তবুও শেখ জামালের চোখ হ্যাটট্রিক শিরোপায়

মামুনুল ইসলামসহ আট ফুটবলার হারানো, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপে ব্যর্থ, বিদেশি নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়দের পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, হুট করে কোচ বদল-সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব এখন খর্বশক্তির। প্রিমিয়ার লিগ দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করায় তাই প্রশ্ন উঠছে-মুকুট ধরে রাখতে পারবে তো দলটি?

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2016, 08:12 PM
Updated : 23 July 2016, 01:52 PM

লিগ শেষের আগে এ প্রশ্নের উত্তর মেলা কঠিন। কেননা, সেরা একাদশ ভেঙে চৌচির, বিদেশিদের দলছুট হওয়া, শেষ মুহূর্তে এসে কোচ শফিকুল ইসলাম মানিককে সরিয়ে জোসেফ আফুসির হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া-গত কয়েক মাসে অনেক ‘কাণ্ডই’ ঘটেছে দলটিতে। তবে এত সব ঘটনার ঘনঘটার মধ্যেও শিরোপা ধরে রাখতে আশাবাদী বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন অধিনায়ক ইয়াসিন খান।

ভাঙাচোরা দল এবং দলছুট ওয়েডসেন আনসেলমে

ঘরোয়ার সেরা আর মানসম্পন্ন বিদেশি ফুটবলারদের হাত ধরে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ডিঙানো শেখ জামালের সুদিনটা আর নেই। মামুনুল ইসলাম, নাসিরউদ্দিন চৌধূরী, ইয়ামিন মুন্না, সোহেল রানা, রায়হান হাসান, জামাল ভূইয়া, আলমগীর কবির রানা ও শহীদুল আলম সোহেল-নির্ভরযোগ্য এই আট ফুটবলার পাড়ি জমিয়েছেন নতুন ঠিকানায়। অনুরোধ করে, চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে, শেষ পর্যন্ত আইন-আদালত করেও তাদের ফিরে পায়নি দলটি।

এদিকে আবার ওয়েডসেন আনসেলমে, ল্যান্ডিং ডারবো ও এমেকা ডারলিংটন আক্রমণভাগে এই তিন বিদেশির মধ্যে ‘গোলমেশিন’ ওয়েডসেন ছুটি নিয়ে দেশে যাওয়ার পর আর ফেরেননি। ক্লাব সংশ্লিষ্টরা আশার কথা শোনালেও গত মৌসুমে  ১৭ গোল করা হাইতির এই ফরোয়ার্ডের আদতে ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। গেল লিগে ১৯ গোল করা এমেকা আর ১৪ গোল করা ল্যান্ডিংয়ের ওপর দলটির নির্ভরতা এবার স্বাভাবিকভাবেই আরও বেশি। নতুন অধিনায়ক ইয়াসিনও মানছেন তা।

“এখন তো আমাদের কিছু করার নাই। ওই আট জনকে পাওয়ার আশা ছিল। কিন্তু পাওয়া গেলো না। এ মুহূর্তে যারা আছে, তাদের নিয়েই খেলতে হবে।”

“ওয়েডসেন বাড়িতে গেছে; ওকে আমরা হারাইনি। কোচ জোসেফ আফুসি বলেছেন, তিনি এসে ওয়েডসেনকে ফেরাবেন। দেখি কি হয়? এমেকা ও ল্যান্ডিংয়ের দিকে এখন আমাদের বেশি করে তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে আমরা যারা আছি, তারাও চেষ্টা করব। একযোগে চেষ্টা করলে আমার বিশ্বাস সবকিছু সম্ভব।”

দুর্ভাবনা মাঝমাঠ নিয়ে

দলবদলের সময় মামুনুলদের হিসেবে রেখে নতুন কাউকে টানেনি শেখ জামাল। পরে আট ফুটবলার হারানোর ধাক্কাও সামলে ওঠা হয়নি তাদের। তবে আক্রমণভাগে এমেকা-ল্যান্ডিং, রক্ষণে কেষ্ট কুমার বোস-মোহাম্মদ লিঙ্কন থাকায় আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে না দলটি। পোস্টের নিচে মাজহারুল ইসলাম হিমেল থাকায় এ জায়গাতেও নেই দুর্ভাবনা। তবে অধিনায়কের সঙ্গে সুর মিলিয়ে দলটির ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুও স্বীকার করেছেন দুর্ভাবনার কেন্দ্র মাঝমাঠ। বিশেষ করে জাহিদ পারভেজের চোট ভাবিয়ে তুলেছে দুজনকেই।

ইয়াসিন বললেন, “আমাদের মিডফিল্ডে ঘাটতি আছে। গত দুইটা ম্যাচে আমাকে মাঝমাঠে খেলতে হয়েছে। প্রথম লেগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ঘাটতি আসলে পূরণ করা সম্ভব হবে না। দ্বিতীয় লেগের আগে হয়ত এই জায়গায় ভালো খেলোয়াড় সংগ্রহ করা হবে। যদি মাঝমাঠে ঘাটতিটুকু থেকেই যায়, তাহলে এটা আমাকেই পূরণ করতে হবে।”

