‘ডাকলে অবশ্যই বাংলাদেশের হয়ে আবার খেলব’

অনেক সম্ভাবনা নিয়ে ২০১২ সালে জাতীয় ফুটবল দলে অভিষেক। এরপর আলোও ছড়াতে শুরু করলেন জামাল ভূইয়া। সেরা একাদশে জায়গা হলো পাকা। কিন্তু গত বছর জুলাইয়ে টম সেইন্টফিট দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়ে গেলেন অপাংক্তেয়! চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ খেলতে আসা জামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ফিরে গেলেন ভুটান, মালদ্বীপে ভরাডুবির দিনে। সে সময়ের ভুলগুলো বললেন নিজের মতো করে। জানালেন বাংলাদেশের জার্সিতে ফেরার আকুলতা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2017, 03:18 PM
Updated : 21 Feb 2017, 03:57 PM

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য প্রথম পর্বের প্রস্তুতি ক্যাম্পে এলেন না যে?

জামাল ভূইয়া: জানুয়ারিতে তারা (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) আমাকে ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়েছিল জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে যোগ দিতে। বলেছিলাম, যদি আপনারা আমাকে চান, তাহলে টিকেট পাঠান। কেননা, সেসময় আমি ডেনমার্কে ছিলাম। কিন্তু তারা টিকেট পাঠায়নি।

নাকি ভুটান ম্যাচের দল থেকে বাদ পড়ার কারণে অভিমান করে আসেননি। ওই সময় অনেক কথা রটেছে। আসলে বিষয়গুলো কিরকম ছিল?

জামাল: (বাদ দেওয়া নিয়ে) আমাকে বলা হয়েছিল, আমি মোটা হয়ে গেছি। খুব বেশি খাই! এবং এ কারণে দৌড়াতে পারব না। ভুটানের বিপক্ষে প্রথম লেগে আমি খেলতে পারিনি আসলে কার্ডের কারণে। কিন্তু ভুটান ম্যাচের আগে দল থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে আমাকে বলা হলো ওই কথাগুলো।

তারপর?

জামাল: প্রথম লেগ ড্র হলো এবং দল খুবই বাজে খেলেছিল। এরপর মালদ্বীপে গিয়ে দল হারল ৫-০ ব্যবধানে। সভাপতি (কাজী সালাউদ্দিন) আমাকে ডাকলেন। তার অফিসে গেলাম। তিনি অনেক প্রশ্ন করলেন; জানতে চাইলেন কিভাবে বাংলাদেশ মালদ্বীপের কাছে ৫-০ গোলে হারে? যতদূর মনে পড়ে, ওই সময় জাতীয় দল চার-পাঁচ ম্যাচে ১৩ গোল খেয়েছিল, দিয়েছিল একটি। নিজেদের মধ্যে হওয়া প্রস্তুতি ম্যাচেও হেরেছিল ৫-১ গোলে। সেটাও ছিল হতাশার। সভাপতির প্রশ্নে আমি কিছুই বলিনি। কীইবা বলতে পারতাম?

সেইন্টফিটের কারণেই কি মালদ্বীপ, ভুটানের ওই ভরাডুবি?

জামাল ভূইয়া: আমি মনে করি, সেইন্টফিটের কোচ হওয়াটা ছিল মহাভুল। দেখুন, তিনি বাংলাদেশ থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে গিয়েছিলেন, সেখানেও থাকতে পেরেছিলেন মাত্র ২৬ দিন! অবশ্য এটা আমার অভিমত, যে উপায়ে তিনি খেলাতে চেয়েছিলেন, প্রস্তুত করতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ সেটার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সেরকম খেলোয়াড়ও ছিল না।

যদি সঠিক খেলোয়াড়দের নিয়ে আবার ভুটানের বিপক্ষে খেলা হয়, তাহলে আমরা জিতব। কেননা সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা ওদের ৩-০ গোলে সহজেই হারিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা ভুটানের কাছে হারছি এবং আমি মনে করি সবটাই সঠিক কৌশল আর সঠিক খেলোয়াড় না খেলানোর কারণে।

এখন তো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নতুন কোচের খোঁজ করছে।

জামাল: আমি মনে করি, কোচ নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সিভি ভালো করে দেখে বিবেচনা করা উচিত। কোচ অতীতে কি করেছে, বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে কি- না এগুলো বিবেচনা করা উচিত। দুঃখ নিয়ে আমি আবারও বলছি সেইন্টফিটের নিয়োগটা ছিল মহা ভুল। কেননা, এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের মাত্র এক-দেড় মাস আগে সে এসেছিল। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে নতুন কৌশলে দলকে খেলাতে চেয়েছিল। এটা অসম্ভব।

কোচ হিসেবে কি তাহলে দেশি কাউকে পছন্দ আপনার?

