মেসিদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে আবারও শিরোপা চিলির

ফিরে এল সান্তিয়াগোর সেই ফাইনাল। এক বছর পর আবারও চিলির কাছে টাইব্রেকারে হেরেই শিরোপা খরা কাটানোর স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেল আর্জেন্টিনার। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2016, 03:00 AM
Updated : 27 June 2016, 11:11 AM

নির্ধারিত আর অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতলো চিলি।

অনেকের বিবেচনাতেই সর্বকালের সেরা দুই খেলোয়াড় পেলে আর দিয়েগো মারাদোনা কোপা আমেরিকা জিততে পারেননি। মেসির সুযোগ ছিল তাদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। ব্যর্থতার জন্য এখন নিজেকেই দায়ী করতে হবে বার্সেলোনার এই তারকা ফরোয়ার্ডের। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার প্রথম শটেই যে গোল করতে পারেননি অধিনায়ক। পরে চিলি গোলরক্ষক ক্লাওদিও ব্রাভো ঠেকিয়ে দেন লুকাস বিগলিয়ার শট।

কোপা আমেরিকার শতবর্ষ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত বিশেষ এই টুর্নামেন্টে ফাইনালের আগে ৫ ম্যাচে আর্জেন্টিনা করেছিল ১৮ গোল, চিলি ১৬। তবে নিউ জার্সির ইস্ট রাদারফোর্ডের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালের ফাইনালে জ্বলে উঠতে পারেনি কোনো দলেরই আক্রমণভাগ।

২১তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগটা আসে গারি মেদেলের ভুলে। সতীর্থের পাস তার পা ফসকে গেলে বল পেয়ে যান গনসালো হিগুয়াইন। এগিয়ে আসা গোলরক্ষক ব্রাভোর উপর দিয়ে তার চিপ বাঁ পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়।

তিন মিনিট পর মেসির ফ্রি-কিকে নিকোলাস ওতামেন্দির হেড একটুর জন্য বাইরে দিয়ে যায়।

২৮তম মিনিটে মেসিকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় মার্সেলো দিয়াসকে। প্রথম হলুদ কার্ডটি তিনি দেখেছিলেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ককেই আটকাতে গিয়ে। ব্রাজিলের রেফারির এই সিদ্ধান্তকে বেশি কঠোরই মনে হয়েছে।

৪০তম মিনিটে ডি-বক্সে ডাইভের জন্য মেসিকেও দেখতে হয় হলুদ কার্ড। বিরতির কিছু আগে আর্তুরো ভিদালকে ফাউলের জন্য আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার মার্কোস রোহোকে সরাসরিই লাল কার্ড দেখিয়ে দেন রেফারি। রেফারির এই সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্ক হতে পারে।

৫৬তম মিনিটে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে আরেকটি সুযোগ নষ্ট করা হিগুয়াইনকে একটু পরে তুলে নিয়ে সের্হিও আগুয়েরোকে নামান কোচ জেরার্দো মার্তিনো।

সের্হিও রোমেরোকে প্রথম সেভ করতে হয় ৭৯তম মিনিটে। বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া এদুয়ার্দো ভারগাসের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক। পাঁচ মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে সুযোগ নষ্ট করেন আগুয়েরো।

নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া জ্যঁ বোশেজুর কাটব্যাক থেকে গোল করতে পারেননি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় সানচেস। পাল্টা আক্রমণে মেসি বল নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের নবম মিনিটে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ভারগাসের ডাইভিং হেড ঠেকান রোমেরো। পরের মিনিটে মেসির ফ্রি-কিকে আগুয়েরোর হেডে বল জালে ঢোকার মুহূর্তে আঙুলের ছোঁয়ায় ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে চিলিকে রক্ষা করেন ব্রাভো।

টাইব্রেকার ফিরিয়ে আনে চিলিতে গত আসরের স্মৃতি। সেবার আর্জেন্টিনা হেরেছিল ৪-১ গোলে। মেসি প্রথম শটে গোল করলেও, ব্যর্থ হয়েছিলেন হিগুয়াইন ও এভার বানেগা।

এবার ভিদালের প্রথম শটই রোমেরো ঠেকিয়ে দেওয়ায় মনে হচ্ছিল উল্টোটাই হতে যাচ্ছে। কিন্তু মেসি দেখালেন অমার্জনীয় ব্যর্থতা। বার্সেলোনা সতীর্থ ব্রাভোকে কোনো কষ্ট দেননি, উড়িয়ে মারেন ক্রসবারের উপর দিয়ে!

চিলির নিকোলাস কাস্তিও দ্বিতীয় শটে লক্ষ্যভেদ করেন। হাভিয়ের মাসচেরানোও বাঁ পাশ গিয়ে গোল করে আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরান।   

তৃতীয় শটে আরানগুইস রোমেরোকে নড়তে না দিয়েই বল জালে পাঠান। আগুয়েরোও নিচু শটে ডান কোণ দিয়ে ব্রাভোকে ফাঁকি দেন।

চতুর্থ শটে ঠাণ্ডা মাথায় উপরের বাঁ কোণ দিয়ে বল জালে পাঠান বোশেজু। কিন্তু বিগলিয়ার শট ডানে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো।

ফ্রান্সিসকো সিলভা কোনো ভুল করেননি। বল জালে পাঠিয়ে হতাশায় পোড়ান আর্জেন্টিনাকে।

গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল চিলি। তবে টুর্নামেন্টে দারুণ খেলে ফাইনালে উঠে প্রতিশোধ নিল তারা।

২০১৪ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের পর গত বছরের কোপা আমেরিকার ফাইনালে টাইব্রেকারে হার। টানা তৃতীয় ফাইনালেও ফল ওই একই জেরার্দো মার্তিনোর দলের জন্য। সেই ১৯৯৩ সালে এই কোপা আমেরিকাতেই শেষবার বড় কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা। এর পর থেকে কেবল অপেক্ষাতেই আছে আর্জেন্টিনা; অপেক্ষায় বার্সেলোনার হয়ে ২৮টি শিরোপা জেতা পাঁচ বারের বর্ষসেরা খেলোয়াড় মেসি।