ভারতের ৩ দাবাড়ুকে হারানোর আনন্দই বেশি ফাহাদের

বয়স তের ছুঁইছুঁই। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। কিন্তু বয়স আর স্কুলের গণ্ডিতে আটকে নেই ফাহাদ রহমান। দুবাই জয় করে ঘরে ফিরেছেন দেশের এই সর্বকনিষ্ঠ ফিদে মাস্টার। ভ্রমনক্লান্তি নিয়েই দুবাইয়ে জুনিয়র চেস টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তৃপ্তি, ভারতের তিন দাবাড়ুকে হারানোর আনন্দ আর দেশের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার স্বপ্নের কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন ফাহাদ।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 04:06 PM
Updated : 29 July 2016, 02:25 AM

প্রশ্ন: দুবাই থেকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরলেন। বিজয়ীর বেশে এভাবে ফেরাটা নিশ্চয় খুব আনন্দ দেয়?

ফাহাদ রহমান: হ্যাঁ। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। নয় রাউন্ডে সাত ম্যাচে জিতেছি। দুটিতে করেছি ড্র। একটাতেও হারিনি, তাই সব কিছু মিলিয়ে একটু বেশি খুশি আমি।

প্রশ্ন: টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কি অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটা দেখেছিলেন?

ফাহাদ রহমান: ওভাবে ভাবিনি। তবে আত্মবিশ্বাস তো ছিলই। টানা পাঁচ রাউন্ড জয়ের পর সেটা আরও বেড়ে যায়। ষষ্ঠ রাউন্ডে ড্র করলাম কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারাইনি। এমনকি শেষ রাউন্ডে প্রতিপক্ষ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হোসানি ওমরান কিন্তু বিশ্বাস ছিল আমি পারব।

দেশের বাইরে এটা আমার পঞ্চম স্বর্ণপদক। এর আগে ২০১২ সালে কোলকাতায় (এশিয়ান স্কুল চেস টুর্নামেন্ট অনূর্ধ্ব-১০) আর দিল্লিতে র‌্যাপিড দাবায় সেরা হয়েছিলাম। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ডে এশিয়ান এইজ গ্রুপ-১০ টুর্নামেন্টে, মালয়েশিয়ায়  অনূর্ধ্ব-১২ র‌্যাপিড চেস ফেস্টিভ্যালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।

প্রশ্ন: দুবাইয়ে এবারের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভালো লাগা....

ফাহাদ রহমান: ভারতের তিন জন সিদ্ধার্থ বালাজি, আরিয়ান রঞ্জন ও রাহুল শ্রীবাস্তবের বিপক্ষে খেলেছি; তিন জনকেই হারিয়েছি। এটাই আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন: এই ভালো লাগার কারণ?

ফাহাদ রহমান: আসলে ওরা (ভারত) আমাদের চেয়ে দাবায় অনেক বেশি এগিয়েছে। আমি ভারতে অনেকগুলো টুর্নামেন্ট খেলেছি। কলকাতা, দিল্লিতেও অনেক দাবাড়ু। আমাদের এত বেশি খেলোয়াড় নেই। ওরা যেহেতু আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে, ওদের হারাতে বেশি ভালো লাগে।

প্রশ্ন: পেছন থেকে সামনের সারিতে আসতে করণীয় কি?

ফাহাদ রহমান: ফেডারেশন এখন অনেক টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে। তবে, আরও বেশি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো বাড়াতে হবে। গ্রাম থেকে খুঁজে খুঁজে খেলোয়াড় বের করে আনতে হবে। এছাড়া ভালো ভালো স্পন্সর খুঁজে আনাও ফেডারেশনের দায়িত্ব। ভালো স্পন্সর আনতে পারলে, মোটা অঙ্কের প্রাইজমানির টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে আমার বিশ্বাস অনেকে দাবা খেলতে আগ্রহী হবে।

প্রশ্ন: দেশের সর্বকনিষ্ঠ ফিদে মাস্টার হয়েছেন। আগামীর লক্ষ্য কি দেশের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদকে পেছনে ফেলা?

