পরিসংখ্যানে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ

বিশ্ব ফুটবলে সম্ভাব্য সব পুরস্কারই জিতেছে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। ফুটবলকে তারা উপহার দিয়েছে অসাধারণ কিছু খেলোয়াড়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই ফুটবল পরাশক্তি যখন মুখোমুখি হয় তখন মনে রাখার মতো কিছুই উপহার দেয় ফুটবল রোমাঞ্চপিয়াসীদের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2016, 03:27 PM
Updated : 10 Nov 2016, 03:43 PM

ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার মুখোমুখি লড়াইয়ের কিছু বিষয়:

নেইমার বনাম মেসি

বার্সেলোনায় দারুণভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন এই জুটি কিন্তু এবার তারা প্রতিপক্ষ। মেসি যেহেতু বেশি সময় ধরে খেলছেন তাই পরিসংখ্যানের দিক থেকে মেসি এগিয়ে আছেন।

আর্জেন্টিনার হয়ে ১১৪ ম্যাচ খেলে ৫৬টি গোল করেছেন মেসি। এই বছরের গোড়ার দিকে গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তিনি। ব্রাজিলের হয়ে ৭৩ ম্যাচ খেলে ৪৯ গোল নিয়ে দেশটির চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে আছেন নেইমার। সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলের চেয়ে ২৮ গোল পিছিয়ে তিনি।

মেসি-নেইমারের কেউই এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে সিনিয়র পর্যায়ে কোনো শিরোপা জেতেননি। তবে দুজনেই অলিম্পিক শিরোপা জিতেছেন; মেসি জিতেছেন ২০০৮ সালে আর নেইমার জিতেছেন এই বছর ব্রাজিলের অধিনায়ক হিসেবে। মেসি ২০০৫ সালে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জেতেন।

ব্রাজিলের বিপক্ষে ৭ ম্যাচ খেলে ২০১২ সালে করা একটি হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল করেন মেসি। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৮ ম্যাচে ২ গোল করেন নেইমার।

দুই নতুন কোচের লড়াই

এদগার্দো বাউসা দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্জেন্টিনা কেবল ৪টি ম্যাচ খেলেছে, চারটিই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। তিতের বেলায়ও ঠিক তাই। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালের ম্যাচটি তাদের দুজনেরই সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে।

এখন পর্যন্ত খেলা চারটি করে ম্যাচে দুই কোচের অভিজ্ঞতা দুই রকমের। তিতে টানা চার ম্যাচে জয় পেয়েছেন আর ব্রাজিলও আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ। উরুগুয়ের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করা বাউসার আর্জেন্টিনা ভেনেজুয়েলা ও পেরুর সঙ্গে ড্র করে আর প্যারাগুয়ের কাছে হেরে যান।

ক্লাবের অর্জনের দিক থেকে বাউসা একুয়েডরের লিগের দুটি শিরোপার সঙ্গে কোপা লিবের্তাদোরেসের দুটি শিরোপা জিতেছেন। এর সঙ্গে আছে লিগা দে কিতো, সান লরেন্সো আর রেকোপা সুদামেরিকানা। একমাত্র কোচ হিসেবে তিনি চারটি ভিন্ন ক্লাবকে কোপা লিবের্তাদোরেসের সেমি-ফাইনালে তোলার কৃতিত্ব দেখান।

তিতে করিন্থিয়ান্সের হয়ে দুটি ব্রাজিলিয়ান লিগ, একটি করে কোপা লিবের্তাদোরেস ও রেকোপা সুদামেরিকানা আর ক্লাব বিশ্বকাপ জেতেন। গ্রেমিওর হয়ে কোপা ব্রাসিল, ইন্তেরনাসিওনালের হয়ে কোপা সুদামেরিকানা এবং বেশ কয়েকটি ক্লাবের হয়ে ব্রাজিলিয়ান স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।

কোচিং ক্যারিয়ারে এর আগে বাউসা আর তিতে একবারই মুখোমুখি হন। এ বছরের সাও পাওলো স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে তিতের করিন্থিয়ান্স ২-০ গোলে বাউসার সাও পাওলোকে হারিয়েছিল।

