এই সুযোগ হারাতে চাই না: মামুনুল

শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব অংশ না নেওয়ায় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের প্রথম আসরে খেলা হয়নি মামুনুল ইসলামের। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে শেখ জামাল ছেড়ে চট্টগ্রাম আবাহনীতে যোগ দেওয়া এই তারকা মিডফিল্ডার জানালেন, এবার খেলার সুযোগটা হারাতে চান না। নিজের শহর চট্টগ্রামের ফুটবলপ্রেমীদের দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ দিতে চান।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2017, 01:34 PM
Updated : 18 Feb 2017, 01:34 PM

প্রশ্ন: গতবার বলেছিলেন কপালে নেই। এবার তো খেলছেন। নিজের শহরে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ খেলবেন। কেমন লাগছে?

মামুনুল ইসলাম: (হাসি) অবশ্যই ভালো লাগছে। নিজের শহরে খেলার আনন্দ অন্যরকম। বলে বোঝানো যাবে না। তবে যেহেতু চট্টগ্রাম আবাহনী ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন, সেহেতু টুর্নামেন্টটা আমাদের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। মুকুট ধরে রাখতে হলে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হবে।

চট্টগ্রামে খেলা, এটা আমার জন্য ভাগ্যের। এত বড় একটা টুর্নামেন্টে নিজের মাঠে খেলাটা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। আগে অনেকে চিনত না কিন্তু এখন অনেকেই চেনে। চট্টগ্রামের ছেলে। এতটুকু জানি চট্টগ্রামের মানুষ আমাদের সমর্থন করলে ভালো কিছু হবে।

খেলতে নামার আগে তো চোটে পড়েছেন। এখন কি অবস্থা টনসিলের?

মামুনুল: টনসিলের সমস্যা ঠিক হয়ে গেছে। এন্টিবায়োটিকের কারণে একটু দুর্বলতা আছে। তবে মনের শক্তিটা আছে এবং মনের শক্তি বড় শক্তি। ক্লাব হোক, দেশ হোক, দেশ তো আরও বড় ব্যাপার। আমরা সবসময়ই চাই জিততে। আমরা চাই না, কেউ আমাদের কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলুক। এই সুযোগ সবসময় পাব না। এই সুযোগটা হারাতে চাই না। এমনভাবেই খেলব, লোকে যেন বলে মামুনুল খেলছে।

লোকের কথা বলছেন..এতে কি নিজের ওপর প্রত্যাশার চাপ বাড়বে না?

মামুনুল: আসলে আমি বিষয়টা ওভাবে দেখি না। কেননা, লিগের ম্যাচও আমি এখানে খেলেছি। কোনো চাপ নেই এবং ওসব নিয়ে চিন্তাও করি না। আমি শুধু খেলাটা উপভোগ করি। আমি যখন মাঠে নামি, চেষ্টা করি সেরাটা দেওয়ার।

কিন্তু চট্টগ্রাম আবাহনীর ওপর তো মুকুট ধরে রাখার চাপ আছে?

মামুনুল: হ্যাঁ, সেটা তো আছেই, যেহেতু চট্টগ্রাম আবাহনী ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। তবে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না কে চ্যাম্পিয়ন হবে; আটটি দলই লড়াই করবে। বিদেশি দলগুলো আগের চেয়ে শক্তিশালী। আপনারা যদি দেখেন যে পাঁচটা দল এসেছে, তাদের মধ্যে একটা দক্ষিণ কোরিয়ার, কিরগজিস্তানের এফসি আলগাও আছে; এই দলটা বেশ শক্তিশালী বলে আমরা জানি। আফগানিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপের দলও ভালো। লড়াই করে মুকট ধরে রাখাই আমাদের জন্য বড় ব্যাপার হবে।

প্রথম ম্যাচে আপনাদের প্রতিপক্ষ শাহিন আসমায়ে। আফগানিস্তানের ঘরোয়া ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন দলটির বিপক্ষে কি চাওয়া নিয়ে নামবেন। 

মামুনুল: কাল আমাদের প্রথম ম্যাচ, এটা আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, প্রথম ম্যাচ জিতলে সেমি-ফাইনালে ওঠার কাজটা আমাদের জন্য ৬০-৭০ শতাংশ এগিয়ে যাবে। এই ম্যাচের ওপর আমাদের অনেক কিছু নির্ভর করবে। এটা আমাদের জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং।

অধিনায়ক হিসেবে দল এবং প্রস্তুতি নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?

