রিওতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে সামান্য লক্ষ্যপূরণ

সিদ্দিকুর রহমানের গলফ দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশের রিও দে জেনেইরো অলিম্পিক। বিশ্ব ক্রীড়ার সর্বোচ্চ আসরে ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলতে দুই সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও সোনিয়া আক্তার টুম্পার ‘ছোটো লক্ষ্য’ পূরণ। ফল যাই হোক বাংলাদেশের প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জনই সিদ্দিকুরের জন্য বড় সাফল্য। বাকিদের সঙ্গী বরাবরের মতোই অংশগ্রহণ অভিজ্ঞতা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2016, 07:49 PM
Updated : 16 Oct 2016, 11:15 AM

লক্ষ্যে তীর যায়নি শ্যামলীর

৫ অগাস্ট অলিম্পিকের পর্দা ওঠার আগেই আগেই শুরু তীর-ধনুকের লড়াই। সামব্রোদোমোয় মেয়েদের ব্যক্তিগত ইভেন্টের র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে ৭২০-এর মধ্যে ৬০০ স্কোর গড়লেন শ্যামলী। ৬৪ জনের মধ্যে হলেন ৫৩তম। র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডেই ২০১৫ সালে ব্যাংককে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে গড়া ৬১৮ স্কোর ছাপিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায় শ্যামলীর।

র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে খারাপ করায় সেরা ৩২-এ ওঠার লড়াইয়ে পান অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। মেক্সিকোর গাব্রিয়েল বায়ার্দোর কাছে ৬-০ পয়েন্টে হেরে অলিম্পিক শেষ তার। প্রথম সেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৮-২৭ স্কোরে হারেন। দ্বিতীয় সেটে ২৮-২৩ ও তৃতীয় সেটে ২৮-২৫ স্কোরের হার ছিটকে দেয় শ্যামলীকে।

অথচ প্রস্তুতি ছিল ভালোই। অলিম্পিকের আগে টঙ্গীতে লম্বা সময় ধরে চলেছে অনুশীলন; আর সব ডিসিপ্লিনের চেয়ে বাংলাদেশে তীরন্দাজরাই বলতে গেলে সবচেয়ে বেশি অনুশীলনের সুযোগ পায়। কিন্তু রিওতে নিজের সেরাটা মেলে ধরতে পারেননি শ্যামলী।

‘চেনা রেঞ্জে’ অচেনা বাকি

অলিম্পিকের আগে ব্রাজিল ও জার্মানির শুটিং বিশ্বকাপে খেলেছেন আব্দুল্লাহ হেল বাকি। বিদেশি কোচের অধীনে নিবিড় অনুশীলন করেছেন, যেখানে বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছিল স্নায়ুর লাগাম ধরে রাখার কৌশলটাও আয়ত্ব করা। রিওর অলিম্পিক শুটিং রেঞ্জও একেবারে অচেনা ছিল না। কিন্তু চেনা রেঞ্জে ফিরেও বাংলাদেশের এই শুটার হতাশ করেছেন। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৬২১.২ স্কোর গড়ে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড থেকে ছিটকে পড়েন। ৫০ জনের মধ্যে হন ২৫তম। গুঁড়িয়ে যায় জার্মানির বিশ্বকাপে গড়া ৬২৪.৮ স্কোরকে ছাপিয়ে যাওয়ার স্বপ্নও। এমনকি গত ব্রাজিল বিশ্বকাপে গড়া ৬২২.৮ স্কোরও এবার চেনা রেঞ্জে করতে পারেননি বাংলাদেশের এই শুটার!

গ্লাসগো কমনওয়েথ গেমেস রুপা জেতা বাকি ঘরের রেঞ্জে হরহামেশাই ৬২৫-৬২৮ স্কোর করেন; গুলশানের রেঞ্জে তার সর্বোচ্চ ৬৩১.৭। সে হিসেব কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে মেলাতে পারেননি বাকি। যে আট জন ফাইনালে কোয়ালিফাই করেন, তাদের মধ্যে অষ্টম জন স্কোর ৬২৫.৫।

সাগর-সোনিয়ার ‘ছোটো লক্ষ্য পূরণ’

প্রস্তুতির হিসেবে অলিম্পিকের আগে স্কলারশিপ নিয়ে থাইল্যান্ডে ছিলেন সাগর; কোচ পার্ক তায়ে গুনের অধীনে মিরপুরের সুইমিংপুলে সোনিয়া। রিওর সুইমিংপুলে হিট থেকে ছিটকে পড়ার আগে দুজনই নিজেদের সেরা টাইমিং গড়েন।

৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ২৩ দশমিক ৯২ সেকেন্ডে সাঁতার শেষ করেন সাগর। হিটে আট জনের মধ্যে পঞ্চম হওয়া ২৩ বছর বয়সী এই সাঁতারু সব মিলিয়ে ৮৫ জনের মধ্যে হন ৫৪তম। আগের সেরা ছিল জাতীয় পর্যায়ে ২৪ দশমিক ০২ সেকেন্ড। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক (২৪.৬৪ সেকেন্ড) ও রিও অলিম্পিকের কোয়ালিফিকেশন টাইমও (২৪.৪৩ সেকেন্ড) হিটে পেছনে ফেলেন সাগর।

কথা রেখেছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সাতটি সোনা জেতা সোনিয়াও। বাংলাদেশের সোনিয়ার সেরা টাইমিং ছিল ৩০.৮৫ সেকেন্ড। রিওতে সাঁতরেছেন ২৯ দশমিক ৯৯ সেকেন্ডে। হিটে আট প্রতিযোগীর মধ্যে তৃতীয় এবং সব মিলিয়ে ৮৮ জনের মধ্যে ৬৯তম হওয়া সোনিয়া গত বছর রাশিয়ার কাজানে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের টাইমিংয়ের (৩০.৮৯ সেকেন্ড) চেয়েও ভালো করেছেন।

শিরিন-মেজবাহর বাজে সময়

প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে যাওয়ার উচ্ছ্বাস নিয়ে রিওতে যাওয়া বাংলাদেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ ও দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার ১০০ মিটার স্পিন্টে হতাশ করেছেন। দুজনই বাদ পড়েছেন মূল হিটের আগে। উসাইন বোল্ট বা শেলি অ্যান ফ্রেজার প্রাইসের মতো সেরাদের পাশে দৌড়ানোর সুযোগটা হারিয়েছেন তারা।

১২ দশমিক ৯৯ সেকেন্ড নিয়ে প্রিলিমিনারি হিট থেকে ছিটকে পড়েন শিরিন। আট জনের মধ্যে পঞ্চম আর সব মিলিয়ে প্রিলিমিনারি হিট থেকে ২৪ জনের মধ্যে হন ১৭তম। তার প্রিলিমিনারি হিট থেকে যে দুজন ১০০ মিটারের মূল হিটে অটোমেটিক কোয়ালিফাই করেছেন, তাদের মধ্যে দ্বিতীয়জন ১২ দশমিক ৩৪ সেকেন্ড সময় নেন। অথচ শিরিন তার সেরা টাইমিং গত এস গেমসের ১১ দশমিক ৯৯ সেকেন্ডের কাছে যেতে পারলেও মূল হিটে উঠতেন।

দেশের চার বারের দ্রুততম মানব মেজবাহরও প্রথম অলিম্পিক মিশন শেষ প্রিলিমিনারি হিট থেকেই। ১১ দশমিক ৩৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে চতুর্থ হয়ে। গত এসএ গেমসে ১০ দশমিক ৭২ সেকেন্ড সেরা টাইমিং করা মেজবাহ প্রিলিমিনারি হিটে মোট ২১ জনের মধ্যে ১৪তম হন।  তার প্রিলিমিনারি হিট থেকে সেরা যে দুজন মূল হিটে অটোমেটিক কোয়ালিফাই করেছেন, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় জনের টাইমিং ১০ দশমিক ৭৬ সেকেন্ড। তাই সাফ গেমসে তার টাইমিংটা করতে পারলেও মূল হিটে উঠতেন বাংলাদেশের এই দ্রুততম মানব।

হতাশায় শেষ সিদ্দিকুরের

দেশের প্রথম গলফার হিসেবে এশিয়ান ট্যুর জেতা, গলফ বিশ্বকাপ খেলা, প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন, এমন অনেক কীর্তির কারণে সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল বেশি। ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের পতাকাও ছিল এই গলফারের হাতে। কিন্তু রিওর কোর্সে তার শুরুটাই হলো বাজে; পারের চেয়ে ৪ শট বেশি দিয়ে।

৬০ জনের মধ্যে প্রথম রাউন্ডে ৫৬তম। দ্বিতীয় রাউন্ডে পারের চেয়ে এক শট কম খেলে উঠে এলেন ৪৬তম স্থানে। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে ছন্দ হারিয়ে পারের চেয়ে চার শট বেশি খেলে ফের নেমে গেলেন ৫৫তম স্থানে। ২০১০ ও ২০১৩ সালের এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জেতা সিদ্দিকুর অলিম্পিক শেষ করলেন সব মিলিয়ে পারের চেয়ে ১১ শট বেশি খেলে ৫৮তম হয়ে! তবে অলিম্পিকে বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের সাফল্য বিবেচনায় সিদ্দিকুরকেই রাখতে হবে সবার উপর।