চলে গেলেন সর্বকালের সেরা মুহাম্মাদ আলি

মারা গেছেন কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মাদ আলি। ‘সর্বকালের সেরা’ বলে বিবেচিত এই বক্সার অ্যারিজোনার ফিনিক্সের একটি হাসপাতালে শুক্রবার ৭৪ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2016, 04:42 AM
Updated : 5 June 2016, 03:28 AM

পারিবারিক মুখপাত্র জানান, শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আলি। পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতেই বিদায় নেন তিনি। জন্মস্থান কেনটাকির লুয়াভিলে আলির শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হবে।

১৯৮১ সালে বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার তিন বছর পর থেকেই পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন তিন বারের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন আলি। কয়েক বছর ধরে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আলি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মূত্রঘটিত সংক্রমণের জন্য হাসপাতালে আনা হয় তাকে।

গত এপ্রিলে মুহাম্মাদ আলি পারকিনসন সেন্টারের সহায়তার জন্য অ্যারিজোনায় আয়োজন করা ‘সেলেব্রিটি ফাইট নাইট-এ সবশেষ জনসমক্ষে এসেছিলেন আলি।

শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ

১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি কেনটাকির লুয়াভিলে ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে নামে জন্ম নেওয়া আলি বিখ্যাত হয়ে উঠেন ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট-হেভিওয়েটে সোনা জিতে।

‘দ্য গ্রেটেস্ট’ ডাকনাম পাওয়া আলি ১৯৬৪ সালে সানি লিস্টনকে হারিয়ে প্রথম বিশ্ব খেতাব জেতেন। পরে তিনি প্রথম বক্সার হিসেবে তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপা জেতেন।

‘আমিই সেরা’, দাবি করেছিলেন আলি। তার এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত করা মানুষের সংখ্যা কমই। আলি ছড়া কাটতেন, ‘আমি প্রজাপতির মতো উড়ি আর মৌমাছির মতো হুল ফোটাই’। বক্সিং রিংয়ে‌ও তা করে দেখিয়েছেন তিনি।

১৯৮১ সালে পেশাদার বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার আগে ৬১টি পেশাদার লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতে জেতেন আলি। এর মধ্যে ৩৭টি লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে নকআউট করেছেন তিনি। নিজে একবারও নকডআউট হননি।

‘শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ’ হিসেবে খেতাব পাওয়া আলি শুধু বক্সিংয়ের রিংয়েই দুর্দান্ত ছিলেন না, ম্যাচের আগে-পরে কথাবার্তাতেও ছিলেন পটু। তিনি ছিলেন একজন মানবাধিকার কর্মী যিনি খেলা ও জাতীয়তার সীমা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

রোম অলিম্পিকের পর আলি পেশাদার জগতে পা রাখেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭, ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ ও ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সালের শুরু পর্যন্ত তিনি বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।

লিস্টনের সঙ্গে প্রথম লড়াইয়ের আগে থেকেই তখনও ক্যাসিয়াস ক্লে নামেই পরিচিত আলি নেশন অব ইসলাম নামে একটি সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, যাদের উদ্দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকানদের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন করা। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নাম বদলিয়ে রাখেন মুহাম্মাদ আলি।

১৯৬৭ সালে ভিয়েতনামে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ নেওয়ার বিরোধিতা করে দেশে সমালোচনার মুখে পড়েন আলি। তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করায় তার বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব ও বক্সিং লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হয়। তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডও দিয়েছিল আদালত তবে আপিলে তা নাকচ হয়ে যায়।

প্রায় চার বছর আলি লড়াইয়ে অংশ নিতে পারেননি। কিন্তু বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রেও ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। অবশেষে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর আলি রিংয়ে ফিরে বক্সিং ইতিহাসের তিনটি বিখ্যাত লড়াইয়ে অংশ হন।

নিউ ইয়র্কে ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে পরিচিত ম্যাচে পেশাদার ক্যারিয়ারে আলি প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পান জো ফ্রেইজারের কাছে।

১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর জায়ারের (এখন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো) কিনশাসায় ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ নামে পরিচিত লড়াইয়ে জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নের খেতাব পুনরুদ্ধার করেন আলি। আলির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াই হিসেবে বিবেচিত ম্যাচটি বিশ্বের প্রায় একশটি দেশে দেখানো হয়।

১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় ফ্রেইজারকে হারিয়ে প্রতিশোধও নেন আলি। চতুদর্শ রাউন্ডে ফ্রেইজার সরে দাঁড়ালে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় আলিকে। তার ভাষায় এই ম্যাচে রিংয়ে মৃত্যুর সবচেয়ে কাছাকাছি এসে পড়েছিলেন তিনি।

১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাস ভেগাসে ১২ বছরের ছোটো লিয়ন স্পিংক্সের কাছে পয়েন্টে হেরে খেতাব হারান আলি।

আট মাস পর নিউ অরলিন্সে ফিরতি ম্যাচে প্রতিশোধ নিয়ে ৩৬ বছর বয়সে তৃতীয় বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব জেতেন আলি। তখনই হয়তো পুরোপুরি অবসর নেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু থামতে চাননি আলি।

১৯৮০ সালে লাস ভেগাসে ল্যারি হোমসের কাছে হেরে খেতাব হারান আলি। এর পর ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে জ্যামাইকার ট্রেভর বেরবিকের কাছে একতরফা হারে ক্যারিয়ার শেষ হয় আলির। তারপরই দেখা দিতে শুরু করে পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ।