অলিম্পিকে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য সোনিয়ার

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরে ৭টি সোনা জিতে পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছিলেন সোনিয়া আক্তার টুম্পা। এই সাঁতারু এবার রিও দে জেনেইরো অলিম্পিকের পুলে নামবেন। বাস্তবতা মেনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সোনিয়া জানালেন, অলিম্পিকের লক্ষ্যটা নিজের সেরা টাইমিং ছাপিয়ে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান তিনি।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2016, 04:38 PM
Updated : 17 August 2016, 05:51 AM

প্রশ্ন: প্রথমবার অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। নিশ্চয় তর সইছে না রিও দে জেনেইরোর পুলে নামতে?

সোনিয়া আক্তার টুম্পা: খুবই ভালো লাগছে। প্রথমবার তো। আর সবার আশা থাকে অলিম্পিকে খেলার। এতদিন খেলছি; অনুশীলন করছি; অলিম্পিকে খেলার আশা ছিল; সেটা পূরণ হচ্ছে। এ আনন্দ আসলে বলে বোঝানো যাবে না।

ফেডারেশনকে ধন্যবাদ। আমি নৌবাহিনীতে আছি। নৌবাহিনীকে আরও বেশি ধন্যবাদ। আমার মনে হয়, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।

প্রশ্ন: তো পার্ক দে গুনের অধীনে প্রস্তুতি কেমন চলছে? আপনার তো সাগরের মতো থাইল্যান্ডে অনুশীলনে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।

সোনিয়া আক্তার টুম্পা: গত মে মাস থেকে আমরা অনুশীলন করছি। মাঝে ঈদের ছুটিতে গিয়েছিলাম। ছুটি শেষে আবার অনুশীলনে ফিরেছি। প্রস্তুতি ভালোই চলছে। রোজার সময়ও তিন বেলা অনুশীলন করেছি। ছুটি শেষে ফেরার পর আপাতত দুই বেলা অনুশীলন করছি।

আমরা অলিম্পিকের ক্যাম্পেই ছিলাম। রিও অলিম্পিকের জন্য চারজন বৃত্তি পেয়েছিলাম। চার জনের মধ্যে সাগর ভাই আর নাজমা (খাতুন) থাইল্যান্ডে গিয়েছিল। আমরা বাংলাদেশে দুই জন ছিলাম। এই তিন মাস পার্ক দে গুন আমাদের অনুশীলন করাচ্ছে।

প্রশ্ন: থাইল্যান্ডে যাওয়া হলো না বলে কি প্রস্তুতিতে কমতি থেকে গেলো?

সোনিয়া আক্তার টুম্পা:
দেশের বাইরে অনুশীলনে যেতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। আসলে তাদের কিভাবে অনুশীলন করানো হয়েছে, সেটা আমরা দেখিনি, টেকনিক্যাল বিষয়গুলোও জানি না। তবে পার্কও আমাদের যেভাবে টেনিং করাচ্ছেন, সেটাও মন্দ না। আমাদের তো অনেক কিছু নাই। তারপরও কোচ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছে চেয়ে, অনুরোধ করে যতটুকু পারছে, সেগুলো এনে, সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে আমাদের অনুশীলন করাচ্ছে।

প্রশ্ন: থাইল্যান্ড থেকে ফেরার পর সাগর বা নাজমার কাছ থেকে টিপস নিয়েছেন কী?

সোনিয়া আক্তার টুম্পা: সে সুযোগ এখনও হয়নি। সাগর ভাই কেবল এলো, নাজমা কিছুদিন আসছে। ওভাবে আসলে কথা বলার সুযোগ হয়নি। যখন দেখা হবে, তখন বিষয়গুলো জানতে চাইব।

প্রশ্ন: প্রস্তুতির সন্তুষ্টির কথা বলছেন। তাহলে অলিম্পিক নিয়ে কী লক্ষ্য স্থির করলেন?

সোনিয়া আক্তার টুম্পা: অলিম্পিকে ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে অংশ নেব আমি। এই ইভেন্টে নিজের সেরা টাইমিংকে ছাপিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। ঘরোয়াতে এই ইভেন্টে আমার সেরা টাইমিং ৩০.৮৫ সেকেন্ড।

প্রশ্ন: অলিম্পিকে এতটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকবেন? ঘরোয়ার তো আপনি বেশ সফল।

সোনিয়া আক্তার টুম্পা: আসলে এতটুকুতে সন্তুষ্ট থাকা ঠিক না। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরে ১০০, ২০০ বাটারফ্লাই, ২০০ ব্যাকস্ট্রোক ও ২০০ ইনডিভিজ্যুয়াল মেডলি ও তিনটা রিলে থেকে সোনা জিতেছি। আসলে আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করে যাই। যারা বাইরে থাকে, তারা বড়ই হয় অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার জন্য। ওরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিয়ে পড়ে থাকে। ছোট বেলা থেকেই ওরা শুরু করে, কিন্তু আমাদের একজনকে দিয়েই অনেক কিছু করতে হয়। আমরা শুধু অলিম্পিকের জন্য করি না।  ন্যাশনাল, অনান্য গেমও করতে হয়।

প্রশ্ন: অলিম্পিকে সাঁতার থেকে ভালো কিছু পেতে হলে কি দরকার বলে মনে হয় আপনার?

সোনিয়া আক্তার টুম্পা:
আরও উন্নত ট্রেনিং সুবিধা, সম্ভব হলে দেশের বাইরে আরও ভালো কোচের অধীনে অনুশীলন দরকার। যাকে বা যাদেরকে অলিম্পিকে পাঠানো হবে, তাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা। যেমন ধরুন, দুই জন করে ছেলে, মেয়েকে যদি বাইরের দেশে চার বছর আগে অনুশীলনের জন্য পাঠানো হয়, তাহলে হয়ত তারা সরাসরি খেলার সুযোগটা পেতে পারে, যেটা আমরা পারছি না।

প্রশ্ন: ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। অলিম্পিক নিয়ে বাবা-মা, বন্ধুরা কি বলছে?

সোনিয়া আক্তার টুম্পা: বাবা-মা ভীষণ খুশি। আমি ব্রাজিলে যাচ্ছি বলে বন্ধুরাও খুব খুশি। তারা ভালো করা তাগিদ দিচ্ছে প্রতি দিনই।