জামাল ভূইয়া:
দেশি, বিদেশিদের মধ্যে পছন্দ করাটা কঠিন ব্যাপার। স্থানীয় কোচরা খেলোয়াড়দের বোঝেন। বিদেশিরা নতুন কিছু নিয়ে আসেন। তবে প্রধান কোচ যেই হোন না কেন, সহকারী কোচ অবশ্যই স্থানীয় হওয়া উচিত; কেননা, তারা খেলোয়াড়দের অনুভূতিটা বোঝেন।

কোচ নিয়ে তো তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর কোনো বিষয়ে?

জামাল: অরেকটা বিষয়, যেটা আমি বুঝিনা, কেন গত দুই তিন বছর জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা সবসময় (টুর্নামেন্ট চলাকালে) বাফুফে ভবনে থাকে। এটা কোনো ভালো বিষয় নয়। বিদেশি দলকে ভালো জায়গায় রাখা হয়, বেশি সুবিধা কেন দেওয়া হয় তা আমি বুঝি না। যখন আমরা ভারতে সাফ খেলতে গেলাম, বাইরের দলগুলোর ভালো টিম হোটেলে রাখা হয়নি। কিন্তু তাদের দলকে হিলটন বা র‌্যাডিসনে রেখেছিল, খুবই ভালো হোটেল। যখন এ নিয়ে বলা হলো, তারা বলল নিজেদের খরচে করে নিতে। বাফুফে উল্টো করে! যদি আপনি ভালো ফল চান, তাহলে আপনাকে নিজের দলকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে হবে।

এত অভিযোগ, অনুযোগ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে কি আপনাকে দেখা যাবে বাংলাদেশের জার্সিতে?

জামাল ভূইয়া: যদি তারা ডাকে, অবশ্যই আমি জাতীয় দলে ফিরব। আশা করি, তারা আমাকে ডাকবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলার জন্য। বিশ্বাস করি, আমরা এবার ভালো করব।

জাতীয় দলে জায়গা যদি না হয়? লিগে কি খেলবেন?

জামাল ভূইয়া: হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবেই লিগে আগামী মৌসুমে খেলতে যাচ্ছি।

কোন দলে? শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রেই নাকি?

জামাল ভূইয়া: শেখ রাসেলের কাছ থেকে আমি এখনও গত ডিসেম্বরের বেতন (৫ লাখ টাকা) পাইনি। এ বিষয়টা আগে সমাধান করতে হবে।

তাহলে কি চট্টগ্রাম আবাহনীতে?

জামাল ভূইয়া: এ মুহূর্তে কেউ আমাকে প্রস্তুাব দেয়নি। তো এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে আপাতত লক্ষ্যটাতো বলতে পারবেন।

জামাল: আমি শুধু শিরোপা জিততে চাই। এই টুর্নামেন্টটা ভীষণ কঠিন; কেননা প্রতিটি দলই শক্তিশালী।

এ কয় বছরে বাংলাদেশের লিগে সময়টা কেমন কাঁটল?

জামাল: যখন আমি শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবে যোগ দিলাম; ভালো ছিল। আমরা প্রায় প্রতি ম্যাচে জিতেছি। প্রায় সব দলকে হারিয়েছি। শেখ জামাল পরে ভেঙে গেলো, খেলোয়াড়রা দলছুট হলো। গত মৌসুমটা আমার জন্য কঠিন ছিল। তবে আমি মনে করি, এখনকার লিগ আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে।

কিন্তু কোনো ক্লাবের একাডেমি নেই। এভাবে লিগের শক্তি কতদিন টিকবে? ডেনমার্কে কেমন?

জামাল: ডেনমার্কে প্রতিটি ক্লাবের একাডেমি আছে। বয়সভিত্তিক দল আছে। এখানকার সেরা খেলোয়াড়রাই জাতীয় দলে যায়। এ প্রক্রিয়াগুলো বাংলাদেশেও থাকা উচিত। কিন্তু এখানে কি হয়, কেউ বলল, এই খেলোয়াড়রা ভালো। তো তাকে সুযোগ দেওয়া হলো। এটা কোনো পদ্ধতি না। বাফুফের উচিত ফুটবলার তুলে আনার জন্য পরিকল্পনা করা। নইলে আমরা আরও নিচের দিকে যাব।

জাতীয় দল নিয়ে হতাশা। ঘরোয়া ফুটবল নিয়েও ‍খুশি নন। তাহলে ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার কারণটা কি বলবেন?

জামাল: দেখুন, বাহরাইন ও ইন্দোনেশিয়ার ক্লাব থেকেও প্রস্তাব পেয়েছিলাম কিন্তু যাইনি। কেননা, এখানে আমার অনেক পরিচিতি আছে। বন্ধু আছে। হতে পারে ক্লাবগুলো আমাকে বেশি অর্থ দেয় বা আমি এখানে নিজের নামটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।