আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আবার ব্যর্থ আবাহনী, মোহামেডান

ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনী লিমিটেড নিজেদের ঐতিহ্য যা একটু ধরে রেখেছে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব তাও পারেনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের পাল্লায় সাম্প্রতিক ব্যর্থতা মাপলে এই দুই দল সমানে সমান! শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব, চট্টগ্রাম আবাহনীর মতো নবীন দল যেখানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে আলো ছড়াচ্ছে, সেখানে ঐতিহ্যবাহী দুই দল মলিন। কারণ হিসেবে কর্মকর্তা, কোচ, সাবেক খেলোয়াড়রা জনালেন সার্বিক ব্যর্থতার কথা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2017, 03:13 PM
Updated : 25 Feb 2017, 03:13 PM

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মলিন আবাহনী

চলতি মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্ট স্বাধানীতা কাপে আলো ছড়াতে পারেনি আবাহনী। পরের দুই আসরেই বাজিমাত। ফেডারেশন কাপ ও প্রিমিয়ার লিগের মুকুট উঠেছে মাথায়। দুই শিরোপা জয়ের দারুণ আত্মবিশ্বাস সঙ্গে নিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ খেলতে এসে এবারও শূন্য হাতে ফেরা। গতবারও গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়েছিল দলটি।

প্রিমিয়ার লিগ ২০০৬-০৭ মৌসুমে পেশাদার পর্বে ওঠার পর এ নিয়ে পাঁচবার শিরোপা জিতেছে আবাহনী; আগের পর্বে আছে আরও ১১টি। দলটির অর্জনের শোকেসে আছে ৯টি ফেডারেশন কাপ ও ২০১১ সালের ‍সুপার কাপ।

সীমানা পেরিয়েও একসময় নিজেদের সাফল্যের পতাকা উড়িয়েছে আবাহনী। ২০১০ সালে ভারতে জিতেছে বরেদোলোই কাপ, তার আগে ১৯৮৯ সালে ভারতের মাটিতেই জেতা আছে নাগজি ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব ফুটবলের শিরোপা। উল্টোপিঠে ব্যর্থতার ফিরিস্তি বেশ লম্বা। এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের তৃতীয় সারির টুর্নামেন্ট প্রেসিডেন্টস কাপে ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ আসরে খেলে একবারও গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি দলটি।

লিগের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ২০১৭ সালের এএফসি কাপে এবারই প্রথম খেলবে আবাহনী। লম্বা সময় পর আগামী মার্চে এএফসির টুর্নামেন্টে খেলবে দলটি। ঘরের মাঠে শেখ কামাল ক্লাব কাপের ব্যর্থতায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবাহনীর না পারার অতীতটা উঠে আসছে আলোচনায়। দলটির ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুও অতীত-বর্তমানের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে খেলোয়াড়-কর্মকর্তা দুই পক্ষেরই দায় দেখছেন।

“হতে পারে খেলোয়াড়দের মনোযোগের অভাবের কারণে সাফল্য আসে না। আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোয় আপনাকে প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে; তা না থাকলে আপনাকে মূল্য দিতে হবে।”

“টিম ম্যানেজমেন্ট খেলোয়াড়দের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিতে পারে কিন্তু তারা মাঠে খেলে না। তবে পুরো দায় খেলোয়াড়দেরও না। সবার দায় রয়েছে।”

একই পথের পথিক মোহামেডান

লিগের পেশাদার পর্বে বড়ই বিবর্ণ মোহামেডান; আগের পর্বের লিগে ১৯টি শিরোপা থাকলেও পেশাদার পর্বের শিরোপা এখনও অধরা। তবে লিগের ১৯টি ট্রফি, ১০টি ফেডারেশন কাপ, দুটি সুপার কাপ, ৩টি আগা খান গোল্ডকাপ মিলিয়ে ঘরোয়া ট্রফিকেসটা বেশ সাজানো। বিদেশের মাটিতেও অতীতে সাফল্য আছে। ১৯৯১ ও ৯২ সালে টানা দুইবার ভারত থেকে নাগজি কাপ জিতে ফিরেছিল দলটি।

