ঘরোয়া ফুটবলে কিছু না পাওয়ার আক্ষেপ ভুলে গত শনিবার ইউরোপ সেরার ট্রফি জেতে রিয়াল। মিলানের মাঠ সান সিরোতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর অতিরিক্ত সময়ে গোল পায়নি কোনো দল। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে আতলেতিকোকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে একাদশ বারের মতো ইউরোপ সেরার শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল।
ফ্রান্সের সাবেক তারকা ফুটবলার জিদানের জন্য এটা স্বপ্ন পূরণের একটি অধ্যায়, যে স্বপ্ন তিনি স্পেনের সফলতম ক্লাবটির দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই দেখেছিলেন।
“হ্যাঁ, আমি এর স্বপ্ন দেখেছি। সভাপতি আমাকে যখন দারুণ এই ক্লাবের কোচ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন, আমি জানতাম, আমরা বড় কিছু অর্জন করতে পারি।”
জিদান-সঞ্জীবনীতে জেগে ওঠা রিয়াল সেই থেকে ২৭ ম্যাচ খেলে ২২টিতেই জয় পায়, হারে মাত্র দুটি ম্যাচ। ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে লা লিগার শিরোপা লড়াইয়েও ফিরেছিল তারা। সবশেষ ১২ ম্যাচ জিতে শিরোপা লড়াই শেষ রাউন্ড পর্যন্ত নিয়ে যায় জিদানের দল।
রিয়ালকে শেষ পর্যন্ত লা লিগার শিরোপা জেতাতে না পারলেও মৌসুমের সবচেয়ে বড় ট্রফিটা এনে দিয়ে নিজের নামটি ইতিহাসে লিখিয়ে নিয়েছেন জিদান। কোচ হিসেবে ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই জেতা প্রথম ফরাসি কোচ তিনি। আর তার আগে কোচ ও খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোপ সেরার মুকুট জিতেছে মাত্র ছয় জন।
“এটা অনেক বড়! আনচেলত্তি আমাকে বলেছিলেন, তিনি আশা করেন, আমি প্রধান কোচ হিসেবে শিরোপা জিততে পারব। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার যদি কোচ হিসেবে জেতার সুযোগ হয়, তুমি দেখবে খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনাল জেতার মতো অনুভূতি এর তুলনায় কিছুই না’। তিনি ঠিক ছিলেন-এটা প্রচণ্ড আনন্দের।”
ইন্টার মিলানের হয়ে ১৯৬৩ ও ১৯৬৯ সালে ইউরোপ সেরা হওয়া জিওভান্নি ত্রাপাত্তোনি ১৯৮৫ সালে ইউভেন্তুসের শিষ্যদের শিরোপা জেতান।
১৯৯২ সালে বার্সেলোনাকে শিরোপা জিতিয়ে এই তালিকায় নিজের নাম লেখান ইয়োহান ক্রুইফ। খেলোয়াড়ি জীবনে ডাচ এই কিংবদন্তি ইউরোপ সেরার মুকুট জেতেন আয়াক্সের হয়ে ১৯৭১ ও ১৯৭৩ সালে।
এসি মিলানের হয়ে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে দুটি করে ইউরোপ সেরার শিরোপা জেতেন কার্লো আনচেলত্তি। পরে রিয়ালকেও জেতান দশম শিরোপা।
এসি মিলান (১৯৮৯ ও ১৯৯০) আর আয়াক্সের (১৯৯৫) হয়ে শিরোপা জেতা ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড কোচ হিসেবে বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতান ২০০৬ সালে।
১৯৯২ শিরোপাজয়ী বার্সেলোনার মিডফিল্ডার পেপ গুয়ার্দিওলা ২০০৯ সালে কোচ হিসেবে কাতালান ক্লাবটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতান।
“আমি খেলোয়াড়, সহকারী (কোচ) এবং এখন প্রধান কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলাম-আমি কী বলব? লম্বা সময়ের জন্য দারুণ এই ক্লাবের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।”
রিয়ালকে কিভাবে গুছিয়ে এনেছেন সেই রহস্যও জানান জিদান।
“আমি যেটা এনেছি তা হলো আমার ইতিবাচক মনোভাব। আমাদের মান আছে, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ; এবং আমরা সবাই কাজ করেছি।”
“রক্ষণে চলে যাওয়াটা কৌশল নয়। না, কিন্তু মাঠে এরকম কখনও কখনও হয়। আমরা গোল করেছি এবং এর পর কখনও কখনও আপনাকে রক্ষণে যেতে হবে। এটাই ফুটবল। আমি কিছু বিশ্লেষণ করতে চাই না, শুধু যা অর্জন করেছি তা উপভোগ করতে চাই।”
দারুণ এই অর্জনের কৃতিত্ব জিদান ভাগ করে দেন তার শিষ্যদের।
“আপনার যখন এই মান আর প্রতিভার খেলোয়াড় থাকবে, তখন আপনি আমরা যেটা পেয়েছি এমন বড় কিছু অর্জন করতে পারবেন। আপনি যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো বড় কিছু জিতবেন সেটা খেলোয়াড় আর টেকনিক্যাল স্টাফদের জন্য অনেক কিছু। এক সঙ্গে আমরা যা কিছু অর্জন করেছি এর জন্য আমি খুব খুশি। এটা আদৌ সহজ নয়।”