ফাহাদ রহমান: হ্যাঁ। এ মুহূর্তে আমার রেটিং পয়েন্ট ২১৫৭। তিনটি আইএম নর্ম আর ২৪০০ রেটিং পয়েন্ট হলে আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে পারব। এরপর গ্র্যান্ডমাস্টার....নর্ম ও ২৫০০ রেটিং লাগবে। দুবাইয়ে খেলে ৫০ রেটিং পয়েন্ট বেড়েছে। এ ধরনের টুর্নামেন্টে খেললে এবং ভালো রেটিংধারী খেলোয়াড়দের হারাতে পারলে রেটিং বেশি বাড়ে। আশা করি, আমি পারব।

প্রশ্ন: লক্ষ্যপূরণের পথটা আপনার জন্য কতটা সহজ?

ফাহাদ রহমান: এটা কঠিন হবে না। এখন ফেডারেশন অনেক ভালো ভালো টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে। অনেক উৎসাহ দিচ্ছে। এটা চালু থাকলে দাবাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আমার লক্ষ্যটাও পূরণ হবে।

প্রশ্ন: দাবায় হাতেখড়ি হলো কিভাবে? আর এখন কাকে সামনে রেখে স্বপ্ন দেখেন?

ফাহাদ রহমান: শুরুতে মোবাইলে দাবা খেলতাম। ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথান আনন্দের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর পড়ার পর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। আব্বু-আম্মুও চেষ্টা করতে থাকেন আমাকে নিয়ে। এভাবেই দাবার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। আমার আদর্শ নরওয়ের গ্র্যান্ডমাস্টার ম্যাগনাস কার্লসেন। তার মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখি।

প্রশ্ন: একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। দাবাড়ু ফাহাদের একটা দিন..

ফাহাদ রহমান: এই ধরুন, ঘুম থেকে উঠি। ফ্রেশ হই। খাওয়া-দাওয়া করি। এরপর স্কুলে যাই। স্কুল থেকে ফিরে খেলতে বসি। স্কুল না থাকলে ওই সময়টা খেলি। দাবা নিয়ে পড়াশোনা করি। আবার খেলি। আবার পড়ি। ল্যাপটপে খেলি। সাত-আট ঘণ্টা দাবার বোর্ডে কাটে। এভাবেই দিন কাটে আমার।

প্রশ্ন: দিনে সাত-আট ঘণ্টা প্রস্তুতি কি সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার, কার্লসেন হতে যথেষ্ঠ?

ফাহাদ রহমান: আমার মনে হয়, প্রস্তুতির সময়টা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। খেলাটা আপনি কতটা বুঝছেন, সেটাই আসল। অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন হয় যে, আপনি এক ঘণ্টা প্রস্তুতি নিয়েও ভালো করছেন, কারণ আপনি খেলাটা বোঝেন। যদি কৌশলগুলো না বোঝেন, তাহলে দশ ঘণ্টা খেলেও তা কাজে লাগাবে না।

প্রশ্ন: স্কুলে ফাহাদের দাবাড়ু বন্ধু?

ফাহাদ রহমান: গুলশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছি। দাবা খেলি, সহপাঠীরা খুব ভালো চোখে দেখে। তবে স্কুলে বন্ধুদের কেউ দাবা খেলে না। আমার দাবাড়ু বন্ধুরা সবাই বিদেশি।

প্রশ্ন: দাবার বাইরে প্রিয় খেলা? প্রিয় খেলোয়াড়?

ফাহাদ রহমান: সেরকম প্রিয় খেলা নেই। তবে ক্রিকেট দেখতে ভালো লাগে। মুশফিকুর রহিমের খেলা ভালো লাগে তার স্টাইলের কারণে। ইদানিং মুস্তাফিজুর রহমানকে খুব ভালো লাগে।