লিগ শিরোপা জিততে ‘টিম স্পিরিটে’ আস্থা চট্টগ্রাম আবাহনীর

জেতা হয়েছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের শিরোপা। এ মৌসুমেই ছুঁয়ে দেখা হয়েছে স্বাধীনতা কাপের ট্রফি। কিন্তু চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে এখনও অধরা প্রিমিয়ার লিগের মুকুট। বন্দর নগরীর দলটির অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম আশা করছেন, ‘টিম স্পিরিটে’ সওয়ার হয়ে লিগে এবার প্রত্যাশিত গন্তব্যে পৌঁছাবেই তার দল।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2016, 09:13 AM
Updated : 23 July 2016, 01:52 PM

মামুনুলের এতটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার কারণ অনেক। ঘরোয়া ফুটবলের অনেক তারকাই এবার তার দলে। আছেন তারিক আল জানাবি, লিওনেল সেইন্ট প্রিয়াক্স, ফাব্রিচ নোয়েলের মতো নির্ভরযোগ্য বিদেশি খেলোয়াড়। কদিন আগে দলের হাল ধরে স্লোভাকিয়ার কোচ ইয়োসেপ পাভলিক এনে দিয়েছেন প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপ জয়ের স্বাদ। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের দলটির লিগ শিরোপার হাহাকার ঘোচানোর স্বপ্ন ডানা মেলছে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই।

ফেডারেশন কাপের ‘শিক্ষা’

চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে চট্টগ্রাম আবাহনী সাফল্য-ব্যর্থতার দুই পিঠই দেখেছে। মামুনল ইসলাম, নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, ইয়ামিন মুন্না, সোহেল রানা ও রায়হান হাসান-শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব থেকে এই পাঁচ জন আইনি জটিলতায় বন্দরনগরীর দলটির হয়ে খেলতে পারেননি স্বাধীনতা কাপ। নির্ভরযোগ্যদের ছাড়াই ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে মৌসুমের প্রথম শিরোপা চট্টগ্রামে নিয়ে যায় পাভলিকের শিষ্যরা!

ফেডারেশন কাপে এসে উল্টো রথে দলটি। মামুনুলরা ফিরলেন কিন্তু পারফরম্যান্সের পারদ উচুঁতে ওঠা দূর অস্ত, একটি করে হার ও ড্রয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গেলো তারা! এমন উত্থান-পতন থেকে নেওয়া শিক্ষাটা লিগে কাজে লাগাতে চান মামুনুল।

“দেখুন, লিগ আর টুর্নামেন্ট এক নয়। নকআউট টুর্নামেন্টে যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। ফরাশগঞ্জ একটা উদাহরণ; ২০১০ সালে স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে লিগে তাদের অবনমন হয়েছিল। আমাদের যা শিক্ষা নেওয়ার, তা আমরা ফেডারেশন কাপে পেয়েছি। আমরা ভালো খেললেও ফল আমাদের পক্ষে ছিল না; ফেডারেশন কাপের শিক্ষা লিগে কাজে লাগাতে চাই।”

“আসলে ফল ভালো হলে সবাই ভালো বলে, খারাপ করলে সবাই খারাপ বলে। স্বাধীনতা কাপে আমরা কিন্তু দলের সঙ্গে ছিলাম; মাঠে খেলিনি, মাঠের বাইরে খেলেছি। দল হারার পরই কিন্তু এই কথাগুলো এসেছে। না হারলে এ সমালোচনা হতো না।”

আশঙ্কা আক্রমণভাগ নিয়ে

ফেডারেশন কাপে প্রিয়াক্স-রুবেল মিয়ার জুটি চট্টগ্রাম আবাহনীকে সাফল্যের দুয়ারে নিয়ে গেছে। হাইতির ফরোয়ার্ড প্রিয়াক্সের তিন গোলের দুটি গ্রুপ পর্বে, একটি ঢাকা আবাহনীকে ২-০ গোলে হারানো ফাইনালে। রুবেল জ্বলে উঠেছেন সময়মতো; এই ফরোয়ার্ডের হাত ধরে সেমি-ফাইনাল টাইব্রেকারে নিতে পেরেছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। পরে শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে তারা। ফাইনালেও ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলটিও রুবেলের করা। তবে ফেডারেশন কাপের বৈতরণী পার হতে পারলেও মামুনুল মানছেন আক্রমণভাগ ভাবাচ্ছে তাকে।

“মাঝমাঠ বা রক্ষণ নিয়ে আমার তেমন একটা দুর্ভাবনা নেই। স্ট্রাইকিং নিয়ে একটু দুঃশ্চিন্তা আছে। জাহিদ যতদিন পুরোপুরি ফিট না হবে, ততদিন আমাদের এ জায়গাটায় সমস্যা থাকবে।”