চুন্নুর ভাষায়, “অধিনায়ক ঠিকই বলেছে। আসলে জাহিদ এ মুহূর্তে ফিট থাকলে মিডফিল্ড নিয়ে আমাদের অতটা চিন্তায় পড়তে হতো না। আবার এটাও সত্যি, অনেক কারণে আমরা সেরা দল গড়তে পারিনি। তবে বর্তমান দলটিও একেবারে খারাপ না। যাই হোক না কেন, আমরা অলআউটই খেলব।”

সমীহ দুই আবাহনী আর শেখ রাসেলকে

মুকুট ধরে রাখার পথটা শেখ জামালের জন্য মোটেও মসৃণ হবে না। মৌসুমের প্রথম শিরোপা স্বাধীনতা কাপ জেতা চট্টগ্রাম আবাহনী লিগ শিরোপার বড় দাবিদার। চমক দেখিয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠা আরামবাগকে হারিয়ে ট্রফি নিজেদের করে নেওয়া আবাহনী লিমিটেডও লিগের অন্যতম ফেভারিট। এদিকে ২০১২-১৩ মৌসুমে ট্রেবল জেতা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রও মুকুট ফিরে পেতে মরিয়া থাকবে।

এই তিন প্রতিপক্ষ নিয়ে ইয়াসিন একটু বেশি সতর্ক, “অবশ্যই আমরা ফেভারিট। আমরা গত দুইবারের চ্যাম্পিয়ন। এবার হ্যাটট্রিক শিরোপার জন্যই নামব। তবে দুই আবাহনী ও শেখ রাসেলও ভালো দল গড়েছে।”

চুন্নুর দুঃশ্চিন্তা অবশ্য উঠতি ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দলগুলোকে নিয়েও।

“এবারের লিগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আবাহনী এবং শেখ রাসেল আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।  এছাড়া আরামবাগ এবং আরও কিছু দল আছে, যারা উঠতি খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়েছে, তাদের খেলা দেখে আমার মনে হয়েছে, এই দলগুলো বড় দলগুলোকে খুবই ভোগাবে।”

লক্ষ্য তবু মুকুট ধরে রাখা

এবারই প্রথম প্রিমিয়ার লিগ পুরোপুরি ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। চার ভেন্যুতে হবে খেলা। কোচ জোসেফের অনুপস্থিতিতে সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আশরাফ আলির অধীনে প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০১৪ সালে ভারতের আইএফএ শিল্ডে রানার্সআপ হওয়া শেখ জামাল।

ক্লাব ও দলের ভেতরে-বাইরে যত ভাঙা-গড়ার খেলা চলুক, শেখ জামাল মুকুট ধরে রাখতে প্রত্যয়ী। ২০১০-১১ মৌসুমে প্রথম লিগ শিরোপার স্বাদ পাওয়া দলটি ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ মৌসুমে বাজিমাত করেছে। শক্তি ক্ষয়ে গেলেও লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের পণ তাদের।

২০১১, ২০১৩, ২০১৪-১৫ তে ফেডারেশন কাপ জিতলেও এবার তারা প্রতিযোগিতাটির কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ছিটকে গেছে ‘পুচঁকে’ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের কাছে টাইব্রেকারে হেরে। সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপ থেকেও। টানা দুই আসরের ব্যর্থতা ভুলে ইয়াসিন অবশ্য সাফল্য মোড়ানো অতীত ফেরাতে মরিয়া। তবে সেখানেও ওয়েডসেনকে ফিরে পাওয়ার আকুতি।

“লিগ ট্রফিটা ধরে রাখাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। দুটি ট্রফি হারিয়েছি। যেটা গেছে, সেটা গেছে। তা নিয়ে আর ভাবনা নেই। আমরা হ্যাটট্রিক শিরোপার জন্যই নামব। তবে ওয়েডসেন ফিরলে আমাদের কাজটা সহজ হতো।”

২০১১ সালে ভারতের পোখরা কাপ, ২০১৪ সালে ভুটানের কিংস কাপ জেতা শেখ জামাল ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’ বলেই চুন্নু আরও বেশি আশাবাদী।

“যদি ছেলেরা ঠিকভাবে পারফরম করতে পারে, তাহলে লিগ শিরোপা ধরে রাখা সম্ভব। আসলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। লিগে লম্বা সময় ভালো খেলা দরকার। এর সঙ্গে কিন্তু শেখ জামাল অভ্যস্ত। আশা করি আমরা লিগ শিরোপা ধরে রাখতে পারব।”

কদিন আগে লিগের লোগো ও ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানও হয়েছে চমক জাগানো। নাচ, গান, রঙিন আলোর ছটায় মডেলদের সঙ্গে এগারো অধিনায়কের মতো ইয়াসিনও এসেছিলেন মঞ্চে। এমন নতুন অভিজ্ঞতার পর এখন মাঠের সবুজে নিজেদের মেলে ধরার অপেক্ষায় শেখ জামাল অধিনায়ক।

“এখন আমাদের মাঠে পারফর্ম করতে হবে। আমরা পারফরম করতে না পারলে মাঠে দর্শক আসবে না।অনেক দর্শকের সামনে খেলার সুযোগটা অবশ্যই কাজে লাগাতে চাই আমরা।”