১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালে এএফসি ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে খেলা মোহামেডান ২০০৬ সালে প্রথম এএফসি কাপ খেলে। অভিজ্ঞতা অবশ্য সুখকর ছিল না। মূল পর্বে ওঠার আগেই বিদায়। এর বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের হিসেব কষলে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের গত আসরে সেমি-ফাইনালে পথচলা থেমে যাওয়া। গতবারের মতো ভাঙাচোরা দল নিয়ে এবার ছিটকে যাওয়া গ্রুপ পর্ব থেকেই! বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও মোহামেডানের সাবেক ফুটবলার বাদল রায় ব্যর্থতার পেছনে সাংগঠনিক দায় দেখছেন বেশি।

“ক্লাবের প্রতি খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের কমিটমেন্ট, আন্তরিকতা আর আগের মতো নাই। বিশেষ করে মোহামেডানের সাংগঠনিক পরিস্থিতি তো চরম পর্যায়ে। যেখানে সাংগঠনিক বিপর্যয় থাকে, সেখান থেকে ভালো কিছু পাওয়া কঠিন। গত ১০-১২ বছর যাবৎ মোহামেডান যে দল গড়েছে, তা দিয়ে মোহামেডানের ঐতিহ্য ধরে রাখা অসম্ভব।”

শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব, চট্টগ্রাম আবাহনী পেরেছে

গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে টেনে নেওয়ার কাজটা ভালোভাবেই করতে পেরেছে এই দুই নবীন দল। তিনটি করে লিগ শিরোপা ও ফেডারেশন কাপ জেতা শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব ২০১১ সালে নেপালের মাঠে জিতেছে পোখরা কাপ। ২০১৪ সালে ভুটান থেকে ফেরে কিংস কাপের ট্রফি নিয়ে; একই বছরে ভারতের আইএফএ শিল্ডে কলকাতা মোহামেডানের কাছে হেরে হয় রানার্সআপ। ২০১৬ সালের এশিয়ার ক্লাব পর্যায়ের দ্বিতীয় সারির টুর্নামেন্ট এএফসি কাপে বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে প্লে-অফ পেরিয়ে গ্রুপ পর্বে ওঠার কৃতিত্বও দেখায় শেখ জামাল।

২০১২-১৩ মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলের ট্রেবল (প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ) জেতা শেখ রাসেল দেশের প্রথম দল হিসেবে ২০১৫ সালের এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপের মূল পর্বে খেলেছে। এখনও লিগ শিরোপা স্বাদ না পেলেও শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের প্রথম শিরোপা নিজেদের করে নেয় চট্টগ্রাম আবাহনী। দেশের একমাত্র দল হিসেবে এবারও দলটি উঠেছে সেমি-ফাইনালে। এই তিন নবীনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পাওয়ার কারণ হিসাবে টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানালেন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সাবেক ম্যানেজার আনোয়ারুল করিম হেলাল।

“টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বলবয় থেকে শুরু করে খেলোয়াড়, সবাইকে এক সুঁতোয় বেধে রাখতাম। যদি ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকে, তাহলে আপনি সাফল্য পাবেন।”

“আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পাওয়ার জন্য খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের অবদান ফিফটি-ফিফটি। টুর্নামেন্টের আগে সভাপতি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতেন। আমরা খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শতভাগ বের করে আনতাম।”

“একটা বিষয় লক্ষ্য করুন, আমাদের দলে ১৫-১৬ জন জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিল। তারা ক্লাবের হয়ে ভালো করেছে কিন্তু এরাই যখন জাতীয় দলে গিয়েছে, ভালো করতে পারেনি। কেন পারেনি? কারণ টিম ম্যানেজমেন্ট।”