‘জয়ের কথা ভেবেই খেলতে নেমেছিলাম’

আব্দুল্লাহ আল রাকিব ও এনামুল হোসেন রাজীব-এই দুই গ্র্যান্ডমাস্টারকে ত্রয়োদশ রাউন্ডের আগে আলাদা করা যায়নি। শেষে এসে বাজিমাত করলেন রাজীব, জাতীয় দাবায় ১০ বছর পর শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ফিরে পেলেন। মাঝে লম্বা বিরতি, অবশেষে আবারও চূড়ান্ত সাফল্য। বাঁধভাঙা আনন্দের মাঝে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই গ্র্যান্ডমাস্টার জানালেন, শেষ রাউন্ডে জয় ছাড়া আর কোনো কিছুই ভাবেননি তিনি।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2016, 11:01 PM
Updated : 23 Nov 2016, 03:02 PM

প্রশ্ন: ১৯৯৭ সালে প্রথম; এরপর ২০০৬ সালে দ্বিতীয়। এবার জাতীয় দাবায় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ফিরে পেলেন দশ বছর পর। এত দেরিতে ফিরে পাওয়ায় কেমন লাগছে?

এনামুল হোসেন রাজীব: এটা তো অবশ্যই আমার জন্য একটা বিশাল ব্যাপার। মাঝে একটা গ্যাপ পড়েছিল। এরপর যখন ফিরলাম, তখন থেকে আসলে আমার খেলায় উন্নতি করার চেষ্টা করছিলাম; গত অলিম্পিয়াডে যেমন খেলা ভালো হয়েছে, সেই হিসেবে এখানেও ভালো খেলার ইচ্ছা ছিল। চ্যাম্পিয়ন হব কিনা এ ভাবনা ছিল না, নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলার ইচ্ছা ছিল এবং সেটাই খেলেছি। চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবশ্যই ভালো লাগছে। এটা আসলেই অনেক আনন্দের বিষয়।

প্রশ্ন: দ্বাদশ রাউন্ড শেষে আপনার ও রাকিবের পয়েন্ট ছিল সমান। রাকিবের তুলনায় আপনার প্রতিপক্ষও ছিল কঠিন; গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ। এমন কঠিন পরিস্থিতি সামলালেন কিভাবে?

এনামুল হোসেন রাজীব: আসলে আমাকে জিততে হবে, এটা ভেবেই খেলতে বসেছিলাম। নিয়াজ ভাইয়ের বিপক্ষে কালো (ঘুটি) নিয়ে জিততে হবে, এটা খুব কঠিন একটা ব্যাপার। পরে যখন দেখলাম ওদের (রাকিব-রেজাউল হক) ম্যাচটা ড্র হয়ে গেলো, তাতে আমি আরও নির্ভার হয়ে গেছি।

প্রশ্ন: ফিদে মাস্টার রেজাউলের সঙ্গে রাকিবের ড্রটাই আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল বলতে চাইছেন কি?

এনামুল হোসেন রাজীব: আসলে ওই সময় আমার পজিশনও বেটার ছিল এবং সেটা নিয়াজ ভাই একটা ভুল চাল দেওয়ার কারণে। তখন ভেবেছিলাম, যদি নিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে ড্র করি, তাহলেও তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আরেকটা ম্যাচ খেলতে পারব। রাকিব ও আমার পয়েন্ট যেহেতু টাই থাকবে; এ কারণেই আমি অতটা চাপ নিয়ে খেলিনি।

প্রশ্ন: একেবারেই কি চাপ নিয়ে খেলেননি?

এনামুল হোসেন রাজীব: ঠিক তা নয়। তবে, গত ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ও জোনাল পর্যায়েও নিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে খেলেছিলাম এবং ড্র করেছিলাম।

প্রশ্ন: একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ। আজকের ম্যাচ নিয়ে রাতে কি ভেবেছিলেন?

এনামুল হোসেন রাজীব: আপনারা জানেন কিনা জানি না, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা চলতেছে। কাল রাতে ম্যাগনাস কার্লসেন বনাম সের্গেই কারইয়াকিনের ম্যাচ ছিল। খেলাও হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। রাত একটায় সময় খেলা শুরু হয়। দেখা যাচ্ছে, খেলা শেষ হতে হতে চারটা-পাঁচটা বেজে যায়; ওই খেলা দেখে দিনের বেলায় খেলতে নামি। আমি কিন্তু ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ওই খেলা দেখা বাদ দেইনি। এ কারণেই ঘুমের একটু সমস্যা হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো ভাবনা ছিল না। 

প্রশ্ন: এক সময়তো আপনার রেটিং পয়েন্ট ২ হাজার পাঁচশর ওপরে ছিল। এখন অনেক কমেছে। আর যে গ্যাপের কথা বলছিলেন...।

এনামুল হোসেন রাজীব: আমার রেটিং এখন ২৪৪৩। ওই যে যেটা বললাম, খেলার গ্যাপ পড়ার কারণে আমাদের রেটিংও কমে গেছে অনেকটা। ২৫শ’র ওপরে (২৫৩৯) রেটিং ছিল একসময়। এখন আমার লক্ষ্য অল্প সময়ের মধ্যে ২৫শ’র ওপরে রেটিং তুলে নেওয়া।

প্রশ্ন: আপনি গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছেন আট বছর আগে। গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পর প্রথম জাতীয় দাবায় সেরা হলেন। বিষয়টা নিয়ে কি অতৃপ্তি নেই?

এনামুল হোসেন রাজীব: ২০০৮ সালে আমি যখন গ্র্যান্ডমাস্টার হই, ওই সময়টাতে আমরা আসলে ভালো খেলছিলাম এবং বাংলাদেশের দাবাও খুব ভালো অবস্থানে ছিল। সেসময় কিছু ঘটনা ঘটে, যেটা আসলে আপনারা জানেন, সে কারণে আমাদের সবারই খেলার পতন হয়েছিল। ওটা না ঘটলে আমরা খেলোয়াড় হিসেবে আরও ভালো করতে পারতাম বা আমাদের সম্ভাবনা অনুযায়ী ভালো ফল করতে পারতাম।

১৯৯৪ থেকে শুরু করেছি; এরপর ১৯৯৫ থেকে ন্যাশনালে খেলার সুযোগ পাই। (ফেডারেশনের নানা জটিলতা) মাঝের গ্যাপ বাদ দিলে ‘৯৫ থেকে ২০১৬ এর ভেতরে আমি বোধহয় দুইবার বা তিনবার খেলিনি। তবে নিয়মিত খেললে আরও ভালো করতাম।

প্রশ্ন: এখন তাহলে আগামী নিয়ে ভাবনা কি? ফেডারেশনের কাছে চাওয়াটাই বা কি?

এনামুল হোসেন রাজীব: এ মুহূর্তে আমাদের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে হবে, বিভিন্ন ওপেন টুর্নামেন্ট আছে। এই কমিটি এখন যে কাজগুলো করছে, তা আমাদের জন্য বেশ ভালো। দাবার ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। তারা যদি আমাদের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলতে পাঠায়....ইউরোপে খেলাটা এ মুহূর্তে স্পন্সর ছাড়া কঠিন, ওরকম টুর্নামেন্টে যদি আমরা চার-পাঁচজন খেলোয়াড় খেলতে চাই কিংবা তারও বেশি অংশ নিতে চায়, সেটা সম্ভব হলে আমার মনে হয়, সেটা আমাদের দাবার জন্য ভালো হবে।