মামুনুল: আমাদের দলটা ভালো; এ টুর্নামেন্টেও ভালো জায়গায় যেতে পারে। তবে প্রস্তুতি নিয়ে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। জাতীয় দলের ক্যাম্প থাকায় আমরা একসঙ্গে এক সপ্তাহও অনুশীলন করতে পারিনি। আমি মনে করি এটা একটা বাধা; আর কোনো বাধা নেই। অন্তত এক সপ্তাহ এক সঙ্গে অনুশীলন করতে পারলেও খুব ভালো হতো। তবে যাই হোক, মূল কথা হলো মাঠে আমাদের সেরাটা দিতে হবে।

কোচ বললেন রক্ষণ নিয়ে তিনি কিছুটা চিন্তিত। আপনি?

মামুনুল: কোচের এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা থাকা স্বাভাবিক। প্রিমিয়ার লিগে ডিফেন্সের কারণে কয়েকটা ম্যাচে আমাদের ভুগতে হয়েছে। আসলে রক্ষণটা জমাট থাকলে দলের ভালো ফল পাওয়ার ক্ষেত্রটা অনেক ভালোভাবে তৈরি হয়ে যায়। তবে আমি মনে করি, শুধু রক্ষণ নয়, সবাইকে ভালো খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস দলের সবার মধ্যে ভালো খেলার ক্ষুধাটা আছে। আমাদের অনেকের কাছে এটা প্রথম টুর্নামেন্ট।

টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বাকি দুই দল আবাহনী ও মোহামেডান নিয়ে কি ভাবছেন?

মামুনুল: বাংলাদেশের ফুটবল এখন যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে যদি আমাদের উৎরে আসতে হয়, তাহলে আমাদের এই টুর্নামেন্টে ভালো করতে হবে। চট্টগ্রাম আবাহনী, ঢাকা আবাহনী, মোহামেডান-এই তিনটা দলের পারফরম্যান্স আমাদের দেশের ফুটবলের জন্য এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ। আসলে আমাদের দেখাতে হবে, আমরা পিছিয়ে না। ওটা ছিল একটা অঘটন। ওখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই।

অঘটন বলতে জাতীয় দলের ভুটানের সেই ভরাডুবির কথা বলছেন?

মামুনুল: হ্যাঁ, ওটাকেই বোঝাতে চাইছি। এটা আসল না। ওটা অঘটন ছিল। কদিন আগে যেমন পিএসজি বার্সেলোনাকে চার গোল দিয়েছে। এটা পিএসজির জন্য স্বপ্নের ম্যাচ। আমি জানি না, পিএসজি এখনও ওই স্বপ্ন থেকে উঠে আসতে পেরেছে কিনা। কেননা, বার্সেলোনা আর পিএসজির ব্যবধান অনেক বেশি। ভুটান-আমাদের ব্যবধান অতটা না হলেও আমরা ৬০-৪০ এগিয়ে। এখন ওই দুঃস্বপ্ন থেকে উঠে আসার জন্য এই টুর্নামেন্ট আমাদের ফুটবলারদের জন্য একটা সুযোগ আমরা কতটুকু ভালো করতে পারি, সেটা দেখানোর।

চট্টগ্রামের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য কিছু বলবেন?

মামুনুল: আশা করি চট্টগ্রামের মানুষ মাঠে আসবে। দলকে সমর্থন করবে। তারা আমাদের সমর্থন দিলে সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণার হবে।