১৯৯২ সাল পর্যন্ত অলিম্পিক ফুটবলে কেবল অপেশাদার ফুটবলাররাই খেলতেন। সর্বকালের সেরা ফুটবলার বিবেচিত ব্রাজিলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলের তাই এই প্রতিযোগিতাতে খেলাই হয়নি।
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ব্রাজিল দলে খেলেন সত্তরের শেষভাগ থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটির মাঝমাঠের অন্যতম বড় তারকা ফালকাও। ১৯৮৮ সালে ব্রাজিলের অলিম্পিক দলে ছিলেন রোমারিও। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্য তাদের কেউই ব্রাজিলকে এনে দিতে পারেননি।
২৩ বছরের নিচে পেশাদার ফুটবলাররা অলিম্পিকে খেলার অনুমতি পাওয়ার পরও ব্রাজিল এই প্রতিযোগিতায় সর্বজয়ী রূপটা দেখাতে পারেনি। সব মিলিয়ে অলিম্পিকের মূল পর্বে ১২বার খেলেছে ব্রাজিল। সেরা ফল ১৯৮৪, ১৯৮৮ ও ২০১২ সালে রানার্সআপ হওয়া।
অলিম্পিকে পেশাদার ফুটবলারদের খেলার নিয়ম চালু হওয়ার পর ১৯৯৬ সালে খেলেন রবের্তো কার্লোস আর রোনালদো। লুসিও আর রোনালদিনিয়ো খেলেন ২০০০ সালে। ২০০৮ সালে দেশটিকে প্রথমবারের মতো অলিম্পিক সোনা জেতানোর চেষ্টা করেন মার্সেলো ও চিয়াগো সিলভা।
অলিম্পিক ফুটবলে মূলত কোনো দেশের অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলে। তবে কোচ চাইলে তিন জন বেশি বয়সী খেলোয়াড় দলে নিতে পারেন। ব্রাজিল দলে বেশি বয়সী খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে খেলছেন বার্সেলোনার তারকা ফরোয়ার্ড নেইমার।
২৪ বছর বয়সী নেইমারের সঙ্গে ব্রাজিলের এই মিশনে আছেন তার বার্সেলোনা সতীর্থ রাফিনিয়াও। আছেন পিএসজির মারকুইনিয়োস আর লাৎসিওর ফেলিপে আন্দেরসনের মতো পরিচিত মুখও। ফরোয়ার্ডে নেইমারকে সঙ্গ দেবেন দুই উঠতি তারকা সান্তোসের গাব্রিয়েল বারবোসা ও পালমেইরাসের গাব্রিয়েল জেসুস। দুজনের বয়সই ১৯ বছর করে।
সব মিলিয়ে এবারের অলিম্পিকে ব্রাজিল দলটি ভালোই। তবে ব্রাজিলের সাবেক তারকা ফালকাও মনে করেন, নেইমারদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে প্রত্যাশার চাপকে জয় করা।
“এটাই একমাত্র শিরোপা যা আমরা জিতিনি। তাই এ নিয়ে প্রতিদিন গণমাধ্যমে আলোচনা হয় এবং এটা চাপ তৈরি করে।”
দেশের মাটিতে ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে গিয়েছিল ব্রাজিল। পরের বছর কোপা আমেরিকায় প্যারাগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরে কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ে তারা। আর এ বছর কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরে গ্রুপ পর্বের বাধাই পেরোতে পারেনি দুঙ্গার ব্রাজিল।
এর পরও ব্রাজিল ফেভারিট দলগুলোর একটি হিসেবেই অলিম্পিক শুরু করবে বলে মনে করেন ফালকাও।
“আমরা ফেভারিট দলগুলোর একটি, যেমনটা আমরা সব সময়ই থাকি।”
মিউনিখে ১৯৭২ সালের অলিম্পিকের মতো ১৯৮২ বিশ্বকাপেও ফালকাওয়ের হৃদয় ভেঙেছিল। সেবারের বিশ্বকাপে ফালকাও, জিকো, সক্রেটিস, সেরেসোদের দলটি ছিল ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা দলগুলোর একটি। কিন্তু ইতালির কাছে ৩-২ গোলে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়েছিল তারা।
পেছন ফিরে তাকিয়ে ফালকাও তার ক্যারিয়ারের অসাধারণ মুহূর্তের মধ্যে রাখেন ১৯৭২-এর অলিম্পিকে খেলতে যাওয়ার উপলক্ষকেও।
ব্রাজিলের ক্লাব ইন্তেরনাসিওনালের কোচ রয়টার্সকে বলেন, “এটা ছিল অনন্য এক মুহূর্ত। অলিম্পিক বিশ্বকাপের চেয়ে বড়। কারণ, বিশ্বের সব খেলার সবচেয়ে অসাধারণ অ্যাথলেটদের পাশে থাকবেন আপনি। ফুটবলে শুধু ফুটবলাররাই থাকে।”
ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্তকে সাফল্যের রঙে রাঙাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ফালকাও। তবে ব্রাজিলের কিংবদন্তি এই ফুটবলারের আশা, তার উত্তরসূরিরা ব্রাজিলের একটি অলিম্পিক সোনার পদকের হাহাকার ঘোচাতে পারবে।