২০১৩ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) অ্যাথলেটিক্সে ভর্তি হন জহির। ফৌজিয়া হুদা জুই, মতি আলম, আব্দুল্লাহেল কাফির অধীনে গত চারটি বছর নিবিড় অনুশীলনে সময় কেটেছে। সাফল্যও মিলে যায় গত বছর জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায়। ২০০ ও ৪০০ মিটারে সেরা। ১০০ মিটারে দ্বিতীয়।
গত মাসে ব্যাংককে এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিনশিপে ৪০০ মিটারে ৪৯ দশমিক ১২ সেকেন্ড সময় নিয়ে কেনিয়ার নাইরোবিতে হওয়া ওয়ার্ল্ড অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নেওয়ার টিকেট পান জহির। হিটে ৪৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১৯৯৮ সালে মস্কোর ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ গেমসে ১০০ মিটারে আব্দুল্লাহ হেল কাফির সেমি-ফাইনালে ওঠার পর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের কোনো প্রতিযোগিতায় দেশের প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে সেমি-ফাইনালে উঠার কৃতিত্ব দেখান।
সেমি-ফাইনালটা অবশ্য আশানুরুপ হয়নি। ৪৮ দশমিক ২২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেমির হিটে তৃতীয় হয়ে ছিটকে পড়েন জহির। কিন্তু তার সেমি-ফাইনালে ওঠাই নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্সকে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় জহির তার ভবিষ্যত লক্ষ্যের কথা জানালেন। কোচরাও শিষ্যর সম্ভাবনা নিয়ে জানালেন উচ্চাশা।
সাউথ এশিয়ান গেমসের (এসএ গেমস) স্প্রিন্ট থেকে সর্বশেষ সোনার পদক বাংলাদেশ পেয়েছিল ১৯৯৫ সালে। মাদ্রাজের প্রতিযোগিতা থেকে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সেরা হয়েছিলেন মাহবুব আলম। পরেরবার কাঠমাণ্ডুর আসর থেকে জিতেছিলেন রুপা। এরপর থেকে চলছে খরা। বিষয়টি মনে করিয়ে দিতেই জহির দেখালেন নতুন স্বপ্ন।
“প্রথমে আমার লক্ষ্য সাফ গেমস (এসএ গেমস)। এখানে আমাদের অনেকদিন পদক নেই। যদি আমার টাইমিং আরেকটু ভালো হয়, তাহলে আমি সাফ গেমস থেকে দেশকে একটা পদক এনে দিতে পারব।”
“এরপর এশিয়ান গেমস আছে; ২০১৮ সালের জুনিয়র অলিম্পিক নিয়ে ক্যাম্পও করেছি। এরপর অলিম্পিক। এগুলো নিয়ে ধাপে ধাপে এগুবো।”
নাইরোবি থেকে মঙ্গলবার দেশে ফিরেই জহির এলেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনে। লম্বা ভ্রমণের ক্লান্তি ভুলে জানালেন কেনিয়ায় কাটানো সময়ের কথা।
“তাদের (বিদেশি অ্যাথলেটদের) ধারণা নাই-বাংলাদেশের স্প্রিন্টার আছে কিনা। যখন হিটে নামি, তখনও কেউ কিছু বলেনি। হিটে যখন ভালো করলাম-তখন তারা জানল বাংলাদেশেও স্প্রিন্টার আছে। অনেক জিজ্ঞেস করেছে-বাংলাদেশ কি স্প্রিন্টারের দেশ? ওখানে কি স্প্রিন্ট হয়? আমাকে প্রশংসাও করল অনেকে।”
“আসলে অনেক কষ্ট করেই আমি এ পর্যন্ত এসেছি। কোচরা আমাকে ভালো ট্রেনিং দিয়েছেন। এর বাইরে নিজের উন্নতির জন্য আমি নিজের রুমে রাতে অতিরিক্ত অনুশীলনও করেছি।”
“ছোটবেলায় স্কুলে সবসময় দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হতাম। আমরা প্রত্যেকদিন বিকাল বেলা গোল্লাছুট খেলতাম। বন্ধুরা আমাকে কখনও ধরতে পারত না। রাতে শেরপুর-জামালপুর রোডে দৌড়াতাম।”
দুই কোচ মতি আর কাফির অধীনে বেশি সময় কেটেছে জহিরের। খুব কাছ থেকে উঠতি এই স্প্রিন্টারের সামর্থ্য, জেদ, দস্যিপনা সবই দেখেছেন দুজনে। দুই কোচই জহিরের সামর্থ্য নিয়ে দারুণ আশাবাদী।
মতি আলম বললেন, “বাংলাদেশের অনেক অ্যাথলেট আমি দেখেছি। একমাত্র মিলজার ভাই ব্যতীত জহিরের শরীরের কাঠামো অ্যাথলেট হবার মতো। অস্ট্রেলিয়া, কেনিয়া, অনেক দেশে গিয়েছি। যদি এদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারি, তাহলে এদের দ্বারা ভালো কিছু সম্ভব।”
কাফির চোখে দুর্দান্ত স্প্রিন্টার হওয়ার সব যোগ্যতাই আছে জহিরের মধ্যে। বিশেষ করে গতি বাড়ানোর সামর্থ্য।
“ওর শারীরিক গঠন, উচ্চতা ও ওজন স্প্রিন্টার হওয়ার জন্য খুবই ভালো। ৪০০ মিটার এনার্জি সিস্টেম খুব গুরুত্বপূর্ণ; যে এনার্জি আছে সেটা কিভাবে ডিস্ট্রিবিউট করতে হবে, সেটা ওর মধ্যে ভালোভাবে আছে। ওর রিকোভারি সিস্টেমও ভালো। আর যে বিশেষ দিক আছে, সেটা হচ্ছে এগজিলারেশন অ্যাবিলিট-৪০০ মিটারে এটা একটু লম্বা হতে হয়, সেটা ওর ভালোভাবে আছে।”
অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু দিয়েছেন জহিরের বেড়ে ওঠার পথটা মসৃণ করার প্রতিশ্রুতি।
“সবচেয়ে বড় যত্ন কিন্তু নিজেকে নিতে হবে। আমরা ওদের দরকারি সবকিছু সরবরাহ করতে পারব। আসলে ওদের প্রয়োজনের যোগান দেওয়া, ওদের অনুপ্রাণিত করা, দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলনের ব্যবস্থা করা, বড় স্বপ্ন দেখানো-এগুলোই আমাদের পক্ষে করা সম্ভব এবং আমরা করব কিন্তু সাফল্য পাওয়ার জেদটা অ্যাথলেটের থাকতে হবে।”