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা

আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯১৪ সালে বুয়েনস আইরেসে একটি প্রীতি ম্যাচে। সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এর পর থেকে দেশ দুটির মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যান খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাময়। ফিফা স্বীকৃত ম্যাচে এ পর্যন্ত মুখোমুখি লড়াইয়ে ব্রাজিলের জয় ৩৯টিতে, আর্জেন্টিনা জিতেছে ৩৭টি, ২৬টি ম্যাচ ড্র। তবে দুই দলেরই গোল সমান ১৫৯টি করে।

ফিফা স্বীকৃত ম্যাচ আর অন্যান্য ম্যাচগুলো মিলিয়ে দুই দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন যে হিসেবে দিয়েছে তা অনুযায়ী আর্জেন্টিনার জয় ৪১টি। আর ব্রাজিল জিতেছে ৪০টি ম্যাচ, ২৬টি ম্যাচ হয়েছে ড্র। গোল করার দিক থেকে ১৭৫-১৬৭ ব্যবধানে এগিয়ে আছে আর্জেন্টিনা।

গোলে এগিয়ে পেলে

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা ১০ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন পেলে, এর মধ্যে ১৯৬৩ সাল কোপা রোকায় ৫-২ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি।

পেলে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা তার ১০ ম্যাচের চারটিতে জেতেন, দুটি ড্র করেন আর চারটিতে হারেন। বিশ্বকাপে মারাদোনা ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছেন, তবে পেলে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কখনো খেলেননি।

বড় শিরোপা বেশি ব্রাজিলের

বিশ্বকাপ, কনফেডারেশন্স কাপ আর অলিম্পিক ফুটবল-এই তিন টুর্নামেন্টই জেতা তিনটি দেশের দুটি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। এই কীর্তি গড়া বাকি দেশটি ফ্রান্স। সিনিয়র দলের শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে (অলিম্পিক হিসেবে নেই) ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার শিরোপা সমান ১৯টি।

ব্রাজিল ৫টি বিশ্বকাপ জিতেছে, আর্জেন্টিনা দুটি। তবে কোপা আমেরিকা জয়ে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ১৪ বার মহাদেশীয় সেরার মুকুট পরে তারা, ব্রাজিল জেতে ৮ বার। ব্রাজিলের দুটি প্যানআমেরিকান শিরোপা জেতার বিপরীতে আর্জেন্টিনা জিতেছে একটি। ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ ব্রাজিল জিতেছে চারবার, আর্জেন্টিনা একবার।

আর্জেন্টিনার ১৯৯০ সালের জয়

সুযোগ তৈরির দিক থেকে ম্যাচটি ব্রাজিলই নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু মারাদোনাকে তারা যেভাবে সামলেছিল তার জন্য অনেক সমালোচনাও শুনতে হয়েছে তাদের। ৮০তম মিনিটে গিয়ে মারাদোনা মুক্ত হতে পেরেছিলেন, তিনটি চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে ক্লাওদিও কানিজিয়াকে বল দিয়েছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনাকে জেতাতে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেছিলেন কানিজিয়া।

মুখোমুখি লড়াইয়ে আর্জেন্টিনা সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জেতে ১৯৪০ সালে, ৬-১ গোলে। আর ব্রাজিলের সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়টি ৬-২ গোলে, ১৯৪৫ সালে।

ব্রাজিলের স্মরণীয় জয়

অনেকের মতে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ব্রাজিল তাদের সবচেয়ে স্মরণীয় জয়টি পেয়েছিল ১৯৮২ বিশ্বকাপ। বার্সেলোনায় ব্রাজিলের মুখোমুখি হওয়ার আগে ইতালির কাছে হেরে এসেছিল আর্জেন্টিনা। এই কারণে ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জিততেই হতো।

এদেরের নেওয়া ফ্রি-কিক ক্রসবারে লেগে ফিরে আসার পর বুটের টোকায় একাদশ মিনিটেই ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন জিকো। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে ফালকাওয়ের ক্রস থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সের্জিনিয়ো। এর ৯ মিনিট পর জিকোর অসাধারণ এক পাসে জুনিয়র স্কোরলাইন ৩-০ করেন। শেষ দিকে বিস্ময়কর এক শটে রামন দিয়াস আর্জেন্টিনার হারের ব্যবধানই কেবল কমাতে পারেন।