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চার গোল করা জাহিদ হোসেন পিতার অসুস্থায় ছিলেন মাঠের বাইরে। লিগের প্রস্তুতিতে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। অধিনায়কের দুঃশ্চিন্তার প্রসঙ্গ তুলতেই প্রতিশ্রুতি দিলেন, গোল করার দায়িত্ব কাঁধে নিতে প্রস্তুত তিনি।

“চার-পাঁচ দিন প্রস্তুতি নিলাম। ভালো অনুশীলন করছি। লিগ নিয়ে পরিকল্পনা একটাই-শিরোপা জিততে হবে। আমি আমার মতো খেলব; গোল করব।”

টিম স্পিরিটে লক্ষ্য পূরণের আশা

মাঝমাঠ নিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর দুর্ভাবনা না থাকার কারণ তারিক আল জানাবি ও কৌশিক বড়ুয়া। নিখুঁত পাস আর বল নিয়ন্ত্রণের পারদর্শীতায় মরোক্কোর মিডফিল্ডার জানাবি দলটির মাঝমাঠের প্রাণ। গতিময় আর গোছালো ফুটবল খেলে কৌশিকও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছেন। অভিজ্ঞ নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে নাইজেরিয়ার অ্যাডিসন উডোকা থাকায় রক্ষণও বেশ জমাট। গোলপোস্টের নিচে আশরাফুল ইসলাম রানা অধিনায়ককে দিচ্ছেন নির্ভার থাকার সুযোগ।

লিগ শিরোপা স্বপ্ন পূরণে চট্টগ্রাম আবাহনীর পথ আগলে দাঁড়াতে পারে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ও ঢাকা আবাহনী। দলের অবস্থা যতই ভাঙাচোরা হোক, লিগের শিরোপাধারী শেখ জামালও থাকছে ফেভারিটের তালিকায়। মামুনুল তাই প্রতিষ্ঠিত এই পরাশক্তিদের পেছনে ফেলে লক্ষ্যপূরণের দোরগোড়ায় পৌঁছুতে ‘টিম স্পিরিটে’ আস্থা রাখছেন।

“টিম ম্যানেজমেন্ট, স্টাফ সবার কাছ থেকে আমরা সব বিষয়ে পুরো সহায়তা পাচ্ছি। আমাদের আসলে মূল শক্তি টিম স্পিরিট; এটা দিয়ে লিগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই করব আমরা।”

২০১৪-১৫ মৌসুমে লিগে ২০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ১১ দলের মধ্যে নবম হয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। তার আগের মৌসুমে ২৭ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম। এবার লক্ষ্য একেবারে শিরোপা জয়।

“লিগ শিরোপার অনেক দাবিদার আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম আবাহনীও (ঘরোয়া ফুটবলে) এখন একটা পরাশক্তি। একটা দল হিসেবে আমরা এ মুহূর্তে যে অবস্থানে আছি, সেখান থেকে আরও উচুঁতে উঠতে হবে। লিগে অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া।”

‘এখন আমাদের প্রতিদান দেওয়ার পালা’

প্রিমিয়ার লিগ এবারই প্রথম পুরোপুরি ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। মামুনুল চার ভেন্যুতে খেলার মধ্যে ইতিবাচক অনেক দিক দেখছেন। জাতীয় দলের এই মিডফিল্ডার দেশের আরও অনেক ভেন্যুতে লিগের ম্যাচ খেলার স্বপ্ন দেখেন।

“এটা কেবল আমাদের জন্য নয়, সারা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্যই অনুপ্রেরণার। কেননা এবার সেরা সব ক্লাব ঢাকার বাইরে যাবে। যে জেলায় খেলা হবে, সে জেলার মানুষগুলোও অনুপ্রাণিত হবে। সুযোগ পেলে সব জেলাতে লিগের ম্যাচ খেলার ইচ্ছা আছে আমাদের। আমার মনে হয়, এখন আমরা ফুটবলাররা মাঠে ভালো ফুটবল উপহার দিতে পারলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।”

ঘরোয়া ফুটবলে কোনো প্রতিযোগিতার আগে ট্রফি নিয়ে প্রতিপক্ষ অধিনায়কদের সঙ্গে কখনও মঞ্চে আসা হয়নি মামুনুলের। ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান নিয়েও জানালেন উচ্ছ্বাস। প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রতিদান দেওয়ার।

“এটা বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসের সেরা আয়োজন। ১২ অধিনায়কের একসঙ্গে ট্রফি নিয়ে দাঁড়ানো; দল নিয়ে পরিচিতি, এগুলো আসলে অসাধারণ। এখন আমাদের প্রতিদান দেওয়ার পালা।”