিছু ক্রীড়া সংগঠক ‘দখলের পাঁয়তারা’ করছেন বলে দাবি পরিবেশবাদীদের। এলাকাবাসীর জন্য মাঠটি উন্মুক্ত করে দেয়ারও দাবিও তাদের।

অন্যদিকে শেখ জামালের কর্মকর্তারা বলছেন, এই মাঠ ‘অভিজাতদের’, সাধারণদের এখানে আসতে হবে কেন?

পাল্টাপাল্টি অবস্থানে পরিবেশবাদীদের কর্মসূচিতে যেমন দেখা গেছে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, কামরুন নাহার ডানাসহ সাবেক খেলোয়াড়দের; তেমনি শেখ জামাল ক্লাব তাদের পাশে পাচ্ছে বাফুফে সভাপতি, বিসিসি সভাপতির মতো শীর্ষ ক্রীড়া কর্মকর্তাদের।    

কর্মসূচি নিয়ে পরিবেশবাদীদের মাঠে ঢোকার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলার পর উত্তেজনার মধ্যে শনিবার দুই পক্ষই আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থানের কথা জানায়।

ধানমণ্ডির এক রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, “আমরা খেলার বিপক্ষে নই, মাঠ দখলের বিপক্ষে। সাধারণ মানুষ এই মাঠে গিয়ে খেলতে পারবে না, তা হতে পারে না।

“জনগণের জন্য মাঠটি উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্যই আমাদের এই আন্দোলন। কেউ এই মাঠ দখল করে রাখার অধিকার রাখেন না।”

শেখ জামাল কর্মকর্তারা ক্লাবের ফটকে নিরাপত্তা প্রহরী বসিয়ে রেখেছে যেন কেউ সেখানে ঢুকতে না পারে। তাছাড়া মাঠে বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন ও টেনিস কোর্ট তৈরি করছে তারা।

মাঠে ঢোকার ঘটনায় তারা যে মামলা করেছে, তাতে আসামি করা হয়েছে ক্রীড়া সংগঠক ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও কামরুননাহার ডানাকে।

শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের বলেন, “এই মাঠ ‘এলিটদের’ জন্য, ‘টোকাইদের’ জন্য নয়।

“আইয়ুব খান এলিটদের জন্যই ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা তৈরি করেছেন। তাই এলিটরাই এই মাঠে এসে খেলার অধিকার রাখেন। কোনো টোকাই এখানে এসে খেলতে পারে না।”

মনজুর কাদেরের এই বক্তব্যের জবাবে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, “শেখ জামাল সভাপতির এই বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, তিনি আদালতের রায় মানেন না। ধানমণ্ডি এলাকার মানুষ ও ক্রীড়াপ্রেমীরা এই মাঠে এসে খেলুক, এটা তিনি চান না। মূলত এই এই মাঠটি দখলের পাঁয়তারা করছেন তারা।”

শেখ জামালের মাঠটি নিয়ে পরিবেশবাদীদের পক্ষে মামলায় লড়ছেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

তিনি বলেন, “২০১১ সালের ১৫ মার্চ হাই কোর্ট এক রায় দিয়েছেন, এই মাঠের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে। কিন্তু আদালতের রায় মানেনি শেখ জামাল কর্মকর্তারা।”

এই আইনজীবী জানান, ২০১৩ সালের ২৭ মে হাই কোর্ট রায় অবমাননার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। কিন্তু তা সেখান পর্যন্তই থেমে আছে।

শেখ জামাল কর্মকর্তাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসা বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, “এর আগে এই মাঠ দেখেছি, বস্তির মতো ছিল। এখন যা দেখছি, তা আমার দেখা দেশের অন্যতম সেরা মাঠ।

“এমন মাঠ নিয়ে যারা প্রতিবাদ করেছে, তারা কি চায় না, খেলা হোক।”

বাফুফে সভাপতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসানও শেখ জামাল ক্লাবকে তাদের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

“ভালো কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই। তারপরও এগিয়ে যেতে হবে। ক্রীড়াঙ্গন কারো নিজস্ব সম্পত্তি নয় যে এটা দখল করে রাখবে। শেখ জামালের এই কার্যক্রমে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে, থাকবে।”

এই বিষয়ে পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, তারা কোনো ভালো কাজের বিরোধিতা করছেন না।

“আমরা চাই খেলা হোক। কিন্তু যে মাঠ জনগণের জন্য করা, সে মাঠে কেন সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